আগৈলঝাড়ায় অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ফসলি জমি হুমকির মুখে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪২ পিএম, ৪ মে,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১১:১৬ পিএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার খাল-বিল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের হিড়িক পড়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট সড়ক, বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, ফসলি জমি ও বসতবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে এবং বিভিন্ন স্থানে ভূমি ধ্বসের সৃষ্টি হচ্ছে।
এব্যাপারে উপজেলার সচেতন মহলের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেও এই বালু উত্তোলন প্রবণতা বন্ধ হয়নি। মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোটের্র মাধ্যমে সাজা দেয়া হলেও এর প্রতি কোনই তোয়াক্কা করছে না বালু উত্তোলনকারী সংঘবদ্ধ চক্রটি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করে অবৈধ বালুদস্যুরা একদিকে যেমন বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হচ্ছে অন্যদিকে তেমনি পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে এবং খাল-বিল পুকুরের ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তদুপরি অধিকাংশ এলাকায় নির্বিচারে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনের ফলে বহু আবাদি জমি ধ্বসে গিয়ে দ্রুত ভূমি শ্রেণীর পরিবর্তন ঘটছে।
উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের নাগার ও চাপাচুপা গ্রামে বয়ে যাওয়া সরকারী খালে অবৈধভাবে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে দেশের প্রচলিত আইন ও প্রশাসনের তোয়াক্কা না করেই প্রভাবশালী বরিয়ালী গ্রামের রেজাউল ইসলাম ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলন করছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে অনেক স্থাপনা, কৃষি জমি ও সড়ক।
রেজাউল দীর্ঘদিন যাবৎ তালের বাজার ওয়াবদা খালে ভাসমান শ্যালো মেশিন স্থাপন করে বেশ কয়েক বছর যাবত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে আসছে।
জানা গেছে, বালুদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনের অভিযানের পরেও তারা নতুন করে পুনরায় বালু উত্তোলন শুরু করায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে ইতোমধ্যে উপজেলার অবৈধ বালু কারবারীদের কাছে বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে উপজেলার নাগার-চাপাচুপা গ্রামে ড্রেজার মালিক ও বালু ব্যবসায়ীদের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বিপুল সংখ্যক কৃষি জমি। সরকারি খালসহ কৃষি জমি ঘেঁষা খালের পাড় থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে গভীর করে বালু উত্তোলন করায় পাড় ভেঙে কৃষি জমিগুলো এখন ভাঙনের মুখে পড়েছে। এতে করে জমি নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে অনেক কৃষক। ইতোমধ্যে ড্রেজারের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধসহ কৃষি জমি রক্ষায় অভিযোগ দিয়েছে এলাকাবাসী।
এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কৃষ্ণ নন্দ বিশ্বাস, নির্মল নন্দ বিশ্বাস, লেদু বল্লভ, বিশ্বনাথ বল্লভ ও দুলাল বল্লভ জানান, বরিয়ালী এলাকার প্রভাবশালী রেজাউল ইসলাম গত কয়েক বছর ধরে উপজেলার তালতা, রামের বাজার, ভদ্রপাড়া, নাগার ও চাপাচুপা খালের ওপর অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে খালের পাশে থাকা ইরি-বোরো জমির আইল ও ওয়াবদা সড়ক ঘেঁষে বালু উত্তোলন করছে। এতে করে কৃষি জমিসহ সড়ক হুমকির মুখে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন কৃষক জানান, এলাকাবাসী বেশ কয়েকবার অভিযুক্তদের কাজে বাঁধা দিলেও তারা উল্টো কৃষি জমির মালিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। তারা কৃষি জমি রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী রেজাউল ইসলাম জানান, সরকারী খাল থেকে কি অনুমতি ছাড়া বালু উত্তোলন করা যায়। আমি অনুমতি নিয়েই সরকারী খাল থেকে বালু উত্তোলন করছি। কার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বালু উত্তোলন করছেন সে বিষয়ে তিনি মুখ খুলতে রাজি হননি।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবুল হাশেম জানান, এ ধরনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্তদের ছাড় দেওয়া হবেনা। দ্রুতই অভিযান চালিয়ে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারী খাল থেকে বালুদস্যুরা যাতে বালু উত্তোলন করতে না পারে সেজন্য স্থানীয় তহশিলদের মাধ্যমে কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছে।