যমুনা সার কারখানায় নতুন বস্তায় জমাট বাঁধা পঁচা সার, কৃষকদের উৎকন্ঠা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:২৯ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:১৫ এএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং দেশের সর্ববৃহৎ দানাদার ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জামালপুরের যমুনা সার কারখানায় নতুন বস্তায় জমাট বাঁধা পচাঁ সার ভর্তি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কারখানার জেটি ঘাটে কড়া নিরাপত্তায় গত বেশ কয়েকদিন যাবৎ পচাঁ ছেড়া পুরনো বস্তার সার কাফকোর নতুন বস্তায় স্থানান্তর করার ঘটনা ঘটছে। এতে করে ডিলার, সার ব্যবসায়ী এবং এলাকার কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।
কারখানার ডিলার, সার ব্যবসায়ী ও কৃষকদের অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, গত ১৯৯১ ইং সালে প্রতিষ্ঠিত যমুনা সারকারখানায় দৈনিক ১৭০০ মেঃ টন দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদনে সক্ষম। এ কারখানার সার দেশের উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলাসহ মোট ১৯ জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। সারের গুণগতমান অন্যান্য সারের তুলনায় ভাল মানের হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে ইউরিয়ার চাহিদা আকাশচুম্বী।
কারখানায় বিভিন্ন সময়ের যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে সারের উৎপাদন বন্ধ হলেও বাৎসরিক উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে থাকে। তারপরও কৃষকদের চাহিদার নাম করে বিদেশ হতে সার আমদানী করে সরকার। আমদানী করা সার জমাটবাধা, পচাঁ, নিম্নমানের সার নিয়ে অনেক প্রশ্ন দেখা দেয়। যমুনা সার কারখানার হাজার হাজার মেট্টিন টন বিদেশ থেকে আমদানি করা সার দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে পড়ে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে তার গুনাগুন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
দেশের কৃষকরা আমদানী করা সার জমিতে ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করায় ডিলাররা লোকশানের মুখে পড়ে বলে অভিযোগ রয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ যমুনায় উৎপাদিত সারের সাথে বিশেষ সমোঝতায় ডিলারদের বিদেশ থেকে আমদানি করা জমাট বাঁধা সার সরবরাহ করে আসছে। কারখানার প্রশাসন আমদানী করা জমাটবাধা পচাঁ সার সরবরাহ জোর করে চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে গত ৭ ফেব্রুয়ারী কারখানার কমার্শিয়াল এরিয়ার ডিলারগন সার পরিবহন বন্ধ রাখে।
যমুনা সার কারখানার হাজার হাজার মেট্টিন টন সার দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে পড়ে রোদ-বৃষ্টিতে তার গুনাগুন নষ্ট হয়ে গিয়ে পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে। বস্তা গুলো ছিড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিসিআইসির কাফকোর নতুন বস্তায় জমাট বাঁধা, পচাঁ, নিম্নমানের সার পূনরায় বস্তাবন্দি করা হচ্ছে। বেশ কয়েকদিন যাবৎ কারখানার জেটি ঘাটের মাঠে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে পচাঁ ছেড়া পুরনো বস্তার সার পরিত্যাক্ত ঘোষনা না করে কাফকোর নতুন বস্তায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। ১৫/২০ জন শ্রমিক এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে বলে জানাগেছে। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ পুরনো ছেড়া বস্তা গুলো কাফকোর নতুন বস্তায় ভরা হচ্ছে বলে স্বীকার করেন।
এদিকে গত ১২ ফেব্রুয়ারী রাতে ইউরিয়া প্লান্টে ত্রুটি দেখা দেয়ায় যমুনা সার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। যান্ত্রিক ত্রুটি মেরামত করতে ১০/১২ দিন সময় লাগবে বলে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুদীপ মজুমদার সাংবাদিকদের জানান। তবে পিক আওয়ারে কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে সার উৎপাদন বন্ধ থাকার বিষয়টি সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। কারন গত বছরে দীর্ঘদিন কারখানা ওভারহলিং বা মেরামতের নামে উৎপাদন বন্ধ ছিল বলে স্থানীয়রা জানান।
কারখানা সূত্রে জানাগেছে, ২০২১ অর্থ বছরে যমুনা সারকারখানার উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ৩ লাখ ২০ হাজার মেঃ টন। এখন পর্যন্ত ২লাখ ২হাজার মেঃ টন সার উৎপাদন করা হয়েছে। বর্তমানে কারখানায় দৈনিক ১৭০০ মেঃ টন এর স্থলে ১২০০ থেকে ১৫০০ মেঃ টন সার উৎপাদন হচ্ছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলার ভাটারা ইউপির হরিপুর গ্রামের কৃষক গিয়াস উদ্দিন, কামরাবাদের কৃষক মিনহাজ, মাদারগঞ্জের লোটাবর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর, পৌরসভার কৃষক মোঃ শাহজাহান, চেচিয়াবাধা গ্রামের কৃষক ফজলুল হক, বেলটিয়ার স্বপনসহ অনেক কৃষক বিষয়টি নতুন বোতলে পুরনো মদের তুলনা করেছেন। তারা বলেন, এমনিতেই দিনদিন আমাদের কৃষি জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। গুনগত মানহীন সার প্রয়োগ করলে মাটির গুনাগুন আরও খারাপ হবে। নতুন বস্তা থেকে নষ্ট সার দেয়াটা কৃষকদের সাথে প্রতারনা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে তারা দাবী করেন।
সার ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন, মোস্তফা, আলামিনসহ বেশ কয়েকজন বলেন, আমদানিকৃত সার নিয়ে খুব সমস্যায় রয়েছি। কৃষকদের কাছে জোর করে বিক্রী করতে হয়। এতে করে লোকসানের মুখে পড়েছি।
সরিষাবাড়ী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বলেন, রোদ-বৃষ্টিতে সারের বস্তা পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেলে তার গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি সেই সার জমিতে প্রয়োগ করলে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তারাকান্দি ট্রাক ও ট্যাংলড়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম মানিক জানান, আমদানিকৃত সার জমাটবাধাঁ ও গলিত, যা কৃষকের কাছে বিক্রি অযোগ্য। প্রত্যেক ডিলারের গুদামে আমদানিকৃত সার আটকা পড়ে গেছে। ফলে প্রতি ট্রাকে ১৬ হাজার টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে যমুনা সার কারখানার বিক্রয় বিভাগের ইনচার্জ ওয়ায়েছুর রহমান বলেন, কারখানায় বাইরে থেকে আমদানিকৃত ২১ হাজার মে. টন ও যমুনার উৎপাদিত ৬২ হাজার মে. টন সার বর্তমানে মজুদ রয়েছে।