চালের বাড়তি দরে ভোক্তার নাভিশ্বাস
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২:১৪ এএম, ২৫ এপ্রিল,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৩৬ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
করোনা পরিস্থিতিতে ভোক্তার আয় কমলেও বেড়েছে ব্যয়। কারণ বাজারের অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বেশি। গত ১ মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে মাঝারি আকারের চাল কেজিতে ১.৮৯ শতাংশ বেড়েছে। আর মোটা চাল কেজিতে দাম বেড়েছে ৪.৩৫ শতাংশ। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানায়, এক বছরের ব্যবধানে মোটা চাল খুচরা বাজারে ৪.৩৫ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে সব শ্রেণির ভোক্তা ভোগান্তিতে পড়ছে। শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজারে দেখা যায়, এ দিন প্রতি কেজি পাইজাম চাল বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৬০ টাকায়। যা ১ মাস আগে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০-৫২ টাকা। যা ১ মাস আগে খুচরা বাজারে ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নয়াবাজারে চাল কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, বাজারে কয়েক মাস ধরে সব ধরনের চালের দাম বাড়তি। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আয় কমেছে যে কারণে বাড়তি দরে চাল কিনতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণ কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে লকডাউন দেয়া হয়েছে। যে কারণে কোনো আয় নেই। যে টাকা জমানো আছে সে টাকা দিয়ে চলতে হচ্ছে। এর মধ্যে জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। কিভাবে বাঁচব বুঝতে পারছি না। মালিবাগ বাজারে আসা আরেক ক্রেতা বলেন, লকডাউনে আয় নেই। দিনমজুরি করে যে টাকা পেতাম, সেটা দিয়ে প্রতিদিনের বাজার করতাম। কিন্তু এখন কাজ নেই। তাই রোজগারও নেই। এ পরিস্থিতিতে চালের দাম চওড়া। এমন চলতে থাকলে আমাদের মতো গরিব মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। বাড়তি দামের ব্যাপারে মালিবাগ কাঁচাবাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা দিদার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বাজারে গত কয়েক মাস ধরে সব ধরনের চালের দাম বেশি। গত কয়েক মাসে মিলাররা ধাপে ধাপে চালের দাম বাড়িয়েছে। যে কারণে চালের বাজার অস্থিরতা বিরাজ করছে। যার প্রভার সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে পড়ছে। কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাউস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চালের দাম মিলাররা কমাচ্ছেন না।
তারা বলছেন, নতুন ধান এলেই দাম কমবে। মিলাররা দাম বেশি রাখার সুযোগ খোঁজেন। কোনো অজুহাত পেলেই তারা দাম বাড়ান। গত কয়েক মাস ধরে মিলারদের কারসাজিতে চালের বাজার অস্থির হয়ে আছে।
সব চাল বাজারে আনতে আমদানিকারকদের শেষ সুযোগ : বেসরকারিভাবে আমদানির জন্য বরাদ্দ পাওয়া যেসব আমদানিকারক গত ২৫ মার্চ ও ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এলসি খুলেছেন তাদের সব চাল আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাজারজাত করতে হবে। শেষবারের মতো চাল আনার সময় বেঁধে দিয়ে শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে দুটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর আগে এলসির সব চাল বাজারে আনার বেধে দেয়া সময় শেষ হয়েছে ২০ এপ্রিল।
চিঠিতে বলা হয়, বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যে সকল আমদানিকারক গত ২৫ মার্চ ও ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এলসি খুলেছেন কিন্তু চাল বাজারজাত করতে পারেননি তাদের এলসি করা সম্পূর্ণ চাল বাজারজাতকরণের জন্য আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হলো। এ সময় আর বর্ধিত করা হবে না। খাদ্যশস্যের বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা রোধ, নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে সহায়তা এবং বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে বেসরকারি পর্যায়ে চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার।
খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর বেসরকারিভাবে চাল আমদানি জন্য বৈধ আমদানিকারকদের প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রসহ ১০ জানুয়ারির মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে বলা হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন শর্তে বেসরকারি পর্যায়ে সর্বমোট ১৫ লাখ ৬০ হাজার ৮৬৩ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এই অনুমতির চিঠি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু বরাদ্দের বেশির ভাগ চালই আনতে পারেননি আমদানিকারকরা। নির্দিষ্ট সময়ে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে না পারায় অনেকের বরাদ্দপত্র বাতিল করা হয়। যারা ঋণপত্র খুলতে পেরেছেন, পুরো চাল বাজারে আনতে পারছেন না তারাও। বার বার তাদের চাল বাজারে আনার সময় বাড়ানো হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ লাখ ৫৪ হাজার ৪৪৪ টন চাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে। ওই সময় পর্যন্ত মোট ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯০১ টন চাল আমদানি হয়েছে।