লাশ নিয়ে অপরাজনীতি রুখে দিলেন এলাকাবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:২৩ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৩৬ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
হায়রে এলাকার অপ-রাজনীতি! কিছু রাজনীতিবিদ বিভিন্ন সময় হিংসা-প্রতিহিংসায় একে অপরের বিরুদ্ধাচরণ করেন দেখেছি। কিন্তু এক স্কুল ছাত্র শিশুর লাশ নিয়ে কতিপয় ব্যক্তিদের অপরাজনীতি দেখে অনেকেই আজ ঘৃণা জানানোর ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন। এ ঘটনায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় সাধারণ মানুষের মাঝে।
ঘটনা গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের কবুরহাট (কদমতল) গ্রামের সোহেলের সন্তান মেধাবী ছাত্র হামজা বাইসাইকেল যোগে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় কবুরহাট হাই স্কুলের সামনে পৌঁছালে বটতৈল থেকে আসা বেপরোয়া ট্রাক তাকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে হামজার মাথায় প্রচন্ড আঘাত লেগে রক্তাত্ব হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে।
এ সময় স্থানীয় কয়েকজন হামজাকে উদ্ধার করে আশংকাজনক অবস্থায় কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ভর্তির কিছুক্ষনের মধ্যে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। তার এ মৃত্যু সংবাদে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মানবিকতায় শোক সন্তাপ্ত পরিবারে সমবেদনা জানাতে আসেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ অনেকেই।
তারা ছুটে যান হাসপাতালে। লাশের কাটাছেড়া যেন না হয় সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসকসহ কয়েকজন কর্মকর্তার অনুমতিক্রমে প্রয়য়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে যান থানায়। থানা থেকে অনুমতিও দেয়া হয় হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে যেতে। পরে স্বজনরা হাসপাতল মর্গ থেকে লাশ বের করতে গেলে পুলিশ এসে জানান, আরো কিছু কাজ বাকী আছে কিছুক্ষন পরে লাশ ছাড়া হবে।
এদিকে মৃত্যু সংবাদ পেয়ে সন্ধ্যার আগেই আত্নীয় স্বজন সবাই জানাজার প্রস্তুতি নিয়ে চলে আসেন হামজার বাড়িতে। কবর খুঁড়ে সবাই লাশ আসার অপেক্ষা করতে থাকেন। ওদিকে লাশ নিতে যাওয়া স্বজনরা হাসপাতাল থানায় দফায় দফায় দৌড়াদৌড়ি করতে থাকেন। শেষমেশ থানা থেকে বলা হয় বেশ রাত হয়েছে এত রাতে লাশ দেয়া যাবে না, সকালে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
রাতভর অপেক্ষা শেষে সকালে আবারও লাশ নিতে যান স্বজনরা। যাওয়ার পর তাদের কাছে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর যেতে থাকে যে, অন্যদের সাথে নিয়ে কেন থানায় যাওয়া হয়েছে এবং ইউনিয়নের কতিপয় নেতার কাছে গিয়ে লাশ নিয়ে আসার বিষয়ে কেন তাদের অনুরোধ করা হয়নি। এতে বেজার হয়েছেন এবং ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ কিভাবে নিয়ে আসা হয় তাও দেখবেন বলে তাদের জানিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে পরেরদিন থানায় গিয়েও হতাশ হন স্বজনরা। থানা থেকে বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয় এলাকার কতিপয় নেতাদের উল্টাপাল্টা ফোন আসছে লাশ যেন ময়না তদন্ত ছাড়া হস্তান্তর করা না হয়। এর পর লাশ হস্তান্তর নিয়েই শুরু হয় নতুন রাজনীতি ! দুপক্ষের টানাটানিতে দুপুর গড়িয়ে যেতে থাকে । লাশ পড়ে থাকে হাসপাতালের মর্গে। এ খবরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার সাধারণ মানুষ।
দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে কবুরহাট, কদমতলা, মাদ্রাসাপাড়ার শত শত সাধারণ নারী-পুরুষ নেমে আসেন রাস্তায়। তারা বটতৈল পোড়াদহ সড়কের কদমতলা মোড়ে রাস্তার উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে। সকলের একই দাবী লাশ না আসা পর্যন্ত তারা রাস্তা থেকে সরবে না। এ সময় রাস্তার দুপাশে শত শত যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা।
তবে এ ঘটনারর বিস্তারিত শোনার পর কিছু যাত্রীও এ অবরোধে অংশ নেন। এ সংবাদ মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। পরে এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে আধা ঘন্টার মধ্যেই ময়না তদন্ত ছাড়াই হামজার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে পরাজিত হয় এলাকার ওই কতিপয় নেতাদের অপরাজনীতি।