সংকট কাটাতে শনিবারও খোলা ন্যাশনাল ব্যাংকের কুমিল্লা শাখা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৪৯ পিএম, ২৬ অক্টোবর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৩:১২ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
আর্থিক লেনদেনের সংকট কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে শনিবার ছুটির দিনও খোলা রাখা হয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংকের কুমিল্লা শাখা অফিস।
আজ শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ ছাতিপট্টি এলাকায় অবস্থিত ব্যাংকটির কুমিল্লা শাখায় গিয়ে দেখা গেছে ব্যাংকটির কার্যক্রম চলছে।
তবে বন্ধের দিন শুধুমাত্র গ্রাহকদের কাছ থেকে নগদ টাকা গ্রহণ করা হচ্ছে। কোনো গ্রাহককে টাকা দেওয়া হচ্ছে না। শনিবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৭৪ লাখ টাকা গ্রহণ করা হয়েছে।
ব্যাংকটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং কুমিল্লা শাখার ব্যবস্থাপক মো. নাছিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পথে বলে মন্তব্য করেন। তার ওই বক্তব্যের পর সারাদেশে ব্যাংকখাতে দারুণ প্রভাব পড়ে। গভর্নর তার ওই বক্তব্যে ব্যাংকগুলোর নাম না উল্লেখ করলেও পরদিন ৯ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের সকল ব্যাংকের গ্রাহকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে টাকা উত্তোলনের জন্য। সেই থেকে আজ অবধি টাকা উত্তোলনের জন্য গ্রাহকরা ভীড় করছেন ব্যাংকের শাখাগুলোতে। তারল্যসংকটের ফলে চাহিদামতো গ্রাহকদের আমানতের টাকা দিতে রীতিমতো বেকায়দায় পড়েছে দেশের বেশকিছু সংখ্যক ব্যাংক।
ন্যাশনাল ব্যাংকের কুমিল্লা শাখার ব্যবস্থাপক মো. নাছিম উদ্দিন বলেন, গত ৯ তারিখ থেকে আমানত রাখা গ্রাহকদের মধ্যে একটা প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে। গভর্নর মহোদয় বলেছেন দেশের কোনো ব্যাংকই বন্ধ হবে না এবং আমানতকারীদের একাধিকবার অনুরোধ করেছেন এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তর না করে যার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই উত্তোলনের জন। কিন্তু গ্রাহকদের মধ্যে গুজব রটেছে ন্যাশনাল ব্যাংক না কি বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ ব্যাংক বন্ধ হওয়ার কোনো লক্ষ্মণই নেই। আমরা স্বাভাবিক সময়ের মতোই লেনদেন করছি।
তিনি আরও বলেন, গ্রাহকদের চাহিদা মতো টাকা দিতে আমাদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, কারণ যার টাকার দরকার তিনিও আসেন, যার টাকার দরকার নেই তিনিও আসেন টাকা উত্তোলনের জন্য। দেশের সকল গ্রাহক যদি একযোগে টাকা উত্তোলনের জন্য শাখাগুলোতে ভীড় করেন তবে ব্যাংক এত টাকা কোত্থেকে দেবে। কোনো ব্যাংকের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। সিম্পল এই জিনিসটা গ্রাহকরা বুঝতে চান না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসিগত কারণে আমাদের একটু সময় লাগছে। গ্রাহকদের স্বাভাবিক সময়ের মতোই সেবা দিতে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ন্যাশনাল ব্যাংক কুমিল্লা শাখা শুধুমাত্র শুক্রবার বন্ধ থাকছে। প্রতি শনিবার আমরা ব্যাংক খোলা রাখছি। তবে শনিবার শুধু আমরা টাকা গ্রহণ করছি। রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গ্রাহকদের টাকা দেওয়া হয়। কিছুটা সীমিতকরণ হলেও অদ্যাবধি নগদ টাকার জন্য কুমিল্লা শাখায় উপস্থাপন করা কোন গ্রাহকের চেক ফেরত দেওয়া হয়নি। গভর্ণর মহোদয়ের পরামর্শ মতো আমরা সকল সম্মানিত গ্রাহককে ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ করছি। তবেই আমরা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসব। আমাদের সংকট কেটে যাবে।
তিনি জানান, ন্যাশনাল ব্যাংক কুমিল্লা শাখায় স্বাভাবিক সময়ের মতোই লেনদেন চলছে। গত মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ন্যাশনাল ব্যাংকের কুমিল্লা শাখায় নগদ গ্রহণ করা হয়েছে ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। ওইদিন গ্রাহককে প্রদান করা হয়েছে ৫৮ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। পরদিন বুধবার (২৩ অক্টোবর) নগদ গ্রহণ করা হয়েছে ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা। একইদিন গ্রাহককে প্রদান করা হয়েছে ৫৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার নগদ গ্রহণ করা হয়েছে ৮৯ লাখ ২১ হাজার টাকা, ওই দিন গ্রাহককে দেওয়া হয়েছে ৬৪ লাখ ৭ হাজার টাকা। যা স্বাভাবিক সময়ের থেকে খুব সামান্যই কম।
এ বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তৌহিদুল আলম খান বলেন, বর্তমানে ন্যাশনাল ব্যাংকসহ সমগ্র ব্যাংকিং খাত এক কঠিন পরীক্ষার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এই পরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ হবই। কিন্তু সহসা এই পরিস্থিতি বা সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলেন সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে এবং অতীব প্রয়োজনের বাইরে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তলন করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।
দিনকাল/এমএইচআর