না আছে রাজনীতিবিদদের অধিকার-না আছে সাংবাদিকদের অধিকার, এটাকে সরকার গণতন্ত্র বলে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৫ এএম, ১৯ মে,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:১৪ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা অনেক দিন আগে থেকেই বলে আসছি দেশে মানুষের কোনো অধিকার নেই। না আছে নাগরিকদের অধিকার, না আছে রাজনীতিবিদদের অধিকার-না আছে সাংবাদিকদের অধিকার- এটাকে বর্তমান সরকার গণতন্ত্র বলে।
আজ মঙ্গলবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, রোজিনা ইসলাম তার অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য এর মধ্যে দেশে ও বিদেশে খ্যাতি লাভ করেছেন। সত্যটাকে বের করে এনে জনগণের সামনে তুলে ধরার যে দায়িত্ব, তা তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আসছেন। বিশেষ করে করোনাকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের দুর্নীতিগুলোকে তিনি জনসম্মুখে নিয়ে এসেছেন। এ অপরাধেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, সচিবালয়ের মতো জায়গায় একজন উঁচুমানের সাংবাদিককে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটকে রেখে মানসিক-শারীরিক নির্যাতনের পর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা কল্পনা করা যায় না। সত্য প্রকাশের জন্য নির্যাতন এটি প্রথম কোনো ঘটনা নয়, এর আগেও অনেক সাংবাদিককে নির্যাতন করা হয়েছে। অনেককে কারাবরণ করতে হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ৫০ জনের বেশি সাংবাদিক দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট দিয়ে সাংবাদিকদের লেখা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ধ্বংস করার নীল নকশা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিবৃতি : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, গতকাল বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আটক রেখে নির্যাতনের পর পুলিশের কাছে হস্তান্তরপূর্বক তাকে গ্রেফতার করার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় প্রমাণ হয়-বাংলাদেশে এখন আর স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং তথ্য পাওয়ার কোনো সুযোগ অবশিষ্ট নেই। রোজিনা ইসলাম একজন সিনিয়র সাংবাদিক। তার অনেক অনুসন্ধানী ও সাহসী রিপোর্টে সরকারের, বিশেষ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনেক দুর্নীতি, অনিয়মের খবর জনগণ জানতে পেরেছে। সেজন্য সরকার তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল এবং নজরদারি করছিলো। গতকাল পেশাগত কারণে তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে তাকে একা পেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যায়ভাবে তাকে দীর্ঘ প্রায় ৬ ঘন্টা আটকে রেখে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় এবং গ্রেফতার করা হয়। একজন নারী সাংবাদিকদের ওপর সরকারি কর্মকর্তাদের এহেন আচরণ লজ্জাজনক এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এটি কোনো তুচ্ছ বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কর্তৃত্ববাদী শাসনে সাংবাদিক দলন এবং ভিন্নমত, সত্য প্রকাশ ও সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি প্রচারে সরকারের প্রতিবন্ধকতার এটি একটি উদাহরণ মাত্র। সাহসী ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা যাতে আর সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার সংবাদ প্রকাশ করতে না পারে-এ ঘটনার মাধ্যমে তাদেরকে ভয় দেখানো হলো। সরকার ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে তাদের দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে আড়াল করতে চায়।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকের ওপর নিষ্ঠুর আচরণের দায় সরকার এড়াতে পারে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিব এ ঘটনা জানলেও তারা রোজিনা ইসলামকে উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেয় নাই। উল্টো তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। তাদের নির্দেশেই রোজিনা ইসলামের ওপর এ নির্যাতন চালানো হয়েছে। এই জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের পদত্যাগ দাবি করছি। বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব রোজিনা ইসলামের মুক্তি, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার, তাকে আটক রাখাসহ নির্যাতনের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের পদত্যাগ এবং সাংবাদিক দলন-নিপীড়ন বন্ধ করে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সঠিক তথ্য পাবার অধিকারে সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধের জোর দাবি জানান।