শেষ হচ্ছে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা
মধ্যরাত থেকে নদী ও সাগরে জাল ফেলবেন জেলেরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪৩ পিএম, ২ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৪:১৮ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সাগর ও নদীতে ইলিশসহ সকল মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আজ রোববার মধ্যরাত থেকে শেষ হচ্ছে। শেষ সময়ে জেলেদের নদী ও সাগরে মাছ শিকারে যাওয়ার প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছেন। এবার জেলেদের আশা, তাদের জালে ধরা পড়বে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। আজ মধ্যরাত থেকেই জেলেরা নদী ও সাগওে জাল ফেলবেন।
কিন্তু এবারের মা ইলিশ রক্ষা কড়াকড়িভাবে হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র ও স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। বিশেষ করে ইলিশের খনি হিসেবে পরিচিত মেঘনাঘেরা হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জে মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান ছিল একেবারেই ঢিলেঢালা। এ দুই উপজেলায় দফায় দফায় প্রশাসনের ওপর হামলা হয়েছে। এ ছাড়া এবারই প্রথম নৌবাহিনী ছিল না এই অঞ্চলে। এই সুযোগে গোটা অভিযানে নদীতীরে প্রকাশ্যে ডাকে (নিলামে) বিক্রি হয়েছে ইলিশ।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার অভিযানে জেল-জরিমানা অনেকাংশে কম হয়েছে। ইলিশ ধরার অপরাধে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন নদ-নদীতে অভিযান চালিয়ে শুক্রবার পর্যন্ত ১৯ দিনে ৫৮৯ জেলেকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যদিও গত বছর জেল হয়েছে প্রায় ৮০০ জনের। এ বছর ইলিশ জব্দ হয় ১ হাজার ৬৭৬ টন। তবে গত বছর ইলিশ উদ্ধার হয় ১৬ টন। এ ছাড়া এবার অভিযান চালানো হয়েছে ২ হাজার ৮০০টি, যা গত বছর ছিল ২ হাজার ৮৩৭টি। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হয়েছে ৮৬৪টি, তবে গত বছর ছিল ১ হাজার ১৮টি।
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় মাঠপর্যায়ের তথ্যমতে, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জের দুই উপজেলায় অন্তত দুই ডজন স্পট ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সেখানকার একাধিক তথ্যমতে, এ বছর প্রশাসনের ওপর হামলার কারণে মৎস্য অধিদপ্তরের অভিযান কমে গেছে। এ সুযোগে মেঘনাতীরের বিভিন্ন স্পটে ডাক দিয়ে মাছ বিক্রি করা হচ্ছে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, ঢিলেঢালা অভিযানের কারণে চড়া দরে ইলিশ বিক্রি হয়েছে নদীতীরে। এ বছর এক কেজি আকারের ইলিশ নদী তীরে এক হাজার টাকার নিচে নামেনি, কিন্তু গত বছর ৫০০ টাকার বেশি ছিল না। কারণ, গত বছর কড়াকড়ি থাকায় জেলেরা যে দাম পেতেন, সেই দামেই মাছ বিক্রি করে দিতেন।
এদিকে ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ১৩ অক্টোবর থেকে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন দেশের নদ নদী ও সাগরে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এসময়ে ইলিশ বিক্রি, মজুত ও বাজারজাতকরণও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আজ রোববার ৩ নভেম্বর থেকে ইলিশ শিকারে নামবে জেলেরা। মাছ শিকারের প্রস্তুতিতে নিষেধাজ্ঞার শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় কাটছে বরিশালের মেঘনা তীরবর্তী জেলে পল্লীগুলোতে। জাল আর মাছ ধরার নৌকা মেরামত করে আগেই প্রস্তুতি সেরে নিয়েছেন তারা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে নদীর পাড়ের মাছের আড়তগুলো।
বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার বাউশিয়া, মৌলভীরহাট, মেমানিয়া, হরিনাথপুর ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কালাবদও নদীর নলবুনিয়া, রহহমানেরহাট, মেঘনা নদীর উলানিয়া, গবিন্দপুর, জাঙ্গালিয়া, আলিমাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, জাল ও নৌকা মেরামত কাজে জেলেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জেলে আনোয়ার হোসেন ও আলম বেপারী বলেন, সরকার মা ইলিশ রক্ষায় যে অভিযান দেয় তা আমরা মানি। তবে হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকার অসাধু জেলেরা নদীতে জাল ফেলে অনেক মাছ ধরে নিয়ে যায়। যে কারণে অভিযান শেষে নদীতে নেমে আমরা মাছ পাই না। আমাদের ঋণ করে নতুন জাল ও নৌকা মেরামত করে নদীতে নেমে মাছ না পেলে খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আর নিষেধাজ্ঞা সময়কালে যে পরিমাণ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়, তা দিয়ে কিছুই হয় না।
জানতে চাইলে হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাজিব রয় বলেন, আমরা এবার বড় ধরনের তিনটি হামলার শিকার হয়েছি। অভিযানে গিয়ে প্রায় দিনই বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল মেঘনা নিয়ন্ত্রণ করা, যে কারণে শাখানদীতে তেমন একটা অভিযান চালানো হয়নি।
রাজিব আরও বলেন, জেল-জরিমানার বিষয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখেন। মৎস্য আইনে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। যদিও এবার ৮-১০ দিনের বেশি সাজা দেওয়া হয়নি। চোরাগোপ্তা নদীতীরে ইলিশ বিক্রি বন্ধ করা কঠিন। আমরা গভীর মেঘনায় নজর রাখেছি।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন জানান, অভিযানে গেলে হামলার শিকার হচ্ছেন তাঁরা। দল বেঁধে জেলেরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন। এর মধ্যেও যতটুকু পারছেন, অভিযান চালিয়েছেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির বরিশাল বিভাগের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, নিশেধাজ্ঞার সময়ে ইলিশ ধরার উৎসব চলেছে হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জের মেঘনা নদীতে। ইলিশের হটস্পট হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জে নৌবাহিনী দিতে পারেনি সরকার। রাতে নজরদারির আহ্বান জানানো হলেও অভিযান করছে না প্রশাসন। ঢিলেঢালা অভিযানের সুযোগে মেঘনায় ব্যাপক হারে মা ইলিশ নিধন হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, হামলা, বাধার মধ্যেই আমাদের অভিযান অব্যাহত ছিলো। জেলেদের মামলা ও সাজা দিয়ে ইলিশনিধনে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। যত সাজা দেওয়া হচ্ছে, তত হামলার শিকার হতে হচ্ছে। তা ছাড়া অভিযানে সময় মতো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়া যায় নি। এখন জনসচেতনতাই একমাত্র ভরসা। এখন জেলেরা নদী ও সাগরে ইলিশ সহ সকল প্রকার মাছ শিকারে নামবেন। আশাকরি তাদেও জালে কাঙ্খিত ইলিশ মিলবে।
দিনকাল/এসএস