ধরা ছোয়ার বাইরে পাটুরিয়ার অবৈধ বালু ব্যবসার মূল হোতারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৩২ এএম, ৩০ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
জেলার শিবালয়ে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে আরিচা নদী বন্দরের আওতাধীন ফোরশোর ভূমিতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু ব্যবসার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও ধরা ছোয়ার বাইরে বালু ব্যবসার মূল হোতারা।
জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ’র মানিকগঞ্জ আরিচা নদী বন্দরের আওতাধীন ফোরশোর ভূমিতে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকার পুরাতন টার্মিনালের সীমানার মধ্যে স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম খানের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে মোঃ আমিনুর ইসলাম মিন্টু, মোনতাজ উদ্দিন (মোনতাজ মাস্টার), মোঃ মানিক, পান্নু মন্ডল, পলাশ ও আলমগীর, শিবালয় ইউপি চেয়ারম্যান আলালউদ্দিন আলাল, আরোয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম, শ্রমিক লীগ নেতা মিলন কাজী, রাজবাড়ি জেলার গোয়ালন্দ পৌরসভার নবনির্বচিত মেয়র নজরুল ইসলাম মন্ডল সহ মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতার যোগশাজসে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ বালু ও মাটির ব্যবসা। অভিযোগ রয়েছে বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা নদী বন্দর এলাকার বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজকে ম্যানেজ করেই চলছিল এসব বালু ব্যবসা।
গত বৃহস্পতিবারের বিআইডব্লিউটিএ’র বন্দর কর্মকর্তার দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র সাতদিন যাবৎ পাটুরিয়া ঘাটের ফোরশোর এলাকায় ওইসব আসামীরা অবৈধভাবে বালু ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। কিন্ত সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকায় গত কয়েকবছর যাবৎ বালু ব্যবসা করা হচ্ছে।
এসব অবৈধ বালু ব্যবসার মূল হোতাদের বাহিরে রেখে নাম মাত্র কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করে নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন আরিচা বিআইডব্লিউটিএ’র ওই কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন পাটুরিয়ার ফোরশোর এলাকার অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে নাম মাত্র অভিযোগ করে এতদিন এই বালু ব্যবসার বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়নি।
বালু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা যায়, আরিচা বন্দর কর্মকর্তা এই মাসের মাসোহারা না পেয়ে হঠাৎ করে ক্ষিপ্ত হয়ে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের একাংশের বিরুদ্ধে নিজে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিবালয়ের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম খানের নেতৃত্বে বন্দর কর্মকর্তার করা মামলার এজাহারভূক্ত আসামীরা এসব অবৈধ বালূ ব্যবসা পরিচালনা করতো। এদের মধ্যে রহিম খানের ভাগ্নে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলাল পরোক্ষভাবে জড়িত। বন্দর কর্মকর্তার করা মামলার ২ নং আসামী মোঃ মানিক মিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আলালেনর একনিষ্ঠ যুবদল কর্মী হওয়ায় ওইসব বালু ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। এসব বালু ব্যবসায়ীরা এতদিন প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর ও জেরা পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে গড়ে তুলেছিল বালু ব্যবসার অবৈধ সাম্রাজ্য।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, সরকার ১৯৫৮ সালের অর্ডিন্যান্স মোতাবেক ১৯৮৩ সালে এক গেজেটের মাধ্যমে অন্যান্য নদী বন্দরের ন্যায় আরিচা নদী বন্দর ঘোষণা করে এবং বিআইডব্লিউএ-কে বন্দর সংরক্ষক নিযুক্ত করেন। সেমতে বিআইডব্লিউটিএ The port act- 1908 এবং The port rules- 1966 অনুযায়ী বন্দর সীমানাভূক্ত এলাকার যাবতীয় কার্যক্রম বিআইডব্লিউটিএ’র এখতিয়ার ভূক্ত। কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমোদন ব্যতিত বন্দর সীমানার মধ্যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বালি মাটি উত্তোলন স্তপিকরণ অথবা স্থাপনা নির্মাণ কিংবা অন্য কোন কার্যক্রম পরিচালনা করার এখতিয়ার নেই। অথচ এতদিন বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা শাখার বন্দর কর্মকর্তা ও প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নাকের ডগায় এসব অবৈধ বালু ব্যবসা চললেও তেমন কোন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হঠাৎ মাসোহারা বন্ধ হওয়ায় ৬ জনকে আসামী করে নামমাত্র একটি মামলা দায়ের করের বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা শাখার বন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ। অবৈধ বালু ব্যবসায়ের সাথে জড়িত বড় একটি অংশ এখনো রয়েছে অন্তরালে।
এ বিষয়ে শিবালয়ের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুুর রহিম খানের মুঠোফোনে বার বার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ আরিচা নদী বন্দরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ বলেন, এসব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আমি কোন টাকা পয়সা নেইনি। গত বৃহস্পতিবার এসব বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমি বাদী হয়ে মামলা করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা টাকা পয়সার কথা বলছে। এর কোন ভিত্তি নেই।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা শাখার বন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামী করে শিবালয় থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার আসামীরা হলেন- মো. আমিনুল ইসলাম মিন্টু, মো. মানিক, মো. মোনতাজ উদ্দিন, পান্নু মন্ডল, পলাশ ও আলমগীর।