চোখ থাকা সত্ত্বেও গাড়ি চালক নিচ্ছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর ভাতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৩ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:২১ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
কুষ্টিয়ার মিরপুরের বারুইপাড়া ইউনিয়নের রমজান আলীর ছেলে মোবারক হোসেন। পেশায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলির চালক। দীর্ঘ ০৮ বছর ধরে নিয়মিতভাবে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ি চালান মোবারক। তবে, চোখ থাকা সত্ত্বেও দিব্যি ১ বছর ধরে তিনি নিচ্ছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর ভাতা।
এমনটাই চিত্র দেশে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে। এরই ধারাবাহিকতায় কুষ্টিয়ার মিরপুরেও সুস্থ-স্বচ্ছল মানুষরাও পাচ্ছেন প্রতিবন্ধী ভাতা। দায়িত্বপ্রাপ্তদের যোগসাজসে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের স্বজনপ্রীতির কারণে এ অনিয়ম, অভিযোগ সমাজসেবা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের।
যারা দুস্থ ও কাজকর্ম করতে পারেন না, তাদেরই দুস্থ ভাতা পাওয়ার কথা। যারা প্রকৃত প্রতিবন্ধী, তারা প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার হকদার। এটাই নিয়ম। কিন্তু প্রায়ই এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে থাকে।
এবিষয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগকারী মোবারক হোসেনর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি বিশেষ কিছু জানেন না। বাড়ির কেউ তার নামে টাকা তোলেন কিনা সেটা বাড়ির লোকেরা ভালো বলতে পারবেন।
এছাড়া আমকাঠালিয়া গ্রামের আসাদুলের ছেলে থাকেন বিদেশে। শারীরিকভাবে সুস্থ আসাদুল বসবাস করেন পাকাবাড়িতে। তারপরও নিয়মিত তুলচ্ছেন প্রতিবন্ধী ভাতা। প্রতিবন্ধী ভাতার কথা জানতে চাইলে আসাদুল বলেন, আমি নিজে তাদের বলেছি একটা কার্ড করে দেয়ার কথ। তারা তখন বলেছে কত মানুষ তো এমনটা করে, কাগজ পত্র দিয়েন আপনাকেও একটা করে দিবোনি।
শুধু মোবারক আর আসাদুলই নন মিরপুরে এমন কয়েকশ সুস্থ ব্যক্তি পাচ্ছেন নিয়মিত এই প্রতিবন্ধী ভাতা। আর এই স্থানীয় অনৈতিক কাজটি জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজসেই এ অনিয়ম হচ্ছে বলে দাবি সমাজসেবা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের।
এ অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জামসেদ আলী বলেন, এই তালিকা ইউনিয়ন কমিটি থেকে আনা হয়। তাই এই বিষয়ে কমিটি ভালো বলতে পারবে। এ বিষয়ে স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের যোগসাজোস থাকতে পারে। তবে আমাদের জানা মতে যদি এমন কেউ থাকে তার নাম বাতিল করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বাড়ুইপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাইদার আলী জানান, সমাজসেবা থেকে বলার পরে আমরা চকিদার দিয়ে এলাকা থেকে লোক ডাকায়ে আনি। আর ওনারা যাচাই বাছাই করে নামের তালিকা করেছে। এখানে আমাদের কোন হাত নেই।
তবে এ অভিযোগ খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস বলেন, অনেকে আছে প্রতিবন্ধী হওয়ার অভিনয় করে। এগুলো আসলে সবসময় সঠিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়না। এটা আসলে খুবই অনাকাঙ্খিত একটি বিষয়।
আমরা আসলে দুস্থ এই মানুষ গুলোকে একটা ভাতার আওতায় আনার চেষ্টা করছি, সেখানে এটাকে ভিত্তি করে যদি এই ধরনের অনৈতিক কাজ করা হয় সেটি অবশ্যই অনাকাঙ্খিত বলেও মন্তব্য করেন এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য কুষ্টিয়ার মিরপুরের ১৩ ইউনিয়ন এবং এক পৌরসভায় ৫ হাজারের বেশি মানুষ বছরে ৯ হাজার টাকা করে সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা পান। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অনিয়ম–দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ বেশ পুরোনো। এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে বিস্তর। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি