ঝুলন্ত সবজিবাগানে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন কৃষি উদ্যোক্তা ‘পলি’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৩ পিএম, ২ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৪:১৮ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কপি, কচু, বেগুন, মুলা, মরিচ, ঢ়েড়স, আদা, পেয়াজ, রসুন, কলমি, লালশাক-সবই আছে নবীন কৃষি উদ্যোক্তা সানজিদা আক্তার পলির (২২) ঝুলন্ত সবজিবাগানে। এসব শাকসবজির বিশেষত্ব হলো এগুলো বিষমুক্ত, প্রয়োগ করা হয় না কোনো কীটনাশক। জৈব সার ব্যবহার করেই ফলানো হয় এসব শাকসবজি। পোকা দমনে ব্যবহার করেছেন সেক্স ফেরোমন ফাঁদ। এতে খচরও অনেক কম। বাড়ির ওঠানে, রাস্তার ধারে বাঁশের আড়ার সাথে রশি দিয়ে বাঁধা বস্তায় ঝুলছে এসব শাকসবজি। নিজের বাড়িতে ঝুলন্ত পদ্ধতিতে ফলানো বিষমুক্ত এসব শাকসবজিতে চার সদস্যের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণের পর বাজারে বিক্রিও করা হয়।
শনিবার (২ নভেম্বর) সকালে সরেজমিন নবীন কৃষি উদ্যোক্তা সানজিদা আক্তার পলির সাথে কথা বলে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে। সানজিদা আক্তার পলির বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি গ্রামে যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ঢালে। তার স্বামীর নাম জাহিদ হাসান সাগর। দুই সন্তানের জননী তিনি। স্বামী জাহিদ হাসান সাগর ওয়াই-ফাই ও ক্যাবল (ডিস) ব্যবসায়ী। দফায় দফায় যমুনা নদীর ভাঙনে স্বামীর আবাদি জমি যেটুকু ছিল সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে তাদের ছোট্ট সংসারে সহায় সম্ভব বলতে এই বসত বাড়িটি। যেখানে স্বামী, শাশুড়ি ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে পলির সুখের বসবাস।
রাক্ষুসী যমুনা নদী সবটুকু আবাদি জমি কেড়ে নিলেও থেমে যাননি পলি। স্বামীর আয়ের পাশাপাশি পলি নিজেও কিছু করার চিন্তা করেন। স্বামীর অনুপ্রেরনায় পলি বেসরকারি একটি সংস্থার সদস্য হন। সেখানে কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার প্রশিক্ষন নেন পলি। তারপরও এক বছর আগে প্রথম বারের মতো জমি ছাড়াই স্বল্প পরিসরে নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় ঝুলন্ত পদ্ধতিতে শাকসবজির চাষ শুরু করেন তিনি। প্রথম দফায় সবজি চাষে সফলও হয়েছেন পলি। তাই চলতি মৌসুমে চাষের পরিধি বাড়িয়েছেন। বর্তমানে তার বাগানে শতাধিক বস্তায় ঝুলছে নানান জাতের শাকসবজি। এবারও সফলতার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। বাতাসে দোল খাওয়া বস্তার উপর সবুজ শাকসবজির নয়নাভিরাম দৃশ্যে হাসি ফুটে উঠেছে তার চোখে মুখে।
সরেজমিন ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শুধু সানজিদা আক্তার পলি নন, তার মতোই গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে শোভা পাচ্ছে ঝুলন্ত সবজিবাগান। সেখানে কথা হয় নবীন কৃষি উদ্যোক্তা সানজিদা আক্তার পলির সাথে। ঝুলন্ত পদ্ধতিতে শাকসবজি চাষের কারণ হিসেবে পলি বলেন, ঝুলন্ত শাকসবজি চাষে সুবিধা অনেক। এটি যমুনা নদীর ভাঙন জনপদ। প্রায় প্রতি বছররই এলাকায় বন্যা হয়। তাই প্রথমতো বন্যার পানি জমে যাতে ফসলের ক্ষতি না হয়, সে কারণে বস্তায় ঝুলন্ত পদ্ধতিতে এসব চাষ করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করতে জমি লাগে না। যত্রতত্র ভাবে বাঁশের খুটি পুতে আড়া বানিয়ে তার সাথে রশি দিয়ে বস্তায় ঝুলিয়ে শাকসবজি চাষ করা যায়। এছাড়া গরু-ছাগলও সবজি ক্ষেতের ক্ষতি করতে পারে না। এ গ্রামে আমার মতো অনেক পরিবারেই আবাদি জমি রাক্ষুসী যমুনা গিলে খেয়েছে। তাই তারাও ঝুলন্ত পদ্ধতিতেই সবজি চাষ শুরু করেছেন।
তিনি আরো বলেন, এই পদ্ধতিতে শাকসবজি চাষে বাড়তি পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না। ছেলেমেয়ে সামলানো আর ঘর-সংসারে কাজের ফাঁকে নিজেই সবজিবাগানের পরিচর্যা করছি। পরিমান মতো মাটি আর জৈব সার মিশিয়ে বস্তায় তোলা হয়। বস্তার মাটিতে সবজির চারা রোপন করে সকাল বিকেল সামান্য পরিমান পানি দেই। এক্ষেত্রে চারা রোপন করা পর্যন্ত প্রতিটি বস্তায় খরচ পড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। ঘর-সংসারের পাশাপাশি সবজি চাষে বাড়তি আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন তিনি। তার এ কাজকে সহজ করেছে বেসরকারি সংস্থার একটি প্রকল্প।
ধুনট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নুর নাহার বলেন, নবীন কৃষি উগ্যোক্তা পলির ঝুলন্ত পদ্ধতিতে শাকসবজি চাষ এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তার এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। আশা করি, শুধু পলি বা অন্যরাই নন, এক সময় উপজেলার সব নারীই বাড়ির উঠান কিংবা পরিত্যক্ত জায়গায় সাধ্যমতো ঝুলন্ত পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করবেন। নতুন কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি করার জন্য উপজেলা কৃষি অফিস সার্বিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষি সম্পর্কিত যে কোনো সহযোগিতা ও পরামর্শ দিতে আমি ও আমার সহকর্মীরা সব সময় প্রস্তুত আছি।
দিনকাল/এমএইচআর