স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে সংসদে হইচই
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৩ এএম, ১ জুলাই,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৫৪ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, নিয়োগ না হওয়া এসব বিষয়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বক্তব্যে সংসদে হইচই হয়েছে। বিরোধী সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে মন্ত্রী তাদের দায়িত্ব নিতে বলেন। ঢালাও অভিযোগ ‘অগ্রণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেন।
আজ বুধবার সংসদে বাজেট পাসের সময় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির তিনটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ নিয়ে আলোচনা হয়। এগুলো হলো আইন মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও গণফোরামের সদস্যরা ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর তাদের বক্তব্য দেন।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সময় জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, কতবার ডিও (ডেমি অফিশিয়াল) লেটার দেবো, আমার এলাকার হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স নেই, ডাক্তার কবে পাবো? এক্সরে মেশিন কবে পাবো? রেডিওলজিস্ট কবে পাবো? স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে যতবার বলি, উনি ডিও লেটার দিতে বলেন। কতবার দেবো? মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দাবি সম্পর্কে পীর ফজলু বলেন, চলমান বরাদ্দের টাকাই খরচ করতে পারেননি। আবার বরাদ্দ চেয়েছেন।
জাপার আরেক সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টাকা খরচ করতে পারেনি। ফেরত দিয়েছিল। এটা আমরা চাই না। খরচ করতে না পারলে এখানে ৩৫০ জন এমপিকে ভাগ করে দেন। আমরা খরচ করি। স্বাস্থ্যসেবা আমরা দেখবো। আপনাদের দরকার নেই। ডাক্তার-নার্স নিয়োগ করতে পারছেন না। ৩৫০ এমপিকে দায়িত্ব দেন। আমরা নিয়োগের ব্যবস্থা করি।
বিএনপির রুমিন ফারহানা স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন অনিময় তুলে ধরে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাত্র ২৫ শতাংশ। এই যে বরাদ্দ দিচ্ছি সেটা কোথায় যাচ্ছে? বরাদ্দ খরচ করার সক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের আছে কিনা সেই প্রশ্ন চলে আসছে।
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি দূর করতে হলে ডালপালা কেটে লাভ নেই। গাছের শেকড় উপড়ে ফেলতে হবে। স্বাস্থ্যের কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। দুর্নীতি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এছাড়া বিএনপির মোশাররফ হোসেন, জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী, মুজিবুল হব চুন্নু স্বাস্থ্যের বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরেন। করোনাভাইরাসের টিকার অপ্রতুলতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলের সদস্যরা। পরে জবাব দিতে উঠে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক পর্যায়ে বিরোধী দলের সদস্যেদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা হাসপাতালের চেয়ার। আপনাদের দায়িত্ব আছে। আপনাদের দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি দুর্নীতির অভিযোগেরও জবাব দেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মাস্ক নিয়ে কথা বলছেন। মাস্ক তো কেনাই হয়নি। তার পেমেন্ট দেয়া হয়নি। ঢালাও অভিযোগ দিলে তো চলবে না। এ সময় বিরোধী দলের বেঞ্চ থেকে হইচই হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যরা। ‘আমরা পত্রিকা পড়ি না’ এমন শব্দও হাউজ থেকে এ সময় শোনা যায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী একটু থেমে গেলে সামনে বসা তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী তাকে বক্তব্য চালিয়ে যেতে ইশারা করেন। মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, সুনির্দিষ্ট করে বলতে হবে। ঢালাওভাবে অনিয়মের কথা বললে গ্রহণযোগ্য হবে না। সুনির্দিষ্ট বলতে হবে কোথায় দুর্নীতি হয়েছে? এ সময় বিরোধী দলের দিক থেকে আবারও হইচই হলে মন্ত্রী বলেন, মাস্কের কোনও টাকাইতো দেয়া হয়নি। সুনির্দিষ্ট করে বলতে হবে। ঢালাওভাবে বললে হবে না। এ পর্যায়ে আবারও হইচই হলে মন্ত্রী বিরোধী দলের সদস্যদের ছাঁটাই প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে না বলে জানান।