খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৮৫ জন চীনা নাগরিকের করোনা শনাক্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫৬ এএম, ২২ মে,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৩৩ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
খালিশপুরে অবস্থিত খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে নির্মিতব্য ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টে কর্মরত ৮৫ জন চীনা নাগরিকের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
তাদের নিজস্ব হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা থাকলেও অনেকে প্রকাশ্যে বাহিরে ঘোরাফেরা করছেন। এমনকি কাজেও অংশ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় প্রায় ৫-৬শ’ বাঙ্গালি শ্রমিক দৈনিক ভিত্তিতে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে কাজ করেছেন। তাদের মাঝে যে কোন সময় করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি তদন্তে আইইডিসিআর’র খুলনা বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর প্রজেক্ট পরিদর্শন করেছেন।
জানা যায়, খালিশপুরে খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র অভ্যন্তরে ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টে প্রায় ১৮৫ জন চায়না নাগরিক কাজ করছেন। এই প্রজেক্টে বাঙ্গালী শ্রমিক কাজ করেন প্রায় ৫-৬শ’ জন। এছাড়াও প্রতিদিন ১শ’-২শ’ জন শ্রমিক এই প্রজেক্টে অস্থায়ীভাবে কাজ করার জন্য প্রবেশ করেন এবং রাতে বাড়িতে ফিরে যান।
গত এক মাসে মোট ৮৫ জন চাইনিজ নাগরিকের করোনা সনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু ১৮ মে ৪২ জনের করোনা ধরা পড়েছে। ওই দিন ৯৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। ফলে এই প্রজেক্টে কর্মরত সকলের করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি প্রবল হয়ে উঠছে।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে করোনা আক্রান্ত চীনারা হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন না। তারা বাহিরে ঘোরা ফেরা ও কেনা-কাটা করছেন। অনেকেই নিয়মিত কাজে অংশ নিচ্ছেন। এতে এই প্রজেক্টে কর্মরত সকলের মাঝে যেমন করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে, তেমনি শ্রমিকদের মাধ্যমে খালিশপুরসহ আশপাশ এলাকায় সংক্রমণ বাড়তে পারে। বিষয়টি নিয়ে জনমনে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে কর্মরত কয়েকজন বাঙ্গালী শ্রমিকদের মধ্যে এই সংক্রমন ছড়িয়ে পড়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
কর্মরত শ্রমিক ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা শুনেছি প্রজেক্টে চীনা নাগরিকদের মাঝে করোনা সংক্রমন বেড়েই চলেছে। এতে আমরা উদ্বিগ্ন। কিন্তু আমাদের উপায় নেই, পেটের দায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। প্রতিদিনই চীনাদের সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে কার করোনা হয়েছে, আর কার হয়নি এটা বোঝার উপায় নেই।
বারেক হোসেন নামে স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, আমরা প্রতিদিনই চাইনিজদের ঘোরাফেরা করতে দেখি। এমনকি তারা অনেক কিছু কেনা-কাটা করতে আসেন। এতে আমরা ভয়ে থাকি। করোনা সংক্রমন নিয়ে কেউ যদি বাহিরে আসে সেটা আমাদের বোঝার উপায় নেই। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের দেখা উচিত।
পাওয়ার প্লান্টের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর মো. জাহিদ হোসেন বলেন, গত এক মাসে প্রজেক্টে কর্মরত ৮৫ জনের করোনা পজেটিভ সনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ১৯ জনের ইতোমধ্যে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। এখনও ৬৬ জন আক্রান্ত রোগী আছে। আক্রান্তরা নিজস্ব হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তারা বিদেশী নাগরিক, তাই এমনিতে তারা মানুষের সাথে তেমন মেলামেশা করেন না। তিনি আরও বলেন, আক্রান্ত কেউ কাজে অংশ নেয়নি। তারা ইতোমধ্যে সকলেই করোনা টিকা নিয়েছেন।
খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, খালিশপুরে বিদ্যুৎ প্রজেক্টে কর্মরত করোনা আক্রান্ত চীনা নাগরিকরা নিজস্ব হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এত সংখ্যক চীনা নাগরীক কেন করোনায় আক্রান্ত হলো- বিষয়টি দেখার জন্য আইইডিসিআর’র খুলনা বিভাগীয় কোড-অর্ডিনেটর তদন্তের জন্য সেখানে গিয়েছেন। তিনিই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।
রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) খুলনা বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর ডাঃ হাসনাইন শেখ বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আমি বৃহস্পতিবার প্রজেক্টে পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। এখানকার চাইনিজ কমিউনিটিতে ঢুকতে দেওয়া হয় না। যা কথা বলার তা ফোনেই বলতে হয়েছে। আক্রান্তদের শরীরে কোন লক্ষণ নেই। তাদের সকলের করোনার টিকা দেওয়া আছে। তাদের নিজস্ব চিকিৎসকও রয়েছে। তবে আক্রান্ত চাইনিজরা কাজে অংশ নিচ্ছেন কিনা বিষয়টি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। আমরা তাদের সকলের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চত করতে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের সকলের করোনা নেগেটিভ না আসা পর্যন্ত তারা কোনভাবেই বাহিরে বের হতে পারবেন না।