ছাত্রলীগ না করলে সরকারি চাকরি হবে না যুবলীগের সভাপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৬ এএম, ২৬ এপ্রিল,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৪৭ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দেশের যেকোনো চাকরি করতে হলে ছাত্রলীগ করতে হবে; অন্যথায় লিখিত বা মৌখিকে পাস করলেও কারো চাকরি হবে না। এনএসআই, ডিজিএফআই, এসবির লোকজন ছাত্রলীগার না হওয়ার কারণে পাস করলেও বাদ দিবে। শুধু নিজে ছাত্রলীগ নয়, নিজের পিতাকেও আওয়ামী লীগের রাজনীতিক হতে হবে। এছাড়া বাঁশখালীতে যেকোনো চাকরির জন্য স্থানীয় এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের রাজনীতি করতে হবে। তাহলেই সব কিছু করা যাবে অন্যথায় কোনো লাভ হবে না এরকমই মন্তব্য করেছেন বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ও বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম।
শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠানে এমপি মোস্তাফিজের পিএস পরিচয়দানকারী এ চেয়ারম্যান প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এ বিষয়ে দলের অনেকে তার সমালোচনামুখর ফেসবুকে। তার এ বক্তব্যে দলের ক্ষতি হবে বলেও দাবি তাদের। যদিও তাজুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তাজুল ইসলামের বক্তব্যের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এতে তাকে বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলতে শোনা যায়, ‘আর একটি কথা বলতে চাই, তোমরা ছাত্রজীবন যখন শেষ করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ছাত্র না হলে সেই ছেলে বিসিএস ক্যাডার হবে না, সে চাকরি পাবে না। এখন বাংলাদেশে চাকরি করতে হলে তাকে অবশ্যই ছাত্রলীগ করতে হবে। তার মা-বাবাকে অবশ্যই আওয়ামী লীগ করতে হবে। তা না হলে এনএসআই, ডিজিএফআই, ডিএসবি এসব গোয়েন্দা শাখায় তোমার রেজাল্টে তুমি রিটেন ও মৌখিক পাস করলেও তোমার বাবা-মা যদি আওয়ামী লীগার না হয়, তোমার পরিবার যদি আওয়ামী না হয়, তুমি যদি ছাত্রলীগ না হও তাহলে তোমাকে কোন অবস্থায় চাকরি দিবে না।’
এরপর তিনি আরও বলেন, ‘তাহলে চাকরির জন্য হলেও ছাত্রলীগ করতে হবে। ছাত্রলীগ কার পেছনে করতে হবে? যাকে শেখ হাসিনা বাঁশখালীর পতাকা দিয়েছেন। যিনি বাঁশখালী আওয়ামী লীগের সফল সভাপতি। তিনি আধুনিক বাঁশখালীর রূপকার। তাঁর পেছনে রাজনীতি করতে হবে। যদি চাকরির প্রয়োজন হয় তাহলে মাননীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার প্রয়োজন হবে। আর মোস্তাফিজুর রহমান ছাড়া কোন চাকরি পাওয়া যাবে না।’
ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল বলেন, ‘আর যে যে হাইব্রিড নেতা আছে, তাদের পেছনে রাজনীতি করা মানে নষ্ট হয়ে যাওয়া। সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস। আজকের আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান এক সময়ের বিধ্বস্ত বাঁশখালীকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মধ্যে সোনার বাঁশখালী উন্নত ডিজিটাল বাঁশখালীতে রূপান্তর করছেন। তিনি নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করেন না। তিনি বাঁশখালী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করেন। বাঁশখালীর উন্নয়নের জন্য রাজনীতি করেন। পশ্চিম বাঁশখালী মানুষের জন্য বেড়িবাঁধের জন্য রাজনীতি করেন। যে বেড়িবাঁধ না হলে আজকে পশ্চিম বাঁশখালীর মানুষ সিগন্যাল দিলে পূর্বদিকে পালাতে হতো। আজকে ৩০০ কোটি টাকায় পশ্চিম বাঁশখালীতে বেরিবাঁধ নির্মাণ করার কারণে প্রিয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী পশ্চিম বাঁশখালী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। আজকে সবাই ফসল ফলাচ্ছেন। সিগন্যাল দিলে পূর্ব দিকে না গিয়ে নিজ জায়গায় অবস্থান নেয়।’
