সিদ্ধিরগঞ্জের ক্রাইম পয়েন্ট ও অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানা নাসিকের ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২৩ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৩৩ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
কথায় আছে ‘গায়ে মানে না আপনি মোড়ল’ ঠিক তেমনই ঘটনা নাসিকের সিদ্ধিরগঞ্জে ১নং ওয়ার্ডে কথিত যুবলীগের প্রধান কার্যালয়। মিজমিজি টিসি রোড এলাকায় চান টাওয়ারের পাশে একটি বিল্ডিংয়ে কার্যালয়টি গড়ে তোলা হয়েছে। কার্যালয়ের ভেতর স্থানীয় এমপি, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার শীর্ষ আওয়ামীলীগ নেতা ও যুবলীগ নেতার ছবি শোভা পাচ্ছে। অথচ নেতারা জানেন না এই কার্যালয়ের কথা। নেই কোন দলীয় অনুমোদনও। মজার বিষয় হলো এই কার্যালয়টি বানিয়েছেন মাদক ব্যবসায়িসহ অপরাধী চক্রের শেল্টারদাতা টাইগার ফারুক ওরফে চিকনা ফারুক। সে নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিতে সব ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এই কার্যালয়ে বসে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সকল অপকর্মের শলাপরামর্শ হয় এখানে। অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবেও এই কার্যালয়কে চিহ্নিত করেছে এলাকাবাসী। তাছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জের একটি ক্রাইম পয়েন্ট হয়ে উঠেছে কথিত কার্যালয়টি।
এদিকে স্থানীয় প্রশাসন যাতে কোন ঝামেলা না করে এই জন্য নেতাদের ছবি লাগিয়ে রাখা হয়েছে কথিত যুবলীগের এই কার্যালয়ে। শুধু তাই নয় মোটা অংকের টাকা খরচ করে আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে কার্যালয়ের ভেতরে লাগিয়ে রেখেছে চতুর চিকনা ফারুক। ইতিমধ্যে চিকনা ফারুকের ভাই পেশাদার ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ি জসিমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। যার নিরাপদ আস্তানা ছিল এই কার্যালয়। অপকর্ম করে এই কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে জসিম। অল্প কয়েকদিন জেলে থাকার পর তাকে জামিনে ছাড়িয়ে আনে চিকনা ফারুক। একাধিক মামলার আসামি, পেশাধার ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ি জসিম জামিনে এসেই ধর, মার, ছাড়, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন, কে, কি করলো এতদিন এ নিয়ে শুরু হয়েছে এলাকায় নানান ধরনের কাহিনী। ওদিকে মাদক ব্যবসায়ী জসিম নেতা কর্মীদের ফুলের মালা পড়িয়ে যুবলীগ পরিচয় দিয়ে এলাকায় গড়ে তুলেছে অপরাধী এক বাহিনী।
অন্যদিকে মাদক ব্যবসায়ীদের লিডার শেল্টারদাতা যুবলীগ পরিচয়দানকারী নিজেকে জাহির করতে বানিয়েছেন ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের প্রধান কার্যালয়। জানেন না যুবলীগের কোন নেতাকর্মীরা। তবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা জুড়ে কোন ওয়ার্ডেও নেই কোন যুবলীগের কমিটি, রহস্যজনক কারণে তারা যুলীগের অফিস বানিয়ে করছে এখানে নানান ধরনের ধান্দাবাজি। তাদের অফিসে ঢুকলে দেখা যায় এমন কোন নেতা নাই যে তাদের সাথে ছবি টানানো নাই। তবে দেখতে ঠিক চিড়িয়া খানার মতোই, এখানে চলে তাদের বিচার-নালিশসহ অপকর্মের শলাপরামর্শ।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে মিজমিজি টিসি রোড এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিমের বাড়ির সামনের গলি থেকে গ্রেপ্তার হয় মাদক ব্যবসায়ী জসিম। সেই স্থানটি হলো জসিমের ভাই টাইগার ফারুকের যে কার্যালয়টি করেছে তারই সামনে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দলের নামে তারা করে যাচ্ছে নানা অপকর্ম অপরাধ। তৃণমুল শীর্ষ নেতা কর্মীদের প্রতি দৃস্টি আকর্ষণ করার জন্য আহবান করে কঠোর শাস্তির দাবীতে জানিয়েছেন দলীয় নেতা-কর্মী ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা।
