কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারের অবহেলায় পঙ্গুত্বের পথে রোগী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:১৩ পিএম, ১ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:০৭ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের কতিপয় ডাক্তারদের অবহেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নাহিদুল ইসলাম নাহিদ নামের এই রোগীটি এখন পঙ্গুত্বের পথে। ১ মাস ৩ দিন হাসপাতালের অর্থপেডিকস ওয়ার্ডের ৩ নম্বর বেডে শুয়ে কাতরিয়েছেন। কেউ শোনেনি তার আর্তনাদ। বারবার অপারেশনের ডেট দিয়েও অলৌকিক কারন দেখিয়ে তা করেননি ডাক্তাররা। অথচ হাসপাতালের বাইরে ডাক্তারদের পছন্দ মত ক্লিনিকে নিয়ে গেলে নাকি তাৎক্ষনিকভাবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অপারেশন করানো সম্ভব।
এমনটাই বললেন ডাক্তারদেরই নিয়োগকৃত দালালরা! অবশেষে ৩১/০৩/২০২১,তারিখে ডাক্তাররা ওই রোগীকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে দেয়।
জানা যায়, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের মশান গ্রামের শাজাহান মাষ্টারের ছেলে নাহিদুল ইসলাম নাহিদ(৫৫)। সে ঢাকায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পরিবার নিয়ে মোটর সাইকেল যোগে ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি সড়কের সৈয়দ মাছ-উদ-রুমী সেতুর উপর বিকেল ৫ টার দিকে পৌছালে বিপরীত দিক থেকে দ্রুত গতিতে একটি নসিমন ছুটে এসে ধাক্কা দেয়।
এ সময় মোটর সাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে নাহিদের স্ত্রী ও সন্তান সামান্য আহত হলেও নাহিদ পায়ে আঘাত পেয়ে মারাত্বক ভাবে আহত হলে স্থানীয়রা তাকে তাৎক্ষনিক ভাবে উদ্ধার করে ওই দিনই সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া মোটর সাইকেলটি পরে হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিজ হেফাজতে নেয়।
রোগীর স্বজনরা জানায়, ভর্তির পরের দিন রোগীর পায়ে টানা বেঁধে ইট ঝুলিয়ে দিয়ে ডাক্তার এসে বলেন, ২ সপ্তাহ পর অপারেশন করা হবে। অপারেশন করানোর কথা বলে ঢাকা থেকে ১০ হাজার টাকার বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনালেন। রোগীর সবকিছু ঠিক আছে দেখে ডাক্তাররা অপারেশনের ডেট দিলেন ২৯/০৩/২১ইং। যথারীতি ওই দিন সকাল ৮ টা থেকে রোগীকে কিছু না খেতে দিয়ে অপারেশন থিয়েটারের সামনে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত, প্রায় ৫ ঘন্টা অপেক্ষায় রেখে দেয়। পরে অপারেশন থিয়েটার থেকে একজন কমপাউন্ডার বের হয়ে এসে ডাক্তারদের উদ্ধৃত দিয়ে জানায়, নাহিদ নামের ওই রোগীর আজ অপারেশন হবেনা। উনার পূণরায় ডেট আগামী বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ ০১/০৪/২১ ইং।
অসুস্থ রোগী নাহিদকে আবার টানা হেচড়া করে বেডে নামিয়ে আনে তার স্বজনরা। এ সময় আরএমও ডা. তাপস কুমার সরকারকে ফোন দিয়ে অপারেশন না করার কারন মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে মেশিনের সাহায্যে অপারেশন করা হবে তাতে ত্রুটি দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা: আনোয়ারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, ওটা আমার দেখার বিষয় না। আমি ক্লিনিক ভিজিটে আছি, ব্যস্ততার কথা বলে তিনি লাইন কেটে দেন। এরই মধ্যে গত ৩০/০৩/২১ তারিখ সকাল ১০টার দিকে ডা. আলী হায়দার রাউন্ডে এসে রোগীর স্বজনদের জানায়, আপানাদেও রোগীর অপারেশন লাগবে না, আরো ১৪ দিন এভাবে টানা ঝুলিয়ে রাখলে পা ভাল হয়ে যাবে। রোগী নিয়ে বাড়ি চলে যান। ৩১/০৩/২১ তারিখ সকাল ১০টার দিকে ডা. আরিফুজ্জামান আরিফ রাউন্ডে এসে বলেন, নাহিদ সাহেবের এখানে আর অপারেশন হবে না। আপনারা ঢাকা পঙ্গুতে চলে যান, এ কথা বলে ডিউটিরত নার্সদের ওই রোগীকে রিলিজ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে যান।
এ কথা শুনে রোগী নাহিদ মানুষিক ভাবে ভেঙে পড়েন এবং বলেন, ডাক্তারের অবহেলা আর উদাসীনতা এর জন্য দায়ী। আমি পঙ্গু হবার পথে। আমার অপারেশন যদি এখানে সম্ভব না হয় তাহলে আমাকে ১মাস ৩ দিন কেন ভর্তি করে রেখেছে? কেন আমার সময় লেট করালো। আমাকে কেন আগেই রিলিজ দিল না? কেন আমাকে ১০ হাজার টাকা খরচ করিয়ে অপারেশন সরঞ্জাম কেনালো ? সব মিলিয়ে আমার প্রায় ৪০ হাজার টাকা ফাও খরচ। আমার সাথে কেন এই তামাশা ? আমার ভোগান্তি এবং হয়রানীর দ্বায় কে নেবে ? রোগীর সাথে সার্বক্ষনিক থাকা নাহিদের স্ত্রী বলেন, হাসপাতালের পরিবেশ এতো নোংরা এবং অপরিচ্ছন্ন তা ভাষায় বলার মতো না। এই ১মাস ৩ দিনে রোগীর সাথে আমিও অনেক কষ্ট করলাম। আমি নিজেও অসুস্থ হয়ে গেছি।
অথচ অর্থপেডিকস এর ডা. আরিফুজ্জামান আরিফ, ডা. শহিদুল্লাহ, ডা.ওবাইদুর রহমান, ডা. রিপন ও ডা. সাজুসহ অধিকাংশ ডাক্তাররা বাইরের বিভিন্ন ক্লিনিক গুলোতে ৫০/৬০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে এ ধরনের অপারেশন অহরহ করছে, কিন্তু তারা হাসপাতালে করতে চাননা। হাসপাতালে রোগী আসলেই অকারনে বিভিন্ন রকম টেস্ট দেয়া হয় এবং চলে কমিশন ব্যাণিজ্য! মানুষের জীবন নিয়ে এরা ছিনিমিনি খেলে। এমন অনেক অভিযোগ ডাক্তারদের বিরুদ্ধে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক নুুরুন নাহার বেগম বলেন, এখানে প্রতিদিন অনেক রোগীর অপারেশন হচ্ছে, তবে কোন ডাক্তার কবে কোন রোগীর অপারেশন করে সেটা আমার মনে রাখা সম্ভব না। ডাক্তাররা কোন অনিয়ম করলে সে বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন। এ দায়িত্ব আমার না।