দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান শুরু, উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০৫ এএম, ৮ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:০৭ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
দেশব্যাপী করোনার গণটিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই দেশে বিভিন্ন এলাকায় টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে নারী ও পুরুষদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা নিতে দেখা গেছে। ময়মিনসিংহ প্রতিনিধি জানান, জেলার সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম বলেছেন- সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে, ১০ পৌরসভার ৯০টি ওয়ার্ডে এবং ১৪৬টি ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটিতে একটি করে মোট ২৬৯টি কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রথম ডোজ যে কেন্দ্রে দিয়েছেন টিকা গ্রহিতাদের ওই নির্ধারিত কেন্দ্রেই দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে হচ্ছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় মডার্না, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চীনের সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছে। টিকা দেয়ার কার্যক্রম যথাযথভাবে হচ্ছে কিনা তা দেখভালের জন্য বেশ কিছু টিম মাঠে কাজ করছে জানান তিনি।
রংপুর প্রতিনিধি জানান, বিভাগের ৮ জেলায় দ্বিতীয় ডোজের টিকা হিসেবে সিনোফার্মের চার লাখ ৪৬ হাজার ২৫২ ডোজ দেয়া হচ্ছে। রংপুর বিভাগের স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. জাকিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরও জানান, যারা প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন শুধু তাদেরকেই দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কেন্দ্রে তিনটি বুথের মাধ্যমে নারী ও পুরুষদের টিকা দেয়ার কাজ চলছে। আগামী ৫ দিন এই টিকা কার্যক্রম চলবে।
তিনি আরও জানান, ৮ জেলার দুই হাজার ৪৪২টি কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হচ্ছে। গ্রহীতারা জানান, টিকা নেয়ার পর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি।
সিলেট প্রতিনিধি জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সিলেটে গণটিকার দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম শুরু হয়। টিকা নিতে বিভিন্ন কেন্দ্রে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। জানা যায়, গত ৭ আগস্ট থেকে ৯ আগস্ট গণটিকার আওতায় সিলেট বিভাগের দুই লাখ ৩৫ হাজার ১১৮ জন টিকা নেন। এর মধ্যে সিলেট জেলার ১৩ উপজেলায় ২২২টি বুথে ৫৮ হাজার ৬৮৮ জনকে দেয়া হয়েছিল প্রথম ডোজ। এছাড়া সিলেট নগরীতে গত ৭ আগস্ট গণটিকার প্রথম ডোজ নেন ২২ হাজার ৭৫৩ জন। দ্বিতীয় দিন ২৪ হাজার ২৯৪ জন এবং তৃতীয় দিন ১৯ হাজার ৩৯৯ জন টিকা নেন। সব মিলিয়ে তিন দিনে গণটিকা নিয়েছিলেন ৬৬ হাজার ৪৪৬ জন। তাদেরকেই দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হচ্ছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, প্রথমবার নগরীর যেসব কেন্দ্রে গণটিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল, সেসব কেন্দ্রেই দ্বিতীয়বারও টিকা দেয়া হচ্ছে। আগেরবার তিন দিনের মধ্যে প্রথম দিন যে ব্যক্তি যে কেন্দ্রে টিকা নিয়েছিলেন, এবারও সেই কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে দ্বিতীয় ডোজ নেবেন।
তিনি জানান, গতকাল মঙ্গলবার থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান চলবে। সিটি করপোরেশন এলাকায় টিকা দেয়া হবে তিন দিনে।
রাজশাহী প্রতিনিধি জানান, সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ব্যবস্থাপনায় মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মোট ৮৪টি কেন্দ্রে গতকাল মঙ্গলবার গণটিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে। ইতিপূর্বে যারা ওয়ার্ড পর্যায়ে মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদেরকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হচ্ছে। রাসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুসারে ৭ ও ৮ আগস্ট যে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছিল, তারই দ্বিতীয় ডোজ যথাক্রমে গতকাল ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর দেয়া হবে। ১৪ আগস্ট তারিখের দ্বিতীয় ডোজ আগামী ১১ সেপ্টেম্বর এবং গত ১৬ আগস্ট তারিখের দ্বিতীয় ডোজ আগামী ১২ সেপ্টেম্বর তারিখে ওয়ার্ড পর্যায়ে দেয়া হবে। শুধুমাত্র টিকাদান রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও এসএমএস প্রাপ্তি সাপেক্ষে যে যে কেন্দ্রে প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করেছিলেন ওই একই কেন্দ্রে তিনি মডার্না দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন। ৭, ৮, ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর টিটিসি, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের বদলে রাজশাহী প্যারামেডিক্যাল কেন্দ্রে, পুলিশ হাসপাতাল ও সিএমএইচে যথারীতি টিকাদান কর্মসূচি চালু থাকছে।
খুলনা প্রতিনিধি জানান, ২৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের টিকা প্রদানের লক্ষ্যে খুলনায় গণটিকার ডোজ দেয়ার কার্যক্রম গতকাল মঙ্গলবার শুরু হয়েছে। জেলা ও মহানগরীতে ৩০৭টি বুথে টিকা দেয়া হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড় ছিল। কার্যক্রমে নির্দিষ্ট টিকা গ্রহীতা থাকলেও তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব পালন বা স্বাস্থ্যবিধি মানার নমুনা দেখা যায়নি। নগরীর ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২৫, ২৬ ও ২৭ নং ওয়ার্ডসহ এলাকার বিভিন্ন এলাকার টিকাকেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে কেন্দ্রগুলোতে টিকা দেয়া শুরু হয়। তবে সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় টিকা গ্রহীতাদের ভোগান্তি বাড়ে। ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাফিজুর রহমান মনি বলেন, শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে গণটিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে। বয়স্ক এবং গর্ভবতী নারীদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
বরিশাল প্রতিনিধি জানান, জেলা ও মহানগরীর ১৪১টি কেন্দ্রে গণটিকার দ্বিতীয় ডোজর কার্যক্রম চলছে। উপজেলা পর্যায়ে দেয়া হচ্ছে চীনের সিনোফার্মের ভেরসেল টিকা এবং সিটি এলাকায় মডার্নার দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হচ্ছে। টিকা গ্রহীতারা বলছেন, করোনা থেকে সুরক্ষায় নিজেদের ইচ্ছায় টিকা দিতে এসেছেন তারা। কেউ আগে এসএমএস পেয়ে টিকা দিতে এসেছেন। কেন্দ্রগুলোতে ভালো ব্যবস্থা থাকায় কোনও হয়রানি কিংবা ভোগান্তি ছাড়াই টিকা দিতে পারছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামেও সকাল থেকে শুরু হয়েছে গণটিকাদান কর্মসূচি। কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই এদিন টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন টিকা গ্রহীতারা। চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ড ও জেলার ১৪টি উপজেলায় একযোগে দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান শুরু হয় বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি। গত ৭ আগস্ট যারা প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন গতকাল মঙ্গলবার শুধু তাদেরকেই দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ক্যাম্পেইনের আওতায় উপজেলা এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হচ্ছে। যাদের ৭ সেপ্টেম্বর ও ৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণের তারিখ ছিল, শুধু তাদেরকেই টিকা দেয়া হচ্ছে। ক্যাম্পেইনের আওতায় আগামী দুইদিনও টিকা দেয়া হবে। সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিক আক্তার চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পেইনের আওতায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডের ১২৩ টিকাকেন্দ্রে টিকা দেয়া হচ্ছে। ব্যাপক প্রচারণার কারণে এবার নতুন টিকা প্রত্যাশীদের ভিড় নেই। যারা প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন তারাই কেবল টিকা কার্ড দেখিয়ে টিকা নিচ্ছেন। প্রথম দফায় ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইনের আওতায় চট্টগ্রামে এক লাখ ৫৫ হাজার ৮০৮ জনকে করোনাপ্রতিরোধী টিকা দেয়া হয়।