গণপিটুনিতে নিহত-১
সাতক্ষীরার দেবহাটায় অস্ত্র, বোমাসহ গ্রেপ্তার-৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৪৫ পিএম, ১ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪ | আপডেট: ০৩:৩৭ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালি এলাকায় অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের সময় গণপিটুনিতে কামরুল ইসলাম (৪০) এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি উপজেলার খলিশাখালি এলাকার মৃত আবু বকর গাজীর ছেলে।
আজ শুক্রবার (১ নভেম্বর) ভোর রাতে খলিশাখালির মৎস্যঘের এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আরো ৬ ব্যক্তিকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর সদস্যরা।
আটককৃতরা হলেন- শ্যামনগর উপজেলার হাজিপুর গ্রামের নরিম সরদারের ছেলে নুরুজ্জামান, আশাশুনি উপজেলার শ্রীগঞ্জ গ্রামের আবু সাঈদের ছেলে সোহেল, কালিগঞ্জ উপজেলার বাবুরাবাদ গ্রামের রুহুল আমিন গাজীর ছেলে মেহেরাব আলী, একই উপজেলার কাশিবাটি গ্রামের রুহুল আমিন সরদারের ছেলে হাসিবুল হাসান সবুজ, আকরাম গাজির ছেলে রবিউল আউয়াল ও বদরতলা এলাকার জামিল ফকিরের ছেলে আবুল হোসেন।
দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর মোহাম্মাদ দিনকালকে জানান, খলিশাখালিতে ১৩'শ ২০ বিঘা মৎস্যঘের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব বিরাজ করছিল। গত ৫ আগস্টের পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অবনতি হওয়ার সুযোগে খলিশাখালিতে অস্ত্র নিয়ে মৎস্যঘের দখলে নিতে বিভিন্ন সময় মহড়া দিতে থাকে ভুমিহীন নামধারী একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। এতে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে সেখানে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালায় সেনাবাহিনী।
সাতক্ষীরা সেনা ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল হক দিনকালকে বলেন, খলিশাখালি এলাকায় অস্ত্র, গোলাবারুদ, বোমা মজুদ রেখে মাছের ঘের দখল, এলাকায় ডাকাতিসহ নানা অপরাধ করে আসছিল আকরাম হোসেন, আরিফুল ইসলাম পাড়, কামরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম গাজীসহ তাদের বাহিনীর সদস্যরা। সেই মোতাবেক দেবহাটার তিনটি অবস্থান থেকে এক সাথে অপারেশন চালনো হয়। এসময় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে প্রথমে তারা ইট-পাথর নিক্ষেপ করতে শুরু করে। পরে দেশীয় বোমা এবং ককটেল বোমা ছুড়তে থাকে। এমনকি দূর থেকে আমাদের লক্ষ্য করে পাইপগান দিয়ে গুলিও চালায়। এক পর্যায়ে স্থানীয় দেড় শতাধিক বাসিন্দারা ডাকাত কামরুলসহ কয়েকজনকে ধরে ফেলে। বিক্ষুব্ধ জনতা এসময় ডাকাত কামরুলকে গণপিটুনি দেয়। একপর্যায়ে সেনা সদস্যরা আহত কামরুলকে উদ্ধার করে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত কামরুল একজন দণ্ডিত অপরাধী এবং ডাকাত ছিলেন। অন্যান্য আটককৃত অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দেবহাটা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এসময় সেখান থেকে ৫টি রামদা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ৮০০ গ্রাম বারুদ, ৪টি মোবাইল ফোন, ১৫টি দেশীয় হ্যান্ড গ্রেনেড (হাত বোমা), ৭ প্যাকেট স্প্রিন্টার, ৩৯ টি দেশীয় ছোট হ্যান্ড গ্রেনেড (হাত বোমা) উদ্ধার করা হয়।
তবে নিহতের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন জানান, চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলামের লোকজন তার স্বামীকে মৎস্যঘের থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
এ ব্যাপারে নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান জানান, আমার লোকজন সেখানে যায়নি। শুনেছি গণপিটুনিতে একজন মারা গেছে।
প্রসংগত; বিগত ২০২১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাতের আধারে মকরম শেখ, আকরাম হোসেন, আরিফুল ইসলাম পাড়, সাইফুল ইসলাম গাজী, কামরুল ইসলাম, রিপন হোসেন, গোপাল ঢালী, শরিফুল ইসলাম, আব্দুল গফুর, বাবলু গাজী, রবিউল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম কালু, এসএম মহিউদ্দিনসহ ৫০/৬০ জন খলিশাখালীর ওই মৎস্য চাষকৃত জমি জবরদখল নেয় এবং কোটি টাকার উর্ধে জমির মালিক এবং লীজ গ্রহীতারদের ক্ষতিসাধন করে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে সন্ত্রাসীরা ওই জমি দখলে নিতে এবং চাষকৃত মাছ লুট করার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছিল। বিষয়টি নিয়ে গত ২ অক্টোবর মালিক ও লিজ গ্রহীতারা সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তার কয়েকদিন যেতে না যেতে মৎস্যঘেরের কর্মচারীদের জিম্মি করে কয়েক দফায় মাছ লুটের ঘটনাও ঘটে।
দিনকাল/এমএইচআর