মুরাদনগরে অপহরণের ৩৮ দিনপর শিশু লাশ, অপহরণচক্রের ৩ সদস্য আটক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১০ এএম, ৩১ মার্চ,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৫৫ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কুমিল্লার মুরাদনগরে অপহরণের পর মুক্তিপণের ৫০ লাখ টাকা না পেয়ে আবদুর রহমান নামের পাঁচ বছরের এক শিশুকে হত্যা করেছে তার আপন ফুফা। হত্যার শিকার আবদুর রহমান (৫) উপজেলার গাংগাটিয়া গ্রামের মোঃ ফারুক মিয়ার ছেলে। এঘটনায় ওই শিশুটির ফুফাসহ ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আসামীদের দেওয়া তথ্যমতে গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার বোড়ারচর এলাকা থেকে মাটি খুঁড়ে শিশুটির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
আটককৃতরা হলেন, উপজেলার বোড়াচর গ্রামের আঃ বাতেন বেপারীর ছেলে মোঃ ময়নাল (৩৪), আবু মুসার ছেলে ও নিহত শিশু আবদুর রহমানের ফুফা নাজমুল হাসান (৩০) এবং একই গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে মোঃ রবিউল হাসান (২৭)। ঘটনার ৩৮দিন পর একটি কলের সূত্র ধরে ছদ্ম বেশে পুলিশ মুক্তিপণের টাকা দিতে গিলে অপহরণ চক্রের সদস্যদের হাতে তিন পুলিশ কনস্টেবল সদস্য আহত হন। আহতরা হলেন এসআই হামিদুল ইসলাম সাইফুল ও কনস্টেবল রুবেল মিয়া। এঘটনায় এসআই সাইফুল বাদী হয়ে আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ ও পরিবারের লোকজন জানায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে নিজ ঘর থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় অপহরণ হয় শিশু আবদুর রহমান। এ সময় শিশু আবদুর রহমানের বাবার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও নিয়ে যায় অপহরণ কারীরা। এ ঘটনায় পরদিন বাবা ফারুক মিয়া মুরাদনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। অপহরণের কিছুদিন পর শিশুটির পিতা ফারুকের মোবাইল ফোন থেকে তার স্ত্রীর নাম্বারে ফোন করে ছেলের মুক্তিপণ হিসেবে পঞ্চাশ লাখ টাকা দাবি করেন অপহরণ কারীরা।
তারই জের ধরে সোমবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে মুরাদনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমানের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই হামিদুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ছদ্মবেশে মুক্তিপণের টাকা দিতে বাখরাবাদ এলাকায় অপহরণ চক্রের দেয়া ঠিকানায় যান। পরে সেখান থেকে মুক্তিপণের সর্বশেষ দাবিকৃত ৪ লাখ টাকা নিতে আসে অপহরণ কারি চক্রের সদস্য ময়নাল।
টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় এসআই হামিদুল ইসলাম ময়নালকে ধরে ফেললে অপহরণকারি চক্রের অন্য সদস্যরা লাঠি দিয়ে হামিদুল ও এসআই সাইফুলকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এসময় হামিদুল ইসলামের ডান পা ভেঙ্গে যায়। কনস্টেবল রুবেল এগিয়ে আসলে ময়নাল তার সাথে থাকা ছুরি দিয়ে পুলিশ সদস্য হামিদ ও রুবেলকে এলোপাথালী আঘাত করতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে এসআই হামিদের সাথে থাকা বন্দুক দিয়ে ময়নালের পায়ে গুলি করেন। গুলির শব্দ শুনে আরো কিছুটা দুরে থাকা মুরাদনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান ঘটনা স্থলে গিয়ে আহত তিন পুলিশ সদস্য ও অপহরণ কারি চক্রের সদস্য ময়নালকে মুরাদনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করান। পরে ময়নালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সোমবার দিবাগত রাতেই অপহরণের পর হত্যার সাথে জড়িত নাজমুল হাসান ও রবিউল হাসানকে গ্রেফতার করা হয়।
মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ সাদেকুর রহমান বলেন, অপহরণ চক্রের আটককৃত সদস্যদের আজ মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এঘটনায় এসআই সাইফুল বাদী নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের সাত ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে মুরাদনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আবিদুর রহমান বলেন, শিশু আবদুর রহমান অপহরণের ঘটনায় আমরা ময়নাল, নাজমুল হাসান ও রবিউল হাসান নামের তিন অপহরণকারীকে আটক করেছি এবং তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী শিশু আবদুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।