১০০ শয্যা সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স বিকল
সৈয়দপুরে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চড়া ভাড়া, ভোগান্তিতে রোগীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০২ পিএম, ৪ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ১১:১৮ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
সৈয়দপুরে সরকারি ১০০ শয্যা হাসপাতালে রোগী পরিবহনে নৈরাজ্য চলছে। হাসপাতালে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের নামে চলছে রমরমা ব্যবসা। স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কব্জায় চলছে এ সার্ভিস। সার্ভিসে ভাড়ার নামে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। অভিযোগ রয়েছে সরকারি অচল অ্যাম্বুলেন্স নানা অজুহাতে সচল করা হচ্ছে না। ফলে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বিকল থাকায় এর সুবিধা নিচ্ছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘ ৭ মাস যাবত অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এটি মেরামতের জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্দের জটিলতায় আটকে আছে। ফলে অ্যাম্বুলেন্স চালককে বসিয়ে রেখে বেতন গুণতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। অভিযোগ রয়েছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হাসপাতালের অসাধু কিছু কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত রয়েছেন। এতে করে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স মেরামতে তাদের আগ্রহ নেই। ফলে মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও সরকারি অ্যাম্বুলেন্স মেরামত করা হচ্ছে না। সরকারি অর্থ বরাদ্দসহ নানা জটিলতার অজুহাত দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রোগীর ভুক্তভোগী লোকজনের। আর এর পুরো সুযোগ গ্রহণ করছে ১১ জন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ী। এতে করে হাসপাতাল চত্বরে গড়ে উঠেছে অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড। এ অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের নামে চড়া ভাড়া গুণতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। ফলে জিম্মি হয়ে পড়েছে হাসপাতালের জরুরী সেবা গ্রহণকারী রোগীরা।
জানা যায়, ভৌগলিক কারণে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালটিতে সৈয়দপুর উপজেলা ছাড়াও পাশের উপজেলা চিরিরবন্দর, পার্বতীপুরসহ আশেপাশের এলাকাগুলো থেকে বহু রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। তাই এ হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের চাহিদা ব্যাপক। এ হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে দুটি। এর মধ্যে একটি ১৮ বছর ধরে অচল। অন্যটি ২০১৬ সালে দেওয়ার পরের বছরই অচল হয়ে যায়। অন্য আর একটি সচল করা হলেও কয়েক মাস যেতে না যেতে বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সংকটের সুযোগে হাসপাতালকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্য। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্য সিন্ডিকেট মূলহোতা দুই ব্যক্তি এরাই নিয়ন্ত্রণ করছে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট বাণিজ্য। সুযোগ পেলে রোগী ও মৃত ব্যক্তির স্বজনদের রীতিমতো জিম্মি করেন এসব অ্যাম্বুলেন্সের চালকরা। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালকদের সঙ্গে হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় ও নার্সদের একধরনের যোগাযোগ রয়েছে। তারা রোগীদের প্রায় সময়ই সরকারি অ্যাম্বুলেন্স নিতে নিরুৎসাহিত করেন। এদিকে ভুক্তভোগীরা বলেছেন, চালকরা ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন। দর দামের কোনো সুযোগ নেই। তারা যা বলবেন সেই ভাড়াতেই যেতে হবে। ভুক্তভোগী আনারুল ইসলাম (৪২) নামের এক রোগীর স্বজন জানান, এখান থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে এক চালক ভাড়া দাবি করে ৩ হাজার ২শ টাকা। পরে ওই ভাড়ায় যেতে না চাইলে, অপর এক চালক তাকে ২ হাজার ২শ টাকায় নিয়ে যেতে রাজি হয়। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারী হিসেবে নির্ধারিত অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ৭০০ টাকা। তবে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন চালক আইনুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় রোগীর প্রয়োজনেই সেবা দিয়ে আসছেন তারা।
জানতে চাইলে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. নবিউর রহমান বলেন, হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। সংরক্ষিত আসনের সাংসদ রাবেয়া আলিম এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একটি ডিও লেটারও দিয়েছেন। আশা করছি এ হাসপাতালে চলমান অ্যাম্বুলেন্স সংকট দূর হবে।