শেরপুরের নালিতাবাড়ীর বন্যা
কমছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ : পুনর্বাসন প্রয়োজন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:২০ পিএম, ১৪ অক্টোবর,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ০৪:২৪ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয় উপজেলার পৌর এলাকা ও ১২টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে উজানের ৮টি ইউনিয়নের পানি দ্রুত নেমে যায়। বাকি ৪টি ইউনিয়নের ৮/১০ টি গ্রাম এখনো প্লাবিত হয়ে আছে।
বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে চেল্লাখালী ও ভোগাই নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো। এসব গ্রামের মানুষের ঘরবাড়ি পানির স্রোতে ভেসে গেছে। অনেকের মাটির দেয়াল ধসে পড়েছে।
কয়েক দিন থেকে নিম্নাঞ্চলের বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। তবে পানিবন্দী লোকজন এখনো কলাগাছের ভেলা ও নৌকায় চরে চলাচল করছেন। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক
পানির স্রোতে ভেঙ্গে যাওয়ায় যানবাহন ও লোকজন যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার ভোগাই নদীর পানি বিপদ সীমার ১৬৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং চেল্লাখালী নদীর পানি বিপদ সীমার ