কেশবপুরে পশুহাট অবৈধ দখলের চেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৪ পিএম, ১৮ এপ্রিল,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৪১ এএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাতবাড়িয়া কাঁচা বাজরের ইজারাদাররা গতকাল শনিবার (১৭ এপ্রিল) সাতবাড়িয়া পশুহাটের অবৈধ দখল নিতে গেলে হাট কমিটি ও ইজারাদারের লোকজন মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাতবাড়িয়া কাঁচা বাজারের ইজারাদার পৌরসভার মধ্যকুল এলাকার যুবলীগ নেতা লিটন গাজী (৩৫), সাতবাড়িয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী এবং সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক মাসুম বিল্লাহকে আটক করে।
এ সময় তাদের পক্ষের বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত ১১ টি মোটর সাইকেল জব্দ করা হয়। এ ঘটনার পর ওই পশুহাট জন শূন্য হয়ে পড়ে। জানা গেছে, ২০১৮ সালে সাতবাড়িয়া বাজারের পূর্বপাশে ২১ শতক জমির ওপর সাতবাড়িয়া পশুহাট স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে আরও দেড় বিঘা জমি বর্গা নিয়ে হাটটি পরিচালিত হয়ে আসছে।
এলাকার চেযারম্যান সামছুদ্দীন দফাদারের প্রচেষ্টায় আওয়ামী লীগ নেতা মশিয়ার রহমান দফাদার, আব্দুর রশিদ, আব্দুল আলীম কিনু, মোজাহার হোসেনসহ ২০-২৫ জন ব্যক্তি পশুহাটটি গড়ে তোলেন। সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে। এ হাটে বরনডালি, গোবিন্দপুর, বাঁশবাড়িয়া, রঘুরামপুর, তালার জাতপুর, মনিরামপুরের শয়লা, চালুয়াহাটিসহ আশপাশের ২৫-৩০ গ্রামের মানুষের গরু, ছাগল বিকিকিনি হয়ে থাকে। প্রতিহাটে শতাধিক গরু ও ৬০ থেকে ৭০টি ছাগল বিক্রি হয়।
এলাকাবাসি জানায়, শনিবার (১৭ মার্চ) এ ঘটনার পরিত্রাণ পেতে এলাকাবাসী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের কর্মসূচির আয়োজন করে। এ খবর পেয়ে সকাল থেকে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা জড়ো হতে শুরু করে সাতবাড়িয়া বাজারে। এতে এলাকাবাসী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী একত্রিত হয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা তৈরি হয়।
এ সময় কেশবপুর থানার ওসি জসীম উদ্দীনের নেতৃত্বে থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে ও তিনজনকে আটক করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। তাদের রেখে যাওয়া ১১টি মোটর সাইকেল জব্দ করেছে পুলিশ।
হাট কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিয়ার রহমান দফাদার বলেন, স্থানীয় জাহানপুর গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে আমজাদ হোসেন ব্যবসায়ীক সূত্রে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। ওই অনুপ্রবেশকারীর পরিকল্পনায় স্থানীয় কয়েকজন মিলে বহিরাগত সন্ত্রাসী জড়ো করে হাট দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে, স্থানীয় জনগণ প্রতিরোধ করেছে, আগামীতেও প্রতিরোধ করবে। এ সকল অনুপ্রবেশকারীরা অর্থের লোভে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ঠ করছে, আমরা এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।
তিনি আরো জানান, হাটুরেদের সুবিধার্তে পশুহাটে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, মসজিদ, ২টি চান্নি, বাথরুমসহ অগভীর নলকুপ বসানো হয়েছে। এছাড়া দূর-দূরাত্ব থেকে আগত ব্যবসায়ীদের জন্যে পর্যাপ্ত হোটেল, চায়ের স্টল ও খাবারের দোকান স্থাপণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে হাটটি ডাকে আসার জন্যে কাগজপত্র জমা দেয়া হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে। যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সাতবাড়িয়া ইউপি চেযারম্যান ও পশুহাট কমিটির সভাপতি সামছুদ্দীন দফাদার বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান, আমি ওই পশুহাটের সভাপতি তারপরও আমাদের উপস্থিতিতে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অবৈধভাবে দখলবাজি করতে এসেছে এটা হতাশাজনক, এটা মেনে নেওয়া যায়না। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি।
তাঁর অভিযোগ, গত মার্চ মাসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ১৭ হাজার টাকা ডাকের বিনিময়ে সাতবাড়িয়া কাঁচা বাজারের ইজারা পান কেশবপুর পৌরসভার মধ্যকুল এলাকার লিটন গাজী। সাতবাড়িয়া কাঁচা বাজারের সাথে পশু হাটের কোন সম্পর্ক না থাকার পরও গত ১৪ এপিল সকাল ১০টায় লিটন গাজীর পক্ষে সাতবাড়িয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলী, আকবার, হাফিজুর, আনিছুরসহ ৩০-৩৫ জন যুবক হাটটির দখল নিতে যায়।
এক পর্যায়ে হাট কমিটির লোকজন ও লিটন গাজীর লোকজন মুখোমুখি অবস্থান নিলে সংঘর্ষের রূপ নেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। গতকাল শনিবার তারা হাটের দখল নেবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়।
কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ও এলাকাবাসীর মধ্যে পশুহাট দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের আশাংকা হলে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা হয়েছে। পরে ঘটনাস্থল থেকে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ফেলে রাখা ১১টি রেজিস্ট্রেশন বিহিন মোটর সাইকেল জব্দ এবং ঘটনায় জড়িত উভয় পক্ষের তিনজনকে আটক করা হয়েছে।