ঝিনাইদহে টিউবওয়েলে পানি নেই, সুপেয় পানির সংকট
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৩ পিএম, ৭ এপ্রিল,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:১৩ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ঝিনাইদহের মাঠ-ঘাট, বিল-ঝিল, জলাশয়, পুকুর-নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। পানি নেই নলকূপেও। ফলে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। জেলার ছয় উপজেলায় লক্ষাধীক নলকূপে বর্তমান এমন অবস্থার তৈরি হয়েছে।
এরমধ্যে শুধু শৈলকূপা উপজেলাতেই প্রায় ৩০ হাজার নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। এছাড়া জেলা সদর, কালীগঞ্জ ও মহেশপুর, শৈলকুপাসহ বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে বেশিরভাগ নলকূপে পানি উঠছে না। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় পানির উৎসগুলো ক্রমেই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে।
এদিকে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ্য পানি উত্তোলন করে ইরিধানের জমিতে সেচ দেওয়া এবং গরমের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে নলকূপগুলোর এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। এ অঞ্চলে দির্ঘদিন বৃষ্টি নেই।
এছাড়া প্রতি শুষ্ক মৌসুমে জেলার শৈলকুপায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের সেচ খালগুলিতে পানি দিয়ে থাকে কিন্তু এবার কোনো পানি না দেওয়ায় বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এমন অবস্থায় তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির।
ফলে গৃহস্থালীর কাজে যেমন অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে তেমনি গরু-ছাগল বা গৃহপালিত পশু-পাখি বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না। তবে জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বাড়িতে নলকূপ বসিয়েছেন তারা জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিলে শুষ্ক মৌসুমে পানির এমন সংকট হত না।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, জেলার নবগঙ্গা, কুমার, বেগবতি, চিত্রা, কপোতাক্ষ, গড়াইসহ বেশকিছু নদনদী আছে। একমাত্র গড়াই বাদে সবই এখন মৃত। এসব নদ-নদীর বুকে হচ্ছে ফসলের চাষ। এমন অবস্থায় ইরিধানের সেচকাজ করতে অনেকে মোটর বা শ্যালো মেশিন পাঁচ থেকে দশ ফুট মাটি খুড়ে সেচকাজ চালাচ্ছেন।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, জেলার মধ্যে শৈলকূপাতেই রয়েছে ৩৭ হাজার ৫শ নলকূপ। এই মুহূর্তে সেখানে ৩০ হাজার নলকূপ পানির অভাবে অকেজো হয়ে পড়েছে। এতে দুই লাখ মানুষের জীবনযাত্রা এখন প্রায় অচল।
শৈলকুপার মনোহরপুর, বিজুলিয়া, হিতামপুর, পৌরসভার হাবিবপুর ও কবিরপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সমস্ত অগভীর নলকূপ অকেজো। গত মাসেও কিছু নলকূপে সামান্য পানি উঠলেও চলতি এপ্রিলে এসে কোন পানি নেই। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে নলকূপের নিচে ২০/২৫ হাজার টাকা খরচ করে ইঞ্জিন চালিত মোটর বা সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপন করে নলকূপের পানি সচল রাখছে।
জেলার টিউবওয়েল ব্যবসায়ী মমিনুর রহমান জানান, তাদের শ্রমিকরা গ্রামাঞ্চলে নলকূপ বসিয়ে থাকে। সাধারণত ২০ থেকে ২৪ ফুট মাটির নিচে পানির লেয়ার বা স্তর পাওয়া যায়। কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে ৩২ থেকে ৪০ ফুট নিচে পানির লেয়ার মিলছে। তবুও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না বলে এই ব্যবসায়ী জানান।
সুপেয় পনির সংকটে জনস্বাস্থ্য প্রসঙ্গে শৈলকুপা হাসপাতালের ডাক্তার রাশেদ আল মামুন জানান, বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার না করতে পারলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে যায়। বিশেষ করে শিশুরা ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটেরপিড়াসহ নানা অসুখে পড়ে।