গণঅভ্যুত্থানের গল্প
গেঁথে থাকা গুলির প্রভাবে অবশ হয়ে পড়ছে বিএনপি নেতা মোস্তফা’র শরীরের ডান পাশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩৯ পিএম, ১৮ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২৪ | আপডেট: ০৪:২৫ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
গত ৪ আগস্ট দুপুরের পর শেরপুর শহরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল বের হলে মিছিলে যোগ দেন দরীদ্র মোস্তফা কামাল। মিছিলটি শেরপুর থানার সামনে পৌঁছালে থানা ভবনের ভেতর থেকে শটগানের গুলি ছোঁড়া হয়। গুলিতে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন মোস্তফা কামাল। আহত মোস্তফা কামালকে উদ্ধার করে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে যান তিনি।
মাস খানেক পর তার শরীরে ব্যথা শুরু হয়। এ ব্যথা তিনি সহ্য করতে পারছিলেননা। পরে, ২৫ সেপ্টেম্বর বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সেখানে এক্স-রে করে তার শরীরে অন্তত ১৬টি ছররা গুলির চিহ্ন দেখা যায়। তীব্র ব্যথার কারণে ঐদিনই গুলি বের করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসক দল। এ সময় চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করে তাঁর শরীরের ডান পাশের মাজা থেকে ১টি ও ডান পা থেকে ৩টি গুলি বের করেন। ব্যথা কিছুটা কমায় তাঁর স্ত্রী তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যান।
মোস্তফা কামালের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘বাঁকী ১২টি গুলি মাংসের অনেক ভিতরে থাকায় ডাক্তাররা ১মাস পর আবার যেতে বলেছেন। আমার কোন পুত্র সন্তান নেই। এই বয়সেও মানুষটিকে পরিবার চালাতে রাত দিন পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রম করে যে টাকা আয় করতেন, তা দিয়েই সংসার চলত। তার চিকিৎসার জন্য নিজেদের গচ্ছিত কয়েক হাজার টাকা ছিল সেটাও শেষ। ইতোমধ্যে, ৪০ হাজার টাকা ধার-দেনা করে চিকিৎসা করিয়েছি। ১মাস পর যে যাব! আমার কাছে কোন টাকা নেই। সরকারিভাবে সহযোগিতা না পেলে তাঁর সুচিকিৎসা সম্ভব না।’
মোস্তফা কামাল বলেন, ‘একমাস তো দূরের কথা! ৩০ সেপ্টেম্বর হাসপাতাল থেকে ফেরার পর থেকেই আমি আর শরীরে শক্তি পাচ্ছিনা। ধীরে ধীরে আমার শরীরের ডানপাশ অবশ হয়ে যাচ্ছে। ডান হাত ডান পায়ে কোন শক্তি পাইনা। এদিকে হালকা ব্যথা তো রয়েই গেছে। আমি ডায়াবেটিসেরও রোগী। আমি শাহবন্দেগী ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। এ পর্যন্ত আমি দল থেকে বা সরকারিভাবে কোন অর্থ সহযোগিতা পাইনি। আমি পঙ্গু হলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। সকলের নিকট চাওয়া আমার চিকিৎসায় এগিয়ে আসুন।’
মোস্তফা কামাল সম্পর্কে জানতে চাইলে, শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী লিংকন বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ মোস্তফা কামালের শরীরের ডান পাশ অবশ হয়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হতো।’
মোস্তফা কামাল, পেশায় একজন অটো চালক, এক কন্যান্তানের জনক। ৫৫ বছর বয়সের এই মানুষটি হাঁড়ভাঙা পরিশ্রম করেই বিয়ে দিয়েছেন মেয়েকে। পুত্র সন্তান না থাকায় এই বয়সেও সংসারের ঘাঁনি টানতে সকাল থেকে রাত অবধি ব্যাটারীচালিত অটো রিক্সা নিয়ে পুরো উপজেলায় যাত্রীবহন করতে হয়। স্ত্রীকে নিয়ে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের আন্দিকুমড়া গ্রামে তার বসবাস।
দিনকাল/এসএস