উপজেলা যুবলীগের এ সভাপতি আরও বলেন, ‘আজকে যে ছাত্রলীগ তোমরা এখানে উপস্থিত আছো। তোমরা অত্যন্ত নগণ্য ছাত্রলীগ উপস্থিত হয়েছো। পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২২ শ ছাত্রছাত্রী আছে। তোমরা এখনো ছাত্রলীগ কী জিনিস ছাত্রলীগ না করলে কী হবে ও করলে কী হবে এবং মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর পতাকার তলে আসলে কী হবে সেটা এখনো বুঝতে পারছো না। তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ তোমরা লিটন সাহেবের (আব্দুল্লাহ কবীর লিটন) রাজনীতি করবে না। সে বাঁশখালীর একজনকেও চাকরি দিতে পারবে না। সে বাঁশখালীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মোস্তাফিজুর রহমানের কর্মীরা কোন দিন নৌকার বিরুদ্ধে যেতে পারি না। সে যেই হোক। তোমাদেরকে লেখাপড়া করতে হবে। তোমাদেরকে এমন একটি সম্মেলন করতে হবে যেখানে লিটন সাহেব অমুক তমুকের রাজনীতি না। তুমি স্কুলের ছাত্র, তোমার বাবার বয়স্ক ভাতার দরকার হলে আমরা ভাতা দিতে পারি, তোমার যদি টিউবওয়েলের অভাব হলে টিউবওয়েল দিতে পারি, তোমাদের রাস্তার অভাব হলে রাস্তা করে দিতে পারি, তোমাদের বিধবা ভাতা লাগলে বিধবা ভাতা দিতে পারি।’
চেয়ারম্যান তাজুল বলেন, ‘আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমানের যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা যে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছি। আমরা কিন্তু নৌকার পূজারী, বঙ্গবন্ধুর পূজারী, শেখ হাসিনার পূজারী। এখানে আমাদের কাছে চাইলে সবকিছু পাবে। পাবে না সেটি কী? তোমার বাবা চাইলে বয়স্ক ভাতা পাবে, তোমরা চাইলে মাতৃত্ব ভাতা পাবে, তুমি পঙ্গু ভাতা পাবে, রাস্তা পাবে, টিউবওয়েল পাবে। শুধু পাবে না মোস্তাফিজুর রহমানের মতো পরিপূর্ণ একজন মানুষ। দুই দুবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য তিনি। বিগত ৩০ বছরে যারা এমপি ছিল মন্ত্রী ছিল যা করতে পারেনি শুধুমাত্র ৭ বছরে তা করে দেখিয়েছে। বর্তমানে তিনি ১৫শ’ কোটি টাকা উন্নয়ন কর্ম করে বাঁশখালীর সর্বশ্রেষ্ঠ কর্মবীরে পরিণত হয়েছেন।’
আমি তাই বলবো ছাত্রদেরকে বক্তৃতা জানতে হবে। রাজনীতিতে বক্তৃতা না জানলে নেতৃত্ব দেওয়া যাবে না তাই বক্তৃতা শিখতে হবে। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে ১৮ মিনিটের বক্তৃতায় বাংলাদেশের ৭ কোটি মানুষকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমি নেতৃবৃন্দকে মোস্তাফিজুর রহমানের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। পরিশেষে ছাত্রলীগ হতে হলে তোমাদের জ্ঞানী হতে হবে, পরিশ্রমী হতে হবে।’ যোগ করেন তিনি।
যদিও তার বক্তব্য সম্পর্কে জানতে শনিবার তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয়ভাবে এ বক্তব্য যে ইউপি চেয়ারম্যান তাজুলের তার সত্যতাও নিশ্চিত হওয়া গেছে।