মানুষ হত্যার কৌশল শেখানোর ছলে হত্যা করা হয় ভ্যান চালক রেজাউলকে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪৪ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১১:১২ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
মানুষ হত্যার কৌশল শেখানোর ছলে জমি নিয়ে বিরোধ থাকা ভ্যানচালক রেজাউলকে হত্যা করা হয়। মোবাইল ফোনে রেজাউলকে ডেকে এনে কীভাবে মানুষ হত্যা করতে হয় তা দেখাতে প্রথমেই তার হাত ও মুখ বেঁধে ফেলে রঞ্জিত নামে এক খুনি। হাত বাধার পর গামছা গলায় পেঁচিয়ে রেজাউলকে মাটিতে ফেলেও দেয় রঞ্জিত। বাঁচার জন্য রেজাউল হাত-পা ছুড়লে আরিফ ও মঞ্জুর রেজাউলের ২ পা চেপে ধরে। এ অবস্থায় আকতার ধারালো ছুরি দিয়ে রেজাউলের গলা কেটে হত্যা করে। মৃত নিশ্চিত করে গামছা খুলে মাটিতে পুঁতে দেয় আরিফ। রেজাউলের মোবাইল নেয় আকতার। পাশের পুকুর থেকে রক্ত ধুয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে সবাই। হত্যার এই লোমহর্ষক বর্ণনা উঠে এসেছে ঘাতক রাজু, আরিফ ও মঞ্জুর স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দিতে। এ ঘটনার পরদিন সকালে রেজাউলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যার ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে বশির উদ্দিন, একই গ্রামের রাজ্জাক হোসেনের ছেলে আবুল কাশেম ও আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে কবির হোসেনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে ঝিনাইদহ সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঝিনাইদহ সদর থানার তৎকালীন এসআই নিরব হোসেন বশিরসহ হত্যা মিশনে অংশ নেয়া ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এদের মধ্যে বশির বাদে অন্যদের গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রঞ্জিত বাদে রাজু, আরিফ ও মঞ্জুর দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এরপরই মামলাটির মোড় নেয় অন্যদিকে।
মামলার বাদী নিহত রেজাউলের স্ত্রী আনজিরা খাতুন ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ২০১২ সালের ৩০ জুন আপস মীমাংসা করে, যা দেখিয়ে হত্যার প্রধান পরিকল্পনাকারী বশির জামিন পায়। জামিনে মুক্ত হয়ে হত্যাকারী রঞ্জিতও ঢাকায় পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর মামলাটি ঝিমিয়ে পড়লে নিহতের ভাই আদিল উদ্দিন আদালতে চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দেন। আদালতের নির্দেশে তদন্তভার যায় সিআইডি পুলিশের হাতে। সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ন কবীর ২০১৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর ওই ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আবারো আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। নিহতের ভাই আদিল উদ্দিন বলেন, বাদী লিখিত এজাহারে নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। পরবর্তীতে সাক্ষ্য প্রদানের সময় আদালতে তাদের নাম এড়িয়ে গেছেন। আমার ভাইয়ের স্ত্রী টাকা নিয়ে হত্যা মামলাটির অপমৃত্যু ঘটিয়েছে বলে নোটারী পাবলিকে দেয়া তার শপথনামায় প্রমাণিত হয়েছে। যে কারণে আমরা বিচার পাচ্ছি না। থানায় একাধিকবার জীবননাশের আশংকা করে জিডি ও মামলা দায়েরের পরও বশির ও তার সহযোগীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি আমার ভাই ভ্যানচালক রেজাউল। তারা হত্যা মিশন বাস্তবায়ন করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। এখন বাদীকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে আলোচিত রেজাউল হত্যা মামলাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। মামলাটি বেচাকেনা করায় আদিল উদ্দীন আদালতের মাধ্যমে মামলার বাদীর পরিবর্তন চান।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী আনজিরা খাতুনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। আমি কোন আপস করিনি তবে আসামিদের সাথে কথাবার্তা চলছে। বিচারাধীন এ মামলার পিপি অ্যাড. ইসমাইল হোসেন বলেন, এখনও ডাক্তার, ম্যাজিস্ট্রেট ও কেসের আইও এই তিনজনের সাক্ষী বাকি আছে। সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলে রায় হবে। দেরিতে হলেও আইনি জটিলতা কাটিয়ে এ মামলার রায়ে প্রমাণিত হত্যাকারীর শাস্তি হবে বলে রাষ্ট্রপক্ষ মনে করেন। উল্লেখ্য, ঝিনাইদহ পৌরসভার মুরারীদহ গ্রামের মৃত গোলাম আকবরের ছেলে রেজাউল ও তার বড় ভাই আদিল উদ্দিনের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল একই এলাকার মৃত রহিম বক্সের ছেলে বশির উদ্দিনের। এ ঘটনার জের ধরে ২০১০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোবাইলে রেজাউলকে ডেকে নিয়ে ক্যাডেট কলেজের পেছনে একটি বাগানে হত্যা করা হয়।