নীলফামারীতে বেড়েছে কলা ও সাথী ফসলের চাষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:২১ পিএম, ২ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৫:১২ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
নীলফামারীতে কলার সঙ্গে সাথী ফসল উৎপাদনে অধিক মুনাফা আসায় চাষীদের আগ্রহ বেড়েছে। অনেকের টানাপোড়েন জীবনের অবসান হয়েছে। স্বচ্ছল সংসার হয়েছে, মিশ্র পদ্ধতিতে কলার সাথী ফসল চাষ করে।
নীলফামারী সদরের পলাশবাড়ী এলাকার নলনী কান্ত রায়। ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন একসময়। ভ্যান চালিয়ে যা আয় হতো, তাতে কোনোমতে সংসার চলতো তার। তবে টানাপোড়নের সংসারে কলা চাষ করে বদলে গেছে নলনীর জীবন। এখন আর আগের মতো সংসারে অভাব নইে বললেই চলে। শুধু নলনীই নয়, তার মতো কলা চাষে অনেক কৃষকের বদলে গেছে জীবন।
নীলফামারীর ৬ উপজলোয় কলা চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। পাশাপাশি সাথী ফসল হিসাবে বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করছেন তারা। এতে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক চাষী। অনেকেই জমিতে বেশী লাভের আশায় কলার জমিতে চাষ করছেন সাথী ফসল। দেশের অন্য অঞ্চলের মতো নীলফামারীর বিভিন্ন এলাকায় জনপ্রিয় হচ্ছে মিশ্র পদ্ধতিতে সাথী ফসল।
নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধদিপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার জেলায় ১৭২ হেক্টর জমিতে কলার চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে নীলফামারী সদর উপজলোয় ৫৫ হেক্টর, ডোমার ২৮ হেক্টর, ডিমলা ২ হেক্টর, কিশোরগঞ্জ ১৩ হেক্টর, জলঢাকা ৪২ হেক্টর ও সৈয়দপুর উপজেলায় ৩২ হেক্টর জমিতে কলা চাষ করা হয়েছে।
চাষিরা বলছেন, এক মৌসুমে একই সময়ে জমিতে বিভিন্নি ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। জেলার অনেক কৃষক কলার জমিতে আলু, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, মাসকালাই প্রভৃতি চাষ করছেন।
চাষি নলিনী কান্ত রায় বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে কলা গাছ লাগিয়েছি। কলা ক্ষেতের মধ্যে আলু লাগিয়েছি। আলু উঠলে মসুরি ডাল লাগাবো। প্রাকৃতিক কোনো কারণে ক্ষেত নষ্ট না হলে প্রতি বিঘায় লক্ষাধিক টাকার কলা বিক্রি করা যাবে। এরই মধ্যেই আলু ঘড়ে উঠবে আমাদের। কয়েক বছর ধরে এই কলা চাষ করে আমার সংসারের অভাব দূর হয়েছে।
একই গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, ‘কলা চাষে লাভের পাল্লাটাই ভারি থাকবে। প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫০ থেেক ৪০০ কলা গাছ লাগানো যায়। গাছ লাগানো থেকে শুরু করে ১১ মাসের মধ্যে কলা কাটা যায়। এর মধ্যে কলা পাওয়া যায় ৩০০-৩২০টি গাছে। নানা কারণে বাকি গাছ জমিতে টিকে থাকে না।
লক্ষ্মীচাপ ইউনয়িনের বেলতলী এলাকার চাষি তোফাজ্জল হোসনে বলেন, ‘বর্তমানে সবজি ও আলু বিক্রি শেষে ওই ক্ষেতেই মিষ্টিকুমরা অথবা শাক জাতীয় ফসল চাষ করে প্রতি বিঘায় ১০-১২ হাজার টাকা পাওয়া যেতে পারে। চুক্তভিত্তিকি নেওয়া জমিতে কম সময়ে, কম জমিতে, এক মৌসুমে বেশী ফলন পেতে একাধিক ফসল চাষ করছি।’
নীমতলী এলাকার মকিলা বেওয়া বলেন, ‘আমার স্বামী সারাবছর বাহিরে (ইট-ভাটায়) কাম করে। দশ বছর থেকে কলা আবাদ করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। কলা আমাদের একমাত্র আবাদ। কলা চাষে লাভ ভালো আসে।
নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় ক্রমেই কলা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। সাথী ফসল চাষ জমিতে বেশি আয় করার একটি কৌশল। লাভ বেশী হওয়ায় চাষিরা কলার জমিতে সাথী ফসল চাষ করছেন। কৃষি বিভাগ চাষিদের প্রয়োজনীয় পরার্মশ ও দিকনির্দেশনা’ দিচ্ছে।
দিনকাল/এমএইচআর