সিদ্ধিরগঞ্জের নামধারী যুবলীগ নেতা টাইগার ফারুক ওরফে চিকনা ফারুক ও জুয়েলের ভাই জসিম (৩৫) কে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। গত সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত আড়াইটার দিকে মিজমিজি টিসি রোড এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল করিমের বাড়ির সামনের গলি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে বিদেশী একটি চাকু (সুইচ গিয়ার) ও ছিনতাইকৃত দুটি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করা হয়। রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের আদালত জসিমকে ২দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরআগে পুলিশ ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করে। শুনানী শেষে আদালত ২দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গ্রেপ্তারকৃত জসিম, নামধারী যুবলীগ নেতা টাইগার ফারুক ওরফে চিকনা ফারুক এবং মোঃ জুয়েল হোসেন এর ভাই, আদমজী জুটমিলের শ্রমিক নেতা আবু সাঈদের ছেলে। বর্তমানে তারা সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন নাসিক ১নং ওয়ার্ড এর মিজমিজি পাগলাবাড়ি এলাকায় প্রায় ৫ কাটা জমির উপর ৫তলা বাড়ী করে বীরদর্পে দিন কাটাচ্ছে।
এদিকে তাদের ছোট ভাই জুয়েল তার ভাই নামধারী যুবলীগ নেতা টাইগার ফারুকের দাপটে মিজিমিজি মতিন হুজুরের বাড়ীর দিকে জায়গা নিয়ে বালু ভরাটের কাজ করছে। আইয়েশেই করছে বিএনপির রাজনীতি। আর জসিম চালাচ্ছে মাদক, চুরি, ছিনতাই, মারামারী, নারী নিয়ে ফূর্তি। ফারুকের শেল্টারে তার ভাই জসিম সিদ্ধিরগঞ্জের পাড়া-মহল্লায় ও অলিতে-গলিতে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ কবরস্থানের পিছনে, সিআই খোলা বৌ-বাজার, টেরা মার্কেট, আল আমিন নগর, মজিব নগর, কাঠেরপুল, সাইলোরোড এর চৌরাবাড়ী পাম্প সংলগ্ন, পুকুরপার, গেরেজ, সাইলোগেট, নদীর পাড়, আজিবপুর রেলনাইন, মিজমিজি পাগলাবাড়িসহ অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মাদক ব্যবসায়িরা। এরা হলো, চাঁন বাদশা (চাঁন্দু), তার স্ত্রী সুমি, কতিথ সোর্স, ডাকাতী মামলার আসামী ও বর্তমান মাদক ব্যাবসায়ী ইলিয়াস, শুভ, বাবু, মিলন, করিম, ইমরান, পলাশ, সোয়াদ, খোকন, মানিক, দেলুসহ সিন্ডিকেটের আরো অনেকে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ মাদকদ্রব্যসহ একাধিকবার গ্রেফতারও করেছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলাও রয়েছে। যতবারই তারা গ্রেফতার হয়েছে কিছুদিন পর আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে অভিনব কৌশলে আবারো মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কথিত কিছু সোর্সসহ এদের একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে এ মাদক ব্যবসাটি চালিয়ে আসছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানায়। তারা শক্তিশালী একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। যার ফলে ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ, বৃদ্ধি পাচ্ছে এলাকায় মারামারী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ছিনতাই, চুরি, ধর্ষণ সামাজিক অপরাধ। তবে রহস্যজনক কারণে স্থানীয় কিছু বড় ভাইয়েরা দেখলেও সুবিধা পেয়ে দেখে না, যেমন, তাদের কথা শুনা, ডাক দিলেই পাওয়া যায়, মিটিং, মিছিল, রাস্তায় ফিটিং,বড় ভাইদের সেবনের জন্য ফ্রি পাওয়া, মানতি খাওয়া। এই অপরাধী চক্রকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য জেলা পুলিশ সুপার, র্যাব-১১ ও স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান, এরা মনগড়া যুবলীগ। আমার জানামতে এ ধরণের কার্যালয় এবং কমিটি নেই। তৎকালীন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি বিএম আমির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক রমজান ভাই এবং সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের পক্ষে সভাপতি হিসেবে আমি ও সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেনের স্বাক্ষরে সিদ্ধিরগঞ্জের ৭টি ওয়ার্ডে যুবলীগের কমিটি দিয়েছিলাম। এর পরে আর কোন কমিটি হয়নি। এগুলো বর্তমানেও বলবৎ রয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ওয়ার্ডে যুবলীগের কার্যালয়ে সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভুঁইয়া সাজনুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জ শহরের ৯টি ওয়ার্ডে আমাদের যুবলীগের ওয়ার্ড কমিটি আছে। এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দরের ১৮টি ওয়ার্ডে যুবলীগের কোন কমিটি নাই।