একটা বেডের জন্য কত ফোন, কত লবিং !
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০৮ এএম, ২৯ মার্চ,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৪৫ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
করোনা আক্রান্ত ৬৫ বছরের হারেস আলী। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপও আছে। অবস্থা খারাপ হতে শুরু করলে পরিবার হাসপাতালে ভর্তি করাতে নিয়ে যায়। কিন্তু ২৫ মার্চ রাত ১০টা থেকে দুইটা পর্যন্ত ৯টি হাসপাতাল খুঁজেও পাওয়া যায়নি একটি বেড। এই পরিবারের এক আত্মীয় গতকাল রাতে বলেন, স্কয়ার, ইমপালস, জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল, ইবনে সিনা, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী, কাকরাইলের ইসলামি ব্যাংক ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে খুঁজেছি রাতভর। ভর্তি করাতে পারিনি আমাদের রোগী। পেশায় ফিজিও থেরাপিস্ট এই ব্যক্তি বলেন, শুনছিলাম পরিস্থিতি খারাপ, কিন্তু এতোটা খারাপ তা নিজের বেলায় না ঘটলে বুঝতাম না। পরিস্থিতি ভয়ানক, খুব ভয়ানক!
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতের সঙ্গেই যুক্ত রয়েছি। ভেবেছিলাম একটা বেড অন্তত ম্যানেজ করতে পারবো। পারলাম না। অন্যদের কী ভোগান্তি হচ্ছে সেটা ভাবতেও পারছি না। সিলেটের একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল সিলেট শামসুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এখানকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, এক বছর হলো এই হাসপাতালে কাজ করছি। এত ভয়ংকর আর হৃদয়বিদারক ডিউটি আগে করিনি। হাসপাতালের আইসিইউতে ১১ জন রোগী ভর্তি।
তিনি বলেন, একটা বেডের জন্য কত ফোন, কত লবিং বলে শেষ করা যাবে না। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত নয় জনকে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার (সার্জারি) ডা. রাজীব দে সরকার বলেন, সরকারি-বেসরকারি কোভিড হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না। চাইলেও রোগী ভর্তি করানো যাচ্ছে না। আমি করোনাতে আক্রান্ত হলেও ভর্তি হতে পারবো না।
রাজীব দে সরকার আরও বলেন, আমাদের হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে একটা বেডও খালি নেই। রেফারেন্স নিয়ে এলেও বেড নেই। আমি ডাক্তার। কোভিড ফ্রন্টলাইনার। আমার জন্যও কিন্তু বেড নেই! চিকিৎসক ডা. মো. আশরাফুল হক তার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, সবসময় চেষ্টা করি মানুষকে সহযোগিতা করতে। কিন্তু এবার যা হয়েছে সেটা আমার চিকিৎসক জীবনের ১৫ বছরে ঘটেনি। পরিচিত এক করোনারোগীর জন্য একটা বেড জোগাড় করতে ঢাকার ছয় থেকে সাতটা হাসপাতালে চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (২৫ মার্চ সকাল ৮টা থেকে ২৬ মার্চ সকাল ৮টা) করোনাতে নতুন শনাক্ত তিন হাজার ৭৩৭ জন। যা গত ৯ মাসে সর্বোচ্চ। ২৪ মার্চ শনাক্ত হয় তিন হাজার ৫৬৭। তার আগের দিন তিন হাজার ৫৫৪ জন। এর আগে গত বছরের ২ জুলাই সর্বোচ্চ চার হাজার ১৯ জন শনাক্ত হয়েছিল একদিনে। এ নিয়ে মোট ৫ লাখ ৮৮ হাজার ১৩২ জন শনাক্ত হলো। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় শনাক্তের দিক থেকে ৩৪তম স্থানে বাংলাদেশ। মৃতের সংখ্যায় ৪১তম। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিতে প্রতিরোধের দিকে সেভাবে নজরই দেয়া হচ্ছে না। আর কদিন পর পরিস্থিতি সামাল দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে যাবার আগে লাগাম টানার ব্যবস্থা করা দরকার। নয়তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সবাইকে এখন যেভাবে হোক বাধ্য করা দরকার। নয়তো হাসপাতাল বাড়িয়েও বেড দেয়া যাবে না।