ডেঙ্গুতে মৃত্যু বাড়লো
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩৫ এএম, ২৮ নভেম্বর,শনিবার,২০২০ | আপডেট: ০১:৪১ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল একজন। শুক্রবার দুজনসহ ডেঙ্গুতে এ বছর মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো তিন জনে।
আজ শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (তথ্য ইউনিট) ডা. মোহাম্মদ কামরুল কিবরিয়া স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি বছরে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত চারটি মৃত্যুর পর্যালোচনা করে তিনটি মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে। আইইডিসিআর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু সন্দেহে ছয়জনের মৃত্যুর তথ্য পাঠিয়েছে বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। এতে জানানো হয়, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ১০৫ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১৯৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ জন, মার্চে ২৭, এপ্রিলে ২৫, মে মাসে ১০, জুনে ২০ জন, জুলাইয়ে ২৩ জন, আগস্টে ৬৮, সেপ্টেম্বরে ৪৭, অক্টোবরে ১৬৩ এবং নভেম্বরে এখন পর্যন্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪৭৮ জন।
জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক হাজার ১৭ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ৮২ জন। আর ঢাকা বিভাগের ৪১টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬৯ জন, আর অন্যান্য বিভাগে ভর্তি আছেন ১৩ জন। গত ২৪ ঘন্টায় (২৬ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে ২৭ নভেম্বর সকাল ৮টা) নতুন করে রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৮ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১১ জন, আর ঢাকার বাইরে রয়েছেন সাতজন রোগী।
কীটতত্ত্ববিদ মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘যেহেতু ডেঙ্গু ও করোনার উপসর্গ প্রায় কাছাকাছি, তাই করোনা নেগেটিভ এলে সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর টেস্টও করা উচিত। আর কারও যদি ডেঙ্গু পজিটিভ আসে, তাহলে তার বাড়ির অন্যদেরও টেস্ট করাতে হবে। কারণ এই রোগটি ছোঁয়াছে। আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীকে সার্বক্ষণিক মশারিতে রাখতে হবে। তার বাড়ির আশপাশের ৪০০ মিটারের মধ্যে ফগিং করতে হবে। যাতে ডেঙ্গু রোগীকে কামড় দেয়া মশাটি অন্য কাউকে কামড়াতে না পারে। মোট কথা হচ্ছে, ব্যাপক হারে টেস্টিং দরকার।’
এদিকে গত ১৩ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার করা এক জরিপে বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২৫টি ওয়ার্ড এখনও ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে।
‘ডিসেমিনেশন অন মুনসন এডিস সার্ভে-২০২০’ নামের জরিপের ফলাফল নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান জানান, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মোট ১০০টি এলাকায় (ডিএনসিসি ৪১টি এবং ডিএসসিসি ৫৯টি) দুই হাজার ৯৯৯টি বাড়িতে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসের ভেক্টরের ওপর এই জরিপ কাজ পরিচালিত হয়। গত ১৯ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত দুই সিটি করপোরেশনের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় এই জরিপ চালানো হয়েছে। জরিপে বলা হয়েছে, উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৬টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার সূচক ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনের ভেতরে রয়েছে ১০, ১১, ১৭, ১৯, ২১, ২৩, ২৪, ২৯ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভেতরে রয়েছে ২, ৪, ৮, ৯, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮, ২৫, ৩৪, ৪০, ৪১, ৪৫ ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ড। তবে উত্তরে ১৭ নম্বর এবং দক্ষিণে ৫১ নম্বর ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি হলে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। জরিপে দেখা গেছে, উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৯টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৮টি ওয়ার্ডের ব্রুটো ইনডেক্স ১০-এর বেশি এবং দুই সিটির পাঁচটি ওয়ার্ডে কোনো ডেঙ্গু মশা পাওয়া যায়নি।