যানজটে অতিষ্ট নবীনগর পৌরবাসী, সড়কে চলছে অনুমোদনের চার গুণ ইজিবাইক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৮ পিএম, ১ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪ | আপডেট: ১০:৫৩ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
যানজট নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর শহরবাসীর ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে ২৭৩টি ইজিবাইকের অনুমোদন থাকলেও প্রতিদিন শহরে এর চার গুণ চলাচল করে। এ ছাড়া অদক্ষ চালকরা যেখানে- সেখানে ইজিবাইক রেখে যাত্রী ওঠানামা করান। এর পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ছোট-বড় পিকআপ ভ্যান শহরের ওপর দিয়ে যাতায়াত করে। রাস্তার ওপর মোটরসাইকেল পার্কিং ও ফুটপাত দখল করে বানানো অস্থায়ী দোকানের কারণে পুরো শহর স্থবির হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা শহরের রাস্তাগুলো এমনিতেই অপ্রশস্থ, তার ওপর ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি চার গুণ ইজিবাইক চলাচলের কারণে দিনের বেলায় শহরে হাঁটাচলা করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বড় বড় ট্রাক্টোর যখন সদর বাজারে প্রবেশ করে তখন যানজটের তীব্রতা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আগে ট্রাফিক পুলিশ সড়কের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করলেও এখন তারা নেই। ফলে কেউ কাউকে তোয়াক্কা করেন না।
স্থানীয়দের দাবি, সংকট থেকে মুক্তি পেতে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। শহরের ওপরে থাকা ইজিবাইকের অস্থায়ী ষ্ট্যান্ডগুলো সরানোর পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া ফুটপাত দখলমুক্ত করতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। শিগগিরই যানজট কমে যাবে।
পৌর শহরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল হলেই শহরের সদর বাজারের সালাম রোড,ডাকবাংলো সড়ক, কোট রোড, আলিয়াবাদ গোল চত্বর ও ভোলাচং এর কোনাঘাট মোর এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ বাজারে কেনাকাটা করতে আসা মানুষের চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান বসায় এক মিনিটের পথ যেতে ২০ মিনিট সময় লাগে।
সফিক মিয়া নামে এক অটোরিকশা চালক বলেন, 'শহরে এখন আর কোনো শৃঙ্খলা নেই। কেউ নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না। যার যেখানে খুশি সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করান।
এলাকার বাসিন্দা শাহিন আহাম্মেদ বলেন, 'শহরের যানজট দিন দিন বেড়েই চলেছে। যেখানে-সেখানে ইজিবাইক দাঁড়িয়ে থাকার কারণে হেঁটে চলাচল করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দিনের বেলা বড় ট্রাক্টোর ঢুকে পরলে শহরের যানজট আরও তীব্র হয়ে উঠে। অনেক সময় যানজটের কারণে শিক্ষার্থীরা সঠিক সময়ে স্কুল-কলেজে পৌঁছাতে পারেন না। এ সংকট নিরসনে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
আলমনগর গ্রামের বাসিন্দা হাবিব মিয়া জানান, সড়কের আকারের তুলনায় শহরে যানবাহন বেশি চলাচল করে। এ ছাড়া অটোরিকশার চালকরা যেখানে-সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করান। এসব কারণে ছোট-বড় দুর্ঘটনার পাশাপাশি যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া সড়কের ওপর মোটরসাইকেল পার্কিং ও ফুটপাতে বসা অস্থায়ী দোকানের কারণেও যান চলাচল ব্যাহত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবীনগর পৌরসভার এক কর্মকর্তা জানান, শহরে যানজট নিয়ন্ত্রণ ও গাড়ির চাপ কমিয়ে আনতে পৌর কর্তৃপক্ষ দুইশত তিয়াত্তরটি অটোরিকশাকে লাইসেন্সের মাধ্যমে চলাচলের অনুমতি দেয়। শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা সদরবাজারের ওপর দিয়ে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি অটোরিকশা চলাচল করে, যা শহরের রাস্তাগুলোর ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। ৫ আগষ্ট পটপরিবর্তনের পর ট্রাফিক পুলিশ চলে যায়। পরে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক কর্মী সড়কে পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে গাড়ির তীব্র চাপের কারণে তারা যানজট নিরসন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
হান্নান মিয়া নামে এলাকার এক ব্যবসায়ী মনে করেন, যানজট নিরসন করতে হলে শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে অটোরিকশার ষ্ট্যান্ডগুলোকে দূরে সরিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি সড়কে আবারও ট্রাফিক পুলিশ ফেরাতে হবে।
নবীনগর থানার ওসি মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, পুর্বে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যানজট নিরসনের পাশাপাশি সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আবারও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মোতায়েনের বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব।'
নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রসাশক রাজিব চৌধুরী বলেন, 'সমস্যা চিহ্নিত করে যানজট নিরসন করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ফুটপাতের অস্থায়ী হকারদের সরিয়ে নেওয়া হবে। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হবে। আশা করছি, শিগগিরই শহরের যানজট নিরসন হয়ে যাবে।
দিনকাল/এমএইচআর