কুষ্টিয়া বিআরটিএ অফিস এখন ঘুষ বাণিজ্যের কার্যালয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:২৫ পিএম, ১১ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৩২ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কুষ্টিয়া বিআরটিএ অফিসে উৎকোচ ছাড়া কোন কাজ হয়না। এই অফিসকে এখন ঘুষ বাণিজ্যের কার্যালয়ে পরিনত করেছেন কুষ্টিয়া বিআরটিএ অফিসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নাহিদুজ্জামান।
গতকাল বুধবার (১০ মার্চ) সকালে কুষ্টিয়া বিআরটিএ অফিসে ঘুরে দেখা গেছে এমন সব চিত্র যা কল্পনাতিত।
রেজিস্ট্রেশন করতে উৎকোচ দিতে হবে ৫ হাজার টাকা। একটু ভুল থাকলে দিতে হবে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। সেখানে সব ঠিক থাকলেও কেন গাড়ির শোরুমের মাধ্যমে আসেননি এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।
এদিকে শোরুমের মাধ্যমে ১২৫ সিসি মটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন বাবদ দিতে হয় ১২ হাজার ৫শ টাকা। নিজে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে মোট খরচ ১০ হাজার ১শ ৫২ টাকা। শোরুমের মাধ্যমে দিলে বেশি দিতে হয় ২ হাজার ৩শ ৪৮ টাকা।
সুত্র জানায়, গাড়ি প্রতি ১৫শ টাকা ঘুষ দিতে হয় বিআরটিএ অফিসে। প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ টি গাড়ি শোরুমের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মটরসাইকেল শোরুমের ম্যানেজার জানান, তাদের শোরুম থেকে গড়ে ৮ থেকে ১০ টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের জন্য ফাইল জমা দেওয়া হয়। এখন অনলাইনে টাকা জমা হয় এবং সরাসরি ভোক্তার কাছ থেকে টাকা নিলে অনেক সময় ঝামেলায় পড়তে হয়। এই জন্য এখন শোরুমের মাধ্যমে টাকা ঘুষ নিয়ে থাকেন।
ভোক্তা সেজে এই প্রতিবেদক কুষ্টিয়া বিআরটিএ অফিসে বাজাজ ডিসকভার ১২৫ সিসি মটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে বেরিয়ে আসে দুর্নীতির চিত্র।
রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্র নিয়ে বিআরটিএ অফিসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নাহিদুজ্জামানের রুমে ফাইল দেখতে গেলে তিনি বকা দিয়ে বের করে দেয়। তিনি বলেন তোর এই ফাইল দেখার জন্য কি আমি বসে আছি?
দালাল বা শোরুমের মাধ্যমে না যাওয়ায় ফাইলের বিভিন্ন ভুল ধরে ফাইল ফেরত পাঠায় অফিস সহকারী খালেদুর রহমান।
অফিস রুম থেকে বের হতেই দালাল রিয়াজুল বলেন আপনার এই সব ঠিক করে দেব তবে এর বিনিময়ে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। একটু আকুতিমিনতি করলে তিনি কুষ্টিয়া বিআরটিএ অফিসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নাহিদুজ্জামানের রুমে জান।
সেখান থেকে বেড়িয়ে এসে তিনি বলেন ঠিক আছে আপনি ৪হাজার টাকা দিলে সব ঠিক করে দেওয়া যাবে।
কুষ্টিয়া বিআরটিএ অফিসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নাহিদুজ্জামানের বক্তব্য নিতে ফোন দেওয়া হলে তিনি বলেন আমি মটরসাইকেলে আছি। ৩০ মিনিট পর ফোন দেন। এরপর তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে এবিষয়ে কুষ্টিয়া বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এ.টি. এম জালাল উদ্দিনের বক্তব্যের জন্য একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আপনারা এসে লিখিত অভিযোগ দেন। আমি ব্যবস্থা নেব।
বিআরটিএ সহকারী পরিচালক (প্রশাসন শাখা) রিয়াজু্র রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই দুর্নীতির বিষয়ে চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।