সরকার মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতাকে হরণ করেছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:২০ এএম, ৯ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৪১ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ থেকে নারীদের বেরিয়ে এসে নেতৃত্ব দিতে হবে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার সকালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের র্যালিপূর্ব সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল এই র্যালি করে। মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা ‘নারী নির্যাতন বন্ধ কর’, ‘বিনামূল্যে বেতনে পড়ালেখার সুযোগ নারীদের জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উদ্যোগসহ বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে এই র্যালিতে অংশ নেন। কাকরাইল নাইটেঙ্গল রেস্তোরাঁ হয়ে বিএনপি কার্যালয়ে এসে র্যালি শেষ হয়।
সরকার মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতাকে হরণ করেছে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দুর্ভাগ্য এই জাতির পঞ্চাশ বছর পরেও আমরা একথা বলতে পারি না যে, আমরা স্বাধীন। আমাদের মা-বোনেরা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে না। তারাও বলতে পারে না যে, তারা স্বাধীন। এই সরকার সকলের স্বাধীনতাকে হরণ করে নিয়েছে, বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে, তাদের মৌলিক স্বাধীনতা-গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করে নিয়েছে। তখনই নারীদের অধিকার সংরক্ষণ করা যাবে যখন সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। আজকে এই দিনে আমি নারীদের আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করছি এবং এই কথা বলতে চাই সকলকে যে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ থেকে বেরিয়ে এসে অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আলোতে আসতে হবে সবাইকে এবং আপনাদেরকে নেতৃত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আজকে পুরুষ-নারী সবাই যদি আমরা সমবেতভাবে উদ্যোগ নিয়ে এই ভয়াবহ দানবকে সরানোর জন্য কাজ করি তাহলে অবশ্যই আমরা আমাদের দেশকে মুক্ত করতে পারবো, আমাদের নারীদের মুক্ত করতে পারবো। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সত্যিকার অর্থে একটা আলোকিত বাংলাদেশ আমরা উপস্থাপন করতে পারবো। বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়াকে স্মরণ করে তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া এই উপমহাদেশে বিশেষ করে বাংলাদেশে নারীদের উন্নয়নের জন্য, তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসার জন্য তিনি পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি সেই আলো জ্বালিয়েছিলেন নারীদের মধ্যে যাতে করে তারা বেরিয়ে আসেন এবং তাদের অধিকারকে আদায় করে নিতে পারেন। এরপরে যে নারী নেত্রীকে, যে রাজনীতিবিদকে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা আমি জানাতে চাই, তিনি হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যিনি এই দেশে মহিলাদের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় কাজটি করেছিলেন যে, মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ-সুবিধা করে দেয়ার জন্য বিনা বেতনে তিনি গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত পড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। এটা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিলো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার। আপনাদের অনেকের মনে থাকার কথা আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তিনিই প্রথম দেশে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয় এবং মহিলা অধিদফতর তৈরি করেছিলেন। তখনও পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে করা হয়নি, তারা অনেক দিন পরে মহিলাদের জন্য আলাদা কনভেনশন হয়েছিলো সেখানে মহিলাদের একটা স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিলো। সুতরাং যা কিছু কল্যাণকর যেমনটা অর্ধেক নারী, অর্ধেক নর। ঠিক একইভাবে নারীদের কল্যাণের জন্য যা কিছু করেছে এই বিএনপির নেতৃত্ব থেকেই সেটা করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, আজকে শুধুমাত্র নারীরা নয়, বাংলাদেশের সমগ্র মানুষ তারা নির্যাতিত, তারা বন্দি, তারা অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আজকে দেখুন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হচ্ছে, এই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমাদের যারা অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে, আমাদের ছাত্র নেতা, আমাদের লেখক, সাংবাদিক, শ্রমিক তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চলছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, পত্রিকার খবরটি আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। মাননীয় প্রধান বিচারপতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আাইনের একটি মামলার শুনানিতে তিনি বলেছেন, অনেক কথা বলেছেন। প্রধান বিচারপতি আদালতের পাঠ্যক্রমের মধ্যে এটা উনি বলতেই পারেন এবং তিনি যে পরামর্শ দিয়েছেন সেটা শিরোধার্য। কিন্তু এটি যখন গণমাধ্যমে আসে, তখন যদি কিছু পাবলিক ডিবেট তৈরি হয়। এটা তো অবশ্যই তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেছেন, সামাজিক গণমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয়া ঠিক নয়। আপনার এই পরামর্শ সঠিক। আমি এটা অস্বীকার করছি না। আবার বলছেন যে, অন্যান্য দেশেও ব্যঙ্গচিত্র হয় কিন্তু বাংলাদেশেও ব্যঙ্গ চিত্র ভিন্নরকম।
তিনি বলেন, আমি একটা প্রশ্ন রাখতে চাই মাননীয় প্রধান বিচারপতি। যখন কোনো নাগরিকের কথা বলা, কোনো নাগরিকের মুক্ত কন্ঠে আওয়াজ তোলা, কোনো নাগরিকের কোনো চিত্রাঙ্কন সে যদি করে, ব্যঙ্গচিত্র করে, তাকে যদি সরকারি হেফাজতে খুন করা হয় তাহলে সেটাতে দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পায় কিনা- এটা তো জনগণ জানতেই পারে। আপনি প্রধান বিচারপতি। আপনি যে অভিমতগুলো দিয়েছেন সেটা অবশ্যই শিরোধার্য। এই যে কথা বলেছেন যে, দেশের ইমেজ ক্ষুণ্ম হয় ব্যঙ্গচিত্র করলে। কিন্তু মানুষ খুন করলে, এই কথা বলার জন্য, এই কার্টুন আঁকার জন্য তাদেরকে যদি সরকারি হেফাজতে খুন করা হয় তাতে কী দেশের ইমেজ বাড়ে। পুলিশ বাহিনীকে ‘দলীয়করণ’ এবং পুলিশ প্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করেন রিজভী।
সভাপতির বক্তব্যে মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস বলেন, আজকে এই সরকারের আমলে আমরা নারীরা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আমাদেরকে অবশ্যই জেগে উঠতে হবে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মানে গণতন্ত্র, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মানে বাংলাদেশ। আসুন গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হলে আমাদেরকে আবার আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে। এই আন্তজাতিক নারী দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক- আসুন আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ করি। যে যুদ্ধের মাধ্যমে নারীরা অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করবে, দেশনেত্রীকে মুক্ত করবে। দেশনেত্রী মুক্ত হলে গণতন্ত্র মুক্ত হবে।
মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের পরিচালনায় র্যালিপূর্ব সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরে আরা সাফা, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, কেন্দ্রীয় নেত্রী নেওয়াজ হালিমা আরলি, নিলোফার চৌধুরী মনি ও জাহান পান্না প্রমুখ।