লতিরাজ কচুই ভাগ্য বদলাচ্ছে জয়পুরহাটের কৃষকের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৩৭ পিএম, ৭ জুন,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৩১ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
জয়পুরহাটের লতিরাজ কচুই কৃষকদের ভাগ্য বদলাচ্ছে। বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে কৃষকের। বছরের প্রায় দশ মাসই উৎপাদন হওয়ায় অন্য ফসলের তুলনায় কৃষকদের আগ্রহ বেশি লতিরাজ কচু চাষে। ফলে জেলায় দিন দিন বাড়ছে লতিরাজ কচুর চাষ। এখানকার উৎপাদিত হাজার হাজার মেট্রিক টন লতিরাজ কচু রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ সহ বিশ্বের ২৫টি দেশে।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বর মাস থেকে জানুয়ারী এবং এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত মৌসুমে লতিরাজ কচু চাষ হয়। এটি দুই ভাবে রোপন করা যায়। একটি চারার মাধ্যমে অপরটি কান্ডের মাধ্যমে। কান্ড রোপনের এক মাস পর এবং চারা রোপন করার আড়াই থেকে তিন মাস পর লতিরাজ কচু উৎপাদন শুরু হয়। একবিঘা জমিতে লতিরাজ চাষ করতে সবকিছু মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি মৌসুমে বিঘায় ৬০-৭০মন কচুর লতি উৎপাদন হয় । লতি ছাড়াও কান্ড উৎপাদন হয় ২৫০থেকে ২৬০মন। বাজারে প্রতি মন লতি বিক্রি হয় ৬৮০ থেকে ৭০০’শ টাকা। কান্ড বিক্রি হয় ৩৫-৪০ টাকা মণ দরে। এতে দেখা যায় একবিঘা জমিতে লতি ও কান্ড মিলে বিক্রি হয় প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা। খরচ বাদে চাষীদের লাভ টিকে ৩৫ -৪০ হাজার টাকা।
জানা যায়, ৩০ বছর আগে সখের বসে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার পাটাবুকা গ্রামের ভুমিহীন এক কৃষক লুৎফর রহমান ও আমির আলি জেলায় প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে লতিরাজ কচু চাষ শুরু করেন। অল্প সময়ে এতে উৎপাদন ও লাভ ভাল হওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অন্য কৃষকদের মাঝে। প্রায় সারা বছরই চাষ হয়। স্বাদে, পুষ্টিতে এবং উৎপাদনে সেরা হওয়ায় খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে স্থান পায় জেলা ব্রান্ডিং। লুৎফর আর আলির উদ্ভাবিত কচুর লতি এ অঞ্চলের অনেক কৃষকের দারিদ্রতা জয় করেছে। কচুর লতি স্বাস্থ্যসম্মত, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হওয়ায় জেলায় বর্তমানে এটি জনপ্রিয় সবজির তালিকায় স্থান পেয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন লতি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে লাভ বেশি পাওয়ায় দিন দিন এর চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পাঁচবিবি উপজেলার বটতলী বাজারের লতি ব্যবসায়ী শাহজাহান দেওয়ান বলেন গত ২৩ বছর ধরে আমরা প্রায় ৩০- ৪০ জন ব্যবসায়ী লতি কেনাবেচা করি। প্রতিদিন ট্রাকে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে পাঠায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই বাজারের স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা হয়নি। তারা বলেন, এই বাজার থেকে কচুর লতি মধ্যপ্রাচ্যে, কুয়েত, সৌদিআরব সহ ইউরোপের ২৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ গুলোর বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া জাত কাজে প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করে। এতে এলাকার অনেক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে। কিন্তু সমস্যা একটাই এখানে বাজারের স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা করতে কেউ সহযোগীতা করছেন না।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স,ম মেফতাহুল বাড়ি বলেন চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হয়েছে। যা থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন লতি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। লাভ বেশি পাওয়ায় দিন দিন এর চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কচুর লতিতে প্রচুর আয়রন ও ক্যালসিয়াম অন্যান্য ভিটামিন রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হাড় শক্ত করে ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করে। এতে আঁশের পরিমাণ বেশি থাকায় হজমে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে, ডায়াবেটিস রোগীসহসুস্থ্য এবং অসুস্থ্য সব মানুষের শরীরের জন্যই সবজি হিসেবে এটি খুব উপকারি।