ঠাঁই নেই হাসপাতালে : দুয়ারে দুয়ারে করোনা রোগী
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৪৬ এএম, ১৩ আগস্ট,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৫১ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২৪
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে নতুন রেকর্ড। শয্যা সংকটে রোগী ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে হাসপাতাল। ফলে আইসিইউ ও সাধারণ শয্যার জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। ঈদের পর থেকেই হাসপাতালগুলোতে সাধারণ শয্যা ও আইসিইউ সংকট দেখা দেয়। গত তিন দিনে তা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে প্রতিদিন ঢাকার বাইরের দুই শতাধিক রোগী রাজধানীতে আসছেন আইসিইউ-এর জন্য। সাধারণ শয্যার জন্য রোগী আসার সংখ্যা এর কয়েকগুণ বেশি। রোগীদের আইসিইউ-এর জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। প্রতিদিন মাত্র দুই একটা বেড খালি হচ্ছে। কোনও রোগী সুস্থ হলে কিংবা মারা গেলেই কেবল শয্যা খালি হয়। এমতাবস্থায় হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে রোগী নিয়ে ঘুরছেন স্বজনরা। করোনার থাবা থেকে বাঁচতে ঠাঁই মিলছে না হাসপাতালে।
ধরা যাক, দৈনিক ৫ হাজার রোগী শনাক্ত হলে তার মধ্যে ১ শতাংশ রোগীর অবস্থা গুরুতর হবে, তাদের জন্য আইসিইউ বা এইচডিইউ সুবিধা লাগবে- এটা আন্তর্জাতিকভাবে ধরে নেয়া হয়। বিভিন্ন হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে অসংখ্য রোগীকে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। শেষে ভর্তি হতে না পেরে বাড়ি ফিরে গেছেন অনেক রোগী। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের সামনে ‘সিট খালি নেই’ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি টানাতে বাধ্য হয়েছে।
ঢাকার ১৩টি সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ১১টি হাসপাতালে কোনো আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই। কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ১৩৯টি সাধারণ শয্যার মধ্যে তিনটি ফাঁকা ছিল। আইসিইউয়ের ২৬টি শয্যাতেই রোগী ভর্তি। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ২৭৫টি, সেখানে শয্যার তুলনায় অতিরিক্ত ৬৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন। ১০টি আইসিইউতেই রোগী ভর্তি ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০টি আইসিইউয়ের সবগুলোতেই রোগী ভর্তি। ৭০৫টি সাধারণ শয্যার বিপরীতে ৭১১ জন রোগী ভর্তি ছিল। হাসপাতালে শয্যা না থাকায় ফিরে যাচ্ছে রোগীরা।
ঈদের ছুটি শেষ হতেই প্রতিদিনই রেকর্ড ছাড়াচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এরই মধ্যে বেডের অতিরিক্ত রোগী ভর্তি করেও চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। এতদিন আইসিইউ বেডের সংকট তীব্র ছিল। এখন সাধারণ বেড সংকটের কারণে রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিচ্ছে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো বড় বড় হাসপাতালগুলো। রোগী নিয়ে একের পর এক হাসপাতাল ঘুরেও একটা বেড পাচ্ছে না স্বজনরা, বাড়ছে মৃত্যু।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে বলা হয়, রাজধানীর সরকারি হাসপাতালের ৩ হাজার ৮৩৮টি সাধারণ শয্যার বিপরীতে শয্যা ফাঁকা ছিল ১ হাজার ৯৯টি। ৩৮১টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ফাঁকা ছিল ১৬টি। তবে এসব শয্যার সমপরিমাণে রোগী ভর্তি করতে পারছে না হাসপাতালগুলো। কারণ অনেক শয্যাতেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন কিংবা হাই ফ্লো অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ শয্যা আছে ২ হাজার ৩১টি, এর মধ্যে রোগী ভর্তি ছিল ৫০৫টিতে। বেসরকারি হাসপাতালেও আইসিইউ পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। বেসরকারি হাসপাতালে ৫০৭টি শয্যার মধ্যে ৮১টি ফাঁকা ছিল স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, রোগী যে হারে আসছে, সব রোগী আমরা ভর্তি নিতে পারছি না। কারণ কোভিড রোগীদের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন। আমাদের অক্সিজেন সংযোগসহ বেড রয়েছে ৭৫০টি। যে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছে তাদের অক্সিজেন সরবরাহ দেয়া আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে আমরা রোগী রিলিজ না হলে আর নতুন রোগী ভর্তি নিচ্ছি না। সাধারণ শয্যার পাশাপাশি আইসিইউয়ের জন্য অপেক্ষমাণ রোগীর তালিকা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাওয়ায় তারাও ক্রিটিক্যাল রোগী হিসেবে আসছেন। এভাবে যদি চলতে থাকে, আমরা যদি লাগাম টেনে ধরতে না পারি, এটা কিন্তু দুই-তিন সপ্তাহ পরে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মানুষের দুর্দশাও বাড়বে। একটা কঠিন সময় আসছে আমাদের জন্য।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক খলিলুর রহমান বললেন, প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল মানুষকে নিয়ম মানতে বাধ্য করা, তা না হলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। সবাইকে এখন মাস্ক পরতে হব। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না, সামাজিক অনুষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে বর্জন করতে হবে, গণপরিবহনে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।