সিরাজগঞ্জে চুরি হওয়া শিশুদের উদ্ধার : এক শিশু মৃত, আটক ৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২৫ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৪০ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
সিরাজগঞ্জে পাঁচদিনের ব্যবধানে হাসপাতাল থেকে চুরি যাওয়া এক শিশুকে জীবিত অবস্থায় এবং অপর শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় কল্পনা খাতুন (২৫) নামে এক নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও আরও পাঁচ নারীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সলঙ্গা থানাধীন আলোকদিয়া এলাকার একটি বাড়ি থেকে জীবিত ও মৃত শিশু দু'টিকে উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার হওয়া কল্পনা আলোকদিয়া গ্রামের সাদ্দামের স্ত্রী।নিহত শিশু মাহিম উল্লাপাড়া উপজেলার ভাদালিয়া গ্রামের চয়ন ইসলাম ও মঞ্জুয়ারা দম্পত্তির সন্তান।
জীবিত শিশু সামিউল পাবনা জেলার চাটমোহর থানার স্থল গ্রামের আব্দুল মাজেদ ও সবিতা খাতুন দম্পত্তির ছেলে।
সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী জানান, শনিবার দুপুরের দিকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকার শাখাওয়াত এইচ মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে একদিন বয়সী নবজাতক শিশু চুরি যাওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ ও ঘটনার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনার পর কিছুটা নিশ্চিত হয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আলোকদিয়া গ্রামের সাদ্দাম হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সেখানে নবজাতক শিশুটিকে সাদ্দামের স্ত্রী কল্পনার কোলে দেখতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়। এরপর বাড়ি তল্লাশি করে ধানের গোলার মধ্যে মাহিম নামে অপর শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ২৯ দিন বয়সী ওই শিশুটি ২৩ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতাল থেকে চুরি হয়।এ সময় বাড়ির মালিক কল্পনাকে গ্রেফতার করা হয় এবং আশপাশে অবস্থান করা আরও পাঁচজন নারীকে আটক করে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশ সুপার মো. হাসিবুল আলম বিপিএম বলেন, আমরা দু'টি শিশুর একটিকে মৃত অবস্থায় অপরটি জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা মাহিম নামের ২৯ দিন বয়সী একটি শিশু চুরি ঘটনা ঘটে। এর ঠিক পাঁচ দিনের মাথায় শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) হাটিকুমরুল গোলচত্বরের শাখাওয়াত এইচ মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে সামিউল নামে একদিন বয়সী নবজাতক শিশুটি চুরি হয়।
পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলন করে জানান, কোন সংবদ্ধ চক্র নয় বিয়ের ৭ বছর পরেও সন্তান না হওয়ায় পারিবারিক সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়ার জন্যই আলপনা বেগম নামে গৃহবধু শিশু চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম।
তিনি আরো বলেন সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে শিশু চুরির ঘটনায় হাসপাতালের পরিছন্ন কর্মীরা সহযোগীতা করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য মিলেছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে শিশু মাহিম কে চুরি করে পল্লী চিকিৎসক কে দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে শিশু মাহিম মারা গেলে দুপুরে হাটিকুমরুলের সাখাওয়াত এইচ মেমোরিয়াল হাসপাতাল থেকে সদ্য ভূমিষ্ঠ আরেক টি শিশু সামিউল কে চুরি করে আনে আলপনা। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ সলঙ্গা থানার আলোকদিয়া গ্রামে অভিযান করে শিশু সামিউল কে জীবিত এবং শিশু মাহিম কে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।
এঘটনায় অলপনা বেগম, পল্লী চিকিৎসকসহ তার আরো ৬ স্বজন কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এঘটনায় সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের ২ পরিছন্ন কর্মীকে পুলিশ হেফাযতে নেয়া হয়েছে তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম উল্লেখ করেনি পুলিশ।