রৌমারীতে ধর্ষনের পর গ্রাম ছাড়া করালেন মা-মেয়েকে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:১৩ পিএম, ৮ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৩০ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় এক লম্পট দোকানির প্রতারণার শিকার হয়ে বসত-ভিটা এমনকি গ্রাম ছাড়তে হয়েছে মা-মেয়েকে।
অনৈতিক কর্মকান্ড! বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ছবি মোবাইলে ধারণ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া, একাধিক স্বামীর ঘর ছাড়ানোর পর বিয়ে করতে বললে সেই অশ্লীল ছবি ফেসবুকে পোষ্ট করে গ্রাম ছাড়া করালেন মা-মেয়েকে।
পার্শবর্তী গ্রামে আত্বীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বিচারের আশায় দারে দারে ঘুরছে ওই মা-মেয়ে। এ ঘটনায় উপজেলার বন্দবের ইউনিয়নে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল বুধবার (৮ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একাধিক মেয়ের জীবন কলঙ্কিত করা বাইটকামারি গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে প্রভাবশালী বাছেদ মিয়া (৩২) একই এলাকার আবু হানিফের বিবাহিত মেয়েকে বিয়ের কথা বলে পরকিয়া শুরু করে।
বাছেদ মিয়া প্রভাবশালী হওয়ায় ওই এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানায়, এর আগেও অর্থ এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এমন ঘটনা অনেক ঘটিয়েছে।
রৌমারীর বাগুয়ার চরে এক বাড়িতে আশ্রয়ে থাকা ওই ধর্ষিতা জানায়, আমার প্রথম বিয়ে হয় বাইটকামারী গ্রামের বাচ্চু মিয়ার সাথে। সেখানে সংসার চলাকালিন সময়ে বাইটকামারী বাজারে জামা-কাপড় কেনাকাটা করায় একটা ভালো সম্পর্ক হয় তার সাথে।
সেই সুযোগে একদিন বিকেলে সুযোগ বুঝে আমার শশুর বাড়িতে গিয়ে আমাকে আচমকা জাপটে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করে বাছেদ। এসময় ঘটনাটি আমার শ্বশুরের চোঁখে পরলে বাছেদ আমাকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায় সে। এই সূত্রধরে স্বামী আমাকে তালাক দেয়।
কিছুদিন পর আবার আমার বিয়ে হয় রৌমারী সদর ইউনিয়নের বাওয়ার গ্রামের সোনাউল্লাহ মিয়ার ছেলে আজগর আলীর সাথে। আজগর আলী ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকরী করার কারণে বেশী সময় আমাকে বাবার বাড়িতে থাকতে হতো।
এমতাবস্তায় বাছেদ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। আমি তার অসৎ উদ্দেশ্য বুজতে না পেরে তার প্রেমের ফাঁদে পা দেই। তার পরামর্শ মোতাবেক আমি আমার দ্বিতীয় স্বামীকে তালাক দেই।
পরে সে আমাকে বিভিন্ন বাড়িতে নিয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দৈহিক সম্পর্ক করে এবং মোবাইলে আপত্তিকর ছবি তোলে। আমি বিয়ে করার চাপ দিলে আমাদের ওই মেলামেশার ছবি ফেসবুকে দিতে চায় এবং আমার কাছ থেকে দামি মোবাইল সেটসহ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে।
আমি বিভিন্ন সময়ে আমার গহনা বিক্রি করে ৩টি মোবাইল সেট ও ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা বাছেদকে দেই। এর পরেও বাছেদ আমাকে বিয়ে না করে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে সে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে যদি বিয়ের কথা বলিস এবং আমার ইচ্ছেমত ডাকে সাড়া না দিস তাহলে তোর সাথে তোলা আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দিব বলে আমার মায়ের সামনে দিনেরপর দিন শারিরিক নির্যাতন করতে থাকে এবং ইচ্ছে হলেই ধর্ষন করে যায়।
গত ১৭/১৮ দিন আগে আমি দৈহিক সম্পর্ক করতে রাজি না হলে আপত্তিকর ছবি গুলো ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। এঘটনায় গ্রামের মানুষকে দিয়ে আমাকে অপবাদ দেয় এবং আমার দাদাকে এক ঘরে করার হুমকি দেয়। পরে আমার দাদা আমার থাকার ঘরটি ভেঙ্গে দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে গ্রাম ছাড়া করে দেয়। এখন আমরা মা মেয়ে যেখানেই আশ্রয় নেই সেখাই বাছেদ লোক পাঠিয়ে বাড়ি ওয়ালাদের হুমকি দেয়।
থানায় যান না কেন ? এক প্রশ্নের জবাবে ওই গৃহবধু বলেন, থানায় গেলে আমাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে ওই বাছেদ। এখন আমি আর মা কয় দিন এভাবে মানুষের বাড়ি বাড়ি মানবেতর জীবন কাটাব। আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে আমি এর বিচার চাই।
কথা হয় ওই নির্যাতিতার মা পিঞ্জিরা খাতুনের সাথে তিনি বলেন, আমার মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে বাছেদ। সে প্রভাবশালী হওয়ায় গ্রামবাসি বাছেদের বিচার না করে ওর কাছে মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে মেয়েকেসহ আমাকে গ্রাম ছাড়া করে দিয়েছে। থানায় অভিযোগ দিতে সাহস পাচ্ছিনা। থানায় অভিযোগ দিলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে বাছেদ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গরিবের বিচার কেউ করে না ভাই।
এবিষয়ে কথা হয় ওই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আব্দুল কাদেরের সাথে তিনি বলেন, এবিষয়ে কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। তবে শুনেছি উভয় পক্ষ আপোশ মিমাংসা করে নিয়েছে।
এব্যপারে কথা হয় রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোন্তছের বিল্লাহর সাথে তিনি জানান, এরকম কোন তথ্য বা অভিযোগ এখন পাইনি। যদি অভিযোগ আসে তাহালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।