যারা আত্মসমর্পণ করেনি তারা পালিয়ে বাঁচবে না-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:২৮ এএম, ১৩ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২০ | আপডেট: ০৩:১০ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
জলদস্যুদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আজ যারা আত্মসমর্পণ করছেন তাদের হত্যা ও ধর্ষণ মামলা ছাড়া অন্যান্য মামলা থেকে পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেয়া হবে। আর যারা আত্মসমর্পণ করেনি তারা পালিয়ে বাঁচতে পারবে না।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩৪ জলদস্যুর আত্মসমর্পণ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ হুঁশিয়ারি দেন মন্ত্রী। ৩৪ জলদস্যু আত্মসমর্পণের ঘটনায় তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, যারা এখনও আত্মসমর্পণ করেননি তাদের জন্য স্পষ্ট বার্তা হলো- আপনারা পালিয়ে বেড়াতে পারবেন হয়তো, কিন্তু আস্তানা গড়তে পারবেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। পালিয়ে বাঁচতে পারবেন না।
তিনি বলেন, বিগত সময়ের ন্যায় আজ যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকার সহযোগিতা করবে। পুনর্বাসন করা হবে সবাইকে। তাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দেয়া হবে। আর যারা এখনও নদী, সাগর বা পাহাড়ে থাকতে চান তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। তাদের যারা মদদ দিচ্ছেন তাদের পরিণতিও হবে আরও ভয়াবহ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দস্যুতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী কোনও অপরাধী অপরাধ করে পার পাবে না। র্যাব, পুলিশসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আধুনিকায়নে বিশেষ করে র্যাব ও পুলিশের জন্য সরকার প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি, গাড়িসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। মাদকের অবাধ প্রবাহ রোধকল্পে র্যাবের অনেক ভূমিকা রয়েছে। করোনার মধ্যেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে অনেক মানবিক অবদান রেখেছে। করোনাকালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত পুলিশের ৭৫ জন এবং র্যাবের ৫ জন সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন।
মন্ত্রী বলেন, আমরা অতি শিগগিরই বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলকে জলদস্যু ও ডাকাতমুক্ত ঘোষণা করবো। আমরা সেই সুন্দর দিনের অপেক্ষায় আছি।
তিনি বলেন, র্যাব সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করেছে। এজন্য র্যাবকে অশেষ ধন্যবাদ। র্যাব চট্টগ্রাম বিভাগের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাসমূহকে দস্যুমুক্ত করবে বলে আশাবাদী। এর ফলে সমুদ্র বিজয়ের সুফল ভোগ সম্ভব হবে। কোনও অপরাধীকে রাজনৈতিক পরিচয়ে ছাড় দেয়া হচ্ছে না, হবে না।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, র্যাব-৭ প্রতিষ্ঠা থেকেই বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলে জলদস্যুতা দমনে কঠোর অবস্থান নেয়। এরই অংশ হিসেবে বাঁশখালী-কুতুবদিয়া-মহেশখালী বিস্তৃত অঞ্চলে উপকূলীয় এলাকায় জলদস্যুদের দমন, দেশীয় অস্ত্র তৈরির কারখানা ও কারিগরি এবং অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। তাদের সাঁড়াশি আভিযানিক কর্মকান্ডে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলের জলদস্যুরা নিষ্ক্রিয় হতে থাকে। এছাড়া র্যাবের তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার, অতি সক্রিয় নেটওয়ার্ক এবং কৌশলগত পদক্ষেপের কারণে এই উপকূলীয় ফেরারী জীবনের অবসান ঘটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পথ খুঁজতে থাকে এবং বিনাশর্তে র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করতে উৎসাহী হয়। ইতিমধ্যে র্যাবের তত্ত্বাবাবধানে সুন্দবন উপকূলীয় অঞ্চলের আত্মসমর্পণ ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়াও তাদেরকে অনুপ্রাণিত করে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে র্যাবের পক্ষ থেকে সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ করানো ছিল যুগান্তকারী ঘটনা। সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে গত ৩১ মে ২০১৬ তারিখে মাস্টার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে এই অগ্রযাত্রা শুরু হয়। এই পর্যন্ত র্যাব-৬ ও র্যাব-৮ কর্তৃক ৩২টি বিভিন্ন বাহিনীর ৩২৮ জন জলদস্যু, বনদস্যু, ডাকাত ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ৪৬২টি দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪টি গোলাবারুদসহ র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। অধিকাংশ জলদস্যু আজ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জামিনে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে সুন্দরবন অঞ্চলে নতুন করে কোনো জলদস্যু বাহিনীর আবির্ভাব ঘটেনি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে এই অঞ্চলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৬ বাহিনীর ৪৩ জন জলদস্যু ১০৪টি দেশি-বিদেশি অস্ত্র ৭ হাজার ৬৩৭টি আধুনিক গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে।
মন্ত্রী বলেন, সরকার বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও পর্যটননগরী কক্সবাজারের এ অঞ্চলকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। সরকারের ১০টি ফাস্ট ট্র্যাক মেগা প্রজেক্টের মধ্যে তিনটিই এই অঞ্চলের। একটি মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল এবং বঙ্গবন্ধু টানেল। যা এই অঞ্চলে এনে দিবে অর্থনৈতিক প্রাণ। সরকার এই অঞ্চলের বিভিন্ন প্রকল্পে দেশি-বিদেশি অনেক বিনিয়োগ করছে।