নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ বললেন রেঞ্জার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৭ পিএম, ৩০ মে,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:১৮ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার সদ্য বিদায়ী ইউএনও কে ‘ঘুষখোর’ ‘দুর্নীতিবাজ’সহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন চরকাই রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জার নিশিকান্ত মালাকার।
এ ঘটনায় নিশিকান্ত মালাকারের দ্রুত অপসারণসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীয় জানিয়ে আজ রোববার জনপ্রসাসন মন্ত্রী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী, দিনাজপুর-৬ আসনের সাংসদ, জেলা প্রশাসক ও ইউএনও এর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, নাজমুন নাহার (বর্তমান আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন) গত শুক্রবার সকালে নবাবগঞ্জ থেকে নতুন কর্মস্থল ময়মনসিংহে রওনা দেন। ওই দিন বিকেল ৪ টার দিকে চরকাই রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জার নিশিকান্ত মালাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বিশিষ্ঠ ঠিকাদার মো. মতিবুর রহমানের মুঠোফোনে কল দিয়ে পর্যটন কেন্দ্র আশুড়ার বিলে নির্মাণধীন সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ করতে বলেন। এ সময় মতিবুর রহমান রেঞ্জার নিশিকান্ত মালাকারকে সদ্য বিদায়ী ইউএনও নাজমুন নাহার এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রেফাউল আজমের সাথে কথা বলতে বলেন। এসময় নিশিকান্ত মালাকার ক্ষিপ্ত হয়ে নাজমুন নাহার স্যারকে “ঘুষ খোর, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা” সহ বিভিন্ন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।
লিখিত অভিযোগ আরো উল্লেখ করা হয়, নিশিকান্ত মালাকার ১৯৯০ সালে বন বিভাগের চাকুরিতে যোগদান করেন। কিন্তু তার ৩১ বছরের চাকুরি জীবনের মধ্যে চরকাই রেঞ্জের বিভিন্ন বিটেই একটানা প্রায় ১২ বছর চাকুরি করছেন। নিশিকান্ত মালাকারের বিরুদ্ধে অবৈধ ইটভাটার কাছ থেকে ঘুষ আদায়, ঘুষের বিনিময়ে বনের জায়গা অন্যকে দখলে দেয়া, বন উজাড়, গাছ চোরকে ছেড়ে দেয়াসহ ব্যপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি নবাবগঞ্জ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের ভেবগগাড়ি মৌজায় ১ নং খতিয়ানে ৪৩, ৪৫ এবং ৫২ দাগে মোট ১১ একর জমিতে লাগানো বিপুল পরিমান আকাশমনি গাছ রাতের আঁধারে চারকাই রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জার নিশিকান্ত মালাকারের নেতৃত্বে একটি সংঘবন্ধ চক্র কেটে নিয়ে যায়। এবছর ২৯ এপ্রিল রাতে উপজেলার ভাদুরিয়া বিটের অধিন দরগার বাগান (কাঠালের চড়া) এলাকায় গাছ চুরির সময় উপকারভোগীরা হাতে নাতে মিলন নামের এক চোরকে আটক করে। ভাদুরিয়া বিট কর্মকর্তা নুরুল হুদা রাতেই মিলনকে রেঞ্জ কার্যালয়ে সোপর্দ করে। পরে রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার উৎ কোচের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মো. আতাউর রহমান জানান, রেঞ্জার নিশিকান্ত মালাকার দীর্ঘদিন থেকে এ এলাকায় চাকুরি করার সুবাধে দুর্নীতির একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। আগামী ৯ জুন গাছ বিক্রির একটি বড় নিলাম রয়েছে। সেই নিলামে সরকারকে প্রকৃত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করে তার সিন্ডিকেটকে গাছ দেবার জন্য মোটা অংকের বানিজ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নিশিকান্ত অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে তিনি জেলা আইনশৃঙ্খলা সভা এবং বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছেন।
বিদায়ী ইউএনও নাজমুন নাহার জানান, তিনি নবাবগঞ্জে যোগদান করার নিশিকান্ত মালাকার বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা চাইতেন। তিনি এতে সম্মতি দেননি। সম্পতি তিনি নতুন সম্ভাবনার পর্যটন কেন্দ্র আশুড়ার বিল বেষ্ঠিত জাতীয় উদ্যানে নিশিকান্ত মালাকের ইন্দনে গাছ চুরির অভিযোগ পান তিনি। এটি বন্ধ করতে এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ ব্যারাক নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন নিশিকান্ত মালাকার।
এ বিষয়ে ঠিকাদার মো. মতিবুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিষয়টি তিনি সদ্য বিদায়ী ইউএনও নাজমুন নাহার, পিআইও মো. রেফাউল আজমসহ এলাকার সচেতন ব্যক্তিকে অবহিত করেছি।
খাস জমিতে গাছ কাটার বিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি আল মামুন জানান, সরকারি খাস জমিতে গাছ কাটার বিষয়ে ফরেস্ট প্রশাসনের কাছে কোন অনুমতি নেননি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে নিশিকান্ত মালাকার মুঠোফোনে সাংবাদিকদের কাছে ইউএনও কে গালিগালাজের অভিযোগ অস্বীকার করেন। গাছ কাটার কথা স্বীকার করে তিনি জানান, জমিটি ফরেস্টের মনে করে গাছ কাটা হয়েছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ সোম জানান, তিনি এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।