জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে নীরব ছিলেন না-আমীর খসরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫১ এএম, ১৬ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১০:২২ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো, দিনকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বিদ্রোহ চট্টগ্রাম থেকেই হয়েছে। তাই চট্টগ্রামের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধপূর্ব এবং যুদ্ধকালীন সময়ে অবিস্মরণীয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে নীরব ছিলেন না। এদেশের সেনাবাহিনীকে সংগঠিত করে তিনি পাক সেনাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছেন চট্টগ্রাম থেকেই। পাকিস্তান ভোটাধিকার হরণ করায়, সেই দিন এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা ভোটাধিকার হরণের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে সম্মুখযুদ্ধ করেছিলেন। আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে গিয়েও ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে এদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে নির্লজ্জভাবে।
আজ দুপুরে চট্টগ্রাম ক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের উদ্যোগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন মিডিয়া কমিটির আয়োজনে চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন মিডিয়া কমিটির আহবায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরো বলেছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার পরের সরকারের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে দেশকে বের করে নিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শহীদ জিয়ার অবদান এদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
তিনি বলেন, রাজনীতিবিদরা যখন ইতিহাস রচনা করেন, তখন সেই ইতিহাস হয় প্রপাগান্ডা। একমাত্র ইতিহাসবিদরাই সত্যিকারের ইতিহাস রচনা করতে পারেন। তাই আমি মনে করি যারা ইতিহাসবিদ তারাই প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম সত্যিকারের ইতিহাস পৌঁছে দেবেন। ইতিহাস বিকৃতকারীদের এদেশের আপামর জনগণ চিনে নিয়েছেন। তাই ইতিহাসকে বিকৃত করে জনসম্মুখে তুলে ধরে নিজেরাই নিজেদের আসল রূপের বহিঃপ্রকাশ করছেন জনসম্মুখে।
মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, এদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে আরো অনেক সংগ্রাম করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ’৬৯ সালের গণআন্দোলন হয়েছে। স্বাধীনতার আন্দোলন এদেশের কোনো একক দল বা ব্যক্তি করেননি। সর্বদলীয় ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারাদেশে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। ঢাকা শহরসহ সারাদেশের রাজপথে আগুন জ্বলে উঠেছিল একসাথে। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ অসংখ্য নেতার অবদান রয়েছে এসব সংগ্রাম ও যুদ্ধের সাথে। একটি যুদ্ধের ইতিহাস একদিনে রচিত হয়নি। তার আগে আরো অনেক ইতিহাস রয়েছে। পরেও রয়েছে অনেক ইতিহাস। গত বছর ধরে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসসহ সব ধরনের ইতিহাসকে ব্ল্যাকআউট করার অপচেষ্টা চলছে। ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না। সত্য ইতিহাস এই প্রজন্মের ইতিহাসবিদরাই রচনা করবেন। দেশের মানুষকে মনে রাখা উচিত দলের চাইতে দেশের ইতিহাস অনেক বড়। তাই সঠিক ইতিহাস মেনেই যেকোন রাজনৈতিক নেতাদের কথা বলা উচিত।
সভাপতির বক্তব্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুু আরো বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন একটা পাতায় বন্দি হয়ে গেছে। একটি মুক্তিযুদ্ধে একাধিক নায়ক থাকবেন এটাই স্বাভাবিক ইতিহাস। এখন শুধুমাত্র একজন নায়ক এবং একটি পাতায় তৈরি করা হচ্ছে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে এদেশের সংগ্রামের বীজ বপন করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরেই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সুবর্ণজয়ন্তী পালনের মাধ্যমে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে চায়।
মতবিনিময় সভার শুরুতেই উপস্থিত সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন মিডিয়া কমিটির সদস্য সচিব শামা ওবায়েদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে একটি দল নিজেদের ইতিহাস বলে দাবি করে আসছেন। এই ইতিহাসের সাথে এদেশের গণমানুষের যে ইতিহাস জড়িয়ে আছে, তা স্বীকার করছেন না এই দলটি। দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করে মানুষের কথা বলার মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবো আমরা (বিএনপি) বছরব্যাপী। চট্টগ্রামেই প্রথম সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছি। বছরব্যাপী এসব অনুষ্ঠান নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবেন এদেশের সাংবাদিক বন্ধুরা। আমি (শামা) আশা করছি চট্টগ্রামের সাংবাদিক বন্ধুরা সুবর্ণজয়ন্তীর সকল অনুষ্ঠানমালা সঠিকভাবে প্রচার করে বিএনপির পাশে থাকবেন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম বলেছেন, যে কারণে এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ দিয়ে, রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, তার সঠিক মর্যাদা পাচ্ছেন না এদেশের মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম এই ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। অথচ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই এদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য তৈরি করেছিলেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে মহান মুক্তিযুদ্ধ একটি কালজয়ী ইতিহাস। আর ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানসহ অসংখ্য মহানায়ক। বিএনপি স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জাতি তথা বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই সুবর্ণজয়ন্তী পালনের মাধ্যমে বছরব্যাপী দেশজুড়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। আর এই আয়োজনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এদেশের কলম সৈনিকরাই কাজ করবে ইনশাআল্লাহ।
মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম আকবর খন্দকার, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন মিডিয়া কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আলহাজ আবু সুফিয়ান ও সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান প্রমুখ।