নিয়মনীতি উপেক্ষা করে আলহাজ্ব জুট মিলের ১০ কোটি টাকার গাছ ১ কোটিতে বিক্রি

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে শতভাগ রপ্তানীমুখী প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী আলহাজ্ব জুট মিল লিঃ এর প্রায় ১০ কোটি টাকার মুল্যবান গাছ নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। 

১৯৬৭ ইং সালে প্রতিষ্ঠিত ৩৯ একর জমিতে গড়ে উঠা এই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। বন্ধ আলহাজ্ব জুট মিল লিঃ এর গাছ বিক্রির ঘটনা সরকারের নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

গত ২০১২ইং সালের ১লা জানুয়ারী বস্ত্র ও পাটকল মন্ত্রানালয়ের অতিরিক্ত সচিব বেগম শামীমা সুলতান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভার সিদ্ধান্ত গ্রহন নেয়া হয়েছে, ‘বিরাষ্ট্রায়াত্ব বস্ত্র ও পাটকল সমুহের সরকারী/বেসরকারী শেয়ার, মিলের জমি, স্থাপনা, মেশিনারীজ (নতুন/পুরাতন) ও স্থাবর-অস্থাবর যে কোন সম্পদ বস্ত্র বস্ত্র ও পাটকল মন্ত্রানালয়ের অনুমোদন ছাড়া বিক্রয়/হস্তান্তর/মালিকানা পরিবর্তন করা যাবেনা’। 

সরকারের ওই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বন্ধ আলহাজ্ব জুট মিল লিঃ কর্তৃপক্ষ এলএল কন্সট্রাকশন এর নিকট নিলাম ছাড়াই সাড়ে ৩ হাজার গাছ বিক্রি করে দিয়েছে বলে জানাগেছে। এ নিয়ে জুট মিলের কর্মরত ৫ হাজার শ্রমিক কর্মচারী, পাট ব্যাবসায়ী ও স্থানীয় সচেতন মহলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

পাট ব্যাবসায়ীরা পাটকল কর্তৃপক্ষের নিকট প্রায় ১০/১২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। অনেক দেনদরবার করেও ব্যবসায়ীরা তাদের পাট বিক্রির টাকা পাননি। এ ছাড়াও মিলের পৌরসভার পৌরকর বকেয়া রয়েছে ৪৪ লক্ষ টাকা। গত কয়েকদিন যাবৎ আলহাজ জুট মিল লিঃ এলাকায় বিভিন্ন প্রকার ফলজ ও বনজ বৃক্ষ কাটা হচ্ছে।
     
আলহাজ জুট মিল কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা গেছে, আলহাজ্ব জুট মিল লিঃ প্রতিষ্ঠানটিতে বাৎসরীক পাটের চাহিদা ২ লক্ষ ৩০ হাজার মেঃ টন, পাটের চাহিদা নিয়ে বাজেট ওয়ান্ডিং উৎপাদন ৮ লাখ মেঃ টন,মোট স্পিনিং ফ্রেম ৩৯টি, মোট তাতের সংখ্যা হেসিয়ান-১৫০, সেকিং-১০০ টিসহ মোট ২৫০ টি, শ্রমিক সংখ্যা ১৫০০ জন। জুট মিলে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কর্মচারী উৎপাদন কাজে নিয়োজিত ছিল। এ ঘটনায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে বন্ধ আলহাজ্ব জুট মিলস লিঃ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক  ও জাতীয় শ্রমিকলীগ সরিষাবাড়ী আঞ্চলিক শাখার সাধারন সম্পাদক জাহিদুর রহমান জানান, আলহাজ্ব জুট মিল লিঃ কর্তৃপক্ষ দরপত্রের মাধ্যমে জামালপুরের এল এল কন্সট্রাকশন এর কাছে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।

এ বিষয়ে গাছ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এল এল কন্সট্রাকশন এর প্রোপাইটার ইউনুছ আলী লিটন জানান, আলহাজ জুট মিলের কর্তৃপক্ষ ২৬ মার্চে আহবানকৃত গাছ বিক্রির দরপত্র মোতাবেক ৩ হাজার ২শ টি গাছ আলহাজ্ব জুট মিল লিঃ এর কাছ ওয়ার্ক অর্ডার পেয়ে গাছগুলি কর্তন করছি। 

জানতে চাইলে আলহাজ্ব জুট মিল লিঃ এর সহকারী ব্যাবস্থাপক মাহফুজুর রহমান জানান, জুটমিল কর্তৃপক্ষ দরপত্রের মাধ্যমে গাছ গুলি বিক্রি করেছে। গাছগুলো জুট মিল থেকে কর্তন করে নিয়ে যাচ্ছে।

সরিষাবাড়ী পৌর সভার মেয়র মনির উদ্দিন জানান, আলহাজ্ব জুট মিলস লিঃ এর কাছে পৌর সভার কর বাবদ ৪৪ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। গাছ কর্তনের বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে কোন যোগাযোগ করে নাই। তিনি আরও জানান, গাছ কর্তনের বিষয়ে জুট মিলের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল এক ব্যাক্তিকে পৌরসভা কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়েছিল। এ সময় সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মীর রকিবুল হক উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে আলহাজ জুট মিল লিঃ এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক হারুন অর রশীদ এর নিকট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কোন সদোত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।