কুষ্টিয়ায় ছিনতাইকারী শনাক্ত হলেও আটক হয়নি এখনো
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:২৫ পিএম, ৮ মার্চ,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৪৮ এএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
আজ আবারও চুরির ঘটনা ঘটলো শহরে! দিনে দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া রাসেলের গ্যারেজ থেকে একই এলাকার মৃত শাজাহানের ছেলে সুমনের অটো রিক্সা চুরির ঘটনা ঘটেছে। এভাবে আর কত চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলে টনকনড়বে প্রশাসনের এমনটিই বলছেন সচেতন মহলের অনেকেই।
কখনো ডিবি পুলিশ আবার কখনো র্যাব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে কুষ্টিয়ায় কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান সামগ্রী। এদের টার্গেট থেকে বাদ পড়ছে না শিক্ষার্থরাও। তবে দিনের আলোয় একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনায় আতংকিত হয়ে পড়েছে কুষ্টিয়াবাসী।
গত ৪ মার্চ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় ও বিকেল ৩টায় দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনা নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে কুষ্টিয়াবাসীকে। প্রতিটি ছিনতাইয়ের ঘটনাই ঘটানো হচ্ছে প্রশাসনের সদস্য পরিচয় দিয়ে। এভাবে গত কয়েকদিনে কুষ্টিয়ায় বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও এর কোন সুরাহা করতে পারেনি আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।
অধিকাংশ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে তরুন তরুনী ও নানা কাজে শহরে আসা মানুষেরা। কৌশলে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান সামগ্রী। সম্প্রতি চক্রটি ২ সদস্যের টিমে ভাগ হয়ে মোটরসাইকেল যোগে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার শিক্ষার্থী সাঈদ আহমেদ গত ৪মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে নিজ মোটরসাইকেলে করে গিয়েছিলেন হরিপুর সংযোগ সেতু দেখতে। সেখানে পৌঁছানোর কিছুক্ষন পরেই নম্বরবিহীন একটি মোটরসাইকেলে করে দুইজন হাজির হয়ে পুলিশ পরিচয় দেয়। সাঈদের কাছে ইয়াবা আছে বলে তল্লাশি শুরু করেন তারা।
তারপর তার মোবাইল, মোটরসাইকেল ও রেজিস্ট্রেশনের কাগজ নিয়ে ওই দুইজন দুটি মোটরসাইকেলে চলে যেতে চায়। এ সময় সাঈদ পেছন থেকে লাফ দিয়ে তার মোটরসাইকেলে উঠে পড়েন। তাকে ফেলে দেয়ার জন্য ছিনতাইকারী চালকও ধাক্কা দিতে থাকে। একপর্যায়ে বাঁশগ্রাম রাজ্জাক মোড়ে মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে তাকে নামিয়ে দেয়। সুযোগ পেয়ে সাঈদ তার মোটরসাইকেলের চাবি নিয়ে দৌড়ে পাশের বাড়িতে ঢুকে চিৎকার করে লোক জড়ো করে ফেলেন। এরপর ছিনতাইকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।
এর রেশ না কাটতেই গত বৃহস্পতিবারেই বিকেলে আরেকটি ঘটনা ঘটে শহরের আড়ুয়াপাড়ায় । কলেজ শিক্ষার্থী দুই বোন ফারিয়া ইসলাম সাথী ও মারিয়া ইসলাম বীথিকে আসামি হিসেবে হাতকড়া পড়ানোর হুমকি দিয়ে তাদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট চেক করতে থাকে ছিনতাই চক্রের সদস্যরা। মোবাইলে উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে এদের থানায় নিতে গাড়ী পাঠাতে বলে। পরে মোবাইল দুটি নিয়ে চম্পট দেয় তারা।
বৃহস্পতিবারেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি ভাইরাল হয়। হরিপুর সংযোগ সেতুর নিকট থেকে মোটরসাইকেল কেড়ে নেয়ার সময় সেখানে পাশেই উপস্থিত একজন ঘটনার ছবি তুলে রেখে ছিল। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে থলের বেড়াল বেড়িয়ে আসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেপরিচয় সনাক্ত হয়ে পড়লে আত্নগোপনে চলে যায় দু'জন।
এর আগে ১ মার্চ কুষ্টিয়া শহরের পোস্ট অফিসের সামনে থেকে সিআইডি পরিচয়ে মোছাম্মৎ কণিকা নামের এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাই হয়। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় ডোরা খাতুন নামে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকার কাছ থেকে প্রশাসনের সদস্য পরিচয় দিয়ে তার মোবাইল নিয়ে যায় ছিনতাইকারী।
এদিকে একই দিনে বেলা সাড়ে ১১ টার সময় কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের সদরপুর গ্রামের নায়েব আলী শেখের ছোট মেয়ে কুষ্টিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স পুড়ুয়া বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার জ্যোতি কুমারখালির সদরপুর বাড়ি ফেরার পথে আলাউদ্দিন নগর বাসস্ট্যান্ডে নামলে র্যাব পরিচয়ে দুইজন মোটরসাইকেল আরোহী জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে ভুক্তভোগীর হাতে থাকা মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নেয়।
এর আগে গত ১৯শে ফেব্রুয়ারী এইচ এস সি পরীক্ষার্থী জেরিন ব্যক্তিগত কাজে শহরের হসপিটাল মোড়ে দাড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা এসে র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে তার ব্যাগ তল্লাশি করে। এ সময় ছিনতাইকারীরা ব্যাগে থাকা মোবাইল ফোন নিয়ে কৌশলে পালিয়ে যায়। এভাবে একেত পর এক ছিনতায়ের ঘটনা ঘটলেও ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে আটক করতে পারিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রোগ্রামে আছেন এই মুহুর্তে কোন মন্তব্য করতে পারবেন না বলে ফোন কেটে দেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি ওপারেশন মামুন উর রশিদ মামুন জানান, কুষ্টিয়ায় ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্তে আমরা অনেকটা অগ্রসর হয়েছি। ঘটনায় জড়িতরা এলাকা ছেড়ে গাঢাকা দিয়েছে। তবে খুব দ্রুত তাদের আটকের মাধ্যমে সু-খবর দিতে পারবো।