রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যবসায়ীদের ও মিরপুরে রাইডারদের বিক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩০ এএম, ৮ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৩৭ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
স্বাস্থ্যবিধি নিন্ডিত করে শপিংমল-দোকানপাট খুলে দেয়ার দাবিতে মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ মিছিল করছেন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীরা।
আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের সামনের সড়কে এই বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। বিক্ষোভ মিছিলে ‘লকডাউন চাই না, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলা রাখতে চাই’, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানব দোকানপাট খুলব’, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে দোকানপাট খুলতে হবে’, ‘গণপরিবহন চললে মার্কেট কেন বন্ধ থাকবে’ ইত্যাদি সেøাগান দেন তারা।
গুলিস্তানে দোকানি-পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া : রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় দোকানদারদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিআরটিসি কাউন্টারের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলে দেয়ার দাবিতে বেলা ১১টার দিকে গুলিস্তান এলাকায় ঢাকা রেডিমেড গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ব্যানারে দোকানিরা ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২-এর সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এরপর তারা বিআরটিসি কাউন্টারের সামনের সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে দোকানিরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। পরে দোকানিরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যান। সিটি প্লাজার দোকানি মাহামুদুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, করোনার কারণে লকডাউনের কথা বলা হলেও কার্যত ঢাকায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক। গণপরিবহন চলছে। বইমেলা চলছে। কাঁচাবাজার খোলা। মানুষ নিয়মিত অফিস করছেন। কেবল স্বাস্থ্যবিধির কথা বলে তাদের দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে। এর প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নেমেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলে দেয়ার দাবিতে দোকানিরা ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২-এর সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। সরেজমিনে দেখা যায়, দোকানিরা যখন সড়ক অবরোধ করেন, তখন এই এলাকায় ২০ মিনিটের মতো যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করলে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হন। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে পুলিশও তাদের পাল্টা ধাওয়া দিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। ঢাকা রেডিমেড গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আবদুল মান্নান কর্মসূচির ইতি টেনে দোকানির উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি দু-এক দিনের মধ্যে দোকান খুলতে না দিলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, প্রয়োজনে নিজেরাই দোকান খুলবেন। ধুঁকে ধুঁকে মরার চেয়ে একবারে মরাই অনেক ভালো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান চালু রাখতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।
মার্কেট খুলে দেয়ার দাবি বসুন্ধরা-ইস্টার্ন প্লাজার ব্যবসায়ীদের : সরকার ঘোষিত দেশব্যাপী এক সপ্তাহের বিধিনিষেধের তৃতীয় দিন আজ বুধবার রাজধানীর বসুন্ধরা ও ইস্টার্ন প্লাজা শপিং কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খুলে দেয়ার দাবিতে সকাল থেকেই ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা বিভিন্ন মার্কেটের সামনে সমবেত হতে থাকেন। এ সময় তারা ‘স্বাস্থ্যবিধি মানব, দোকানপাট খুলব’, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে, দোকানপাট খুলতে হবে’, ‘গণপরিবহন যদি চলবে, মার্কেট কেন বন্ধ থাকবে’ ইত্যাদি নানা স্লোগান দিয়ে তাদের দাবি জানাতে থাকেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের সামনের সড়কে ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের বাধার মুখে ক্ষণিকের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ এসে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং তাদের সড়ক অবরোধ থেকে নিবৃত্ত করে। এ সময় তারা সুশৃঙ্খলভাবে ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। ইস্টার্ন প্লাজার সামনে ব্যবসায়ী-কর্মচারীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। নিউমার্কেট, গাউছিয়া, এলিফেন্ট রোড, সাইন স্টোরিসহ বিভিন্ন মার্কেটের সামনে কর্মসূচি না থাকলেও অসংখ্য দোকান মালিক ও কর্মচারীদের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
তারা বলেন, সামনে রমজান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট খুলে দেয়া হলে তারা বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবেন। গত বছর করোনাকালে এমনিতেই তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা করোনা সংক্রমণ রোধে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন বলে জানান। উল্লেখ্য, গত মার্চের শেষ দিক থেকে দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুর আকস্মিক ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় বাড়তে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে বিধিনিষেধ জারি করে। এরই অংশ হিসেবে সারাদেশে গণপরিবহনসহ জরুরি সেবার বাইরে সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিল্পকারখানা সীমিত আকারে চালু রেখে বন্ধ করা হয় অফিস-মার্কেট। যদিও এই বিধিনিষেধ আরোপের পর থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দোকান-মার্কেট খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভসহ সড়ক অবরোধ করতে দেখা গেছে। বিধিনিষেধ আরোপের দু দিনের মাথায়ই সরকার তাদের অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন আনে। জনভোগান্তি বিবেচনায় নিয়ে সিটি এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে রাজশাহীতে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ : রাজশাহী মহানগরীর আরডিএ মার্কেট ও দোকানপাট খোলার দাবিতে তৃতীয় দিনেও রাজশাহী মহানগরীতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ব্যবসায়ীরা। আজ বুধবার রাজশাহী মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজারে অবস্থান নেয় ব্যবসায়ীরা। এ সময় তারা কাপড়পট্টি খুলে দেয়ার দাবি জানান। দোকান খুলে দেয়ার দাবিতে অনেক ব্যবসায়ী ও কর্মচারী রাস্তার ওপর শুয়ে পড়েন। তার পাশেই অবস্থান নেয় জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। লকডাউনের শুরুর দিন থেকেই দোকান খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে ব্যবসায়ীরা। এছাড়া রাজশাহী জুড়েই ঢিলেঢালাভাবে পালন হচ্ছে লকডাউন।
মিরপুরে রাইডারদের বিক্ষোভ : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় সারাদেশে এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে সরকার। তবে সরকারের বিধিনিষেধের তৃতীয় দিনে দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে গণপরিবহন চালু করা হয়েছে। অথচ মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন বা রাইড শেয়ারিং চালুর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। রাইড শেয়ারিং চালুর দাবিতে রাজধানীর মিরপুরে বিক্ষোভ করেছেন যাত্রী পরিবহনকারী মোটরসাইকেল চালকরা। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর মোড়ে দেখা গেছে, ৩০ থেকে ৪০টি মোটরসাইকেল আগারগাঁওয়ের দিক থেকে মিরপুর ১০ নম্বর মোড়ে এসে থামে। তারা রাইড শেয়ারিং চালুর দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে চালকরা। পরে তারা মিরপুর-১৪ নম্বরের দিকে রওনা দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোটরসেইকেলগুলো যাওয়ার সময় টানা হর্ন বাজিয়েছে। তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে রাইড শেয়ারিং চালুর দাবি জানাচ্ছে। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে তারা মোটরসাইকেলযোগে বিক্ষোভ করছেন। চালকরা বলছেন, লকডাউনের মধ্যে গণপরিবহন চালু করা হয়েছে। অথচ রাইড শেয়ারিং বন্ধ রাখা হচ্ছে। চালকরা রাস্তায় নামলেই অহেতুক হয়রানি ও মামলা দেয়া হচ্ছে। অথচ গণপরিবহন চলছে, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও দোকানপাটও অনেক খোলা রয়েছে।
এদিকে গণপরিবহন চললেও সিএনজিতে দুজনের বেশি যাত্রী নয় এবং ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে একজন চলাচল করতে পারবে। তবে রাইড শেয়ারিং পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এমন কড়াকড়ির কথা জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোনো মোটরসাইকেল যদি রাইড শেয়ারিং করে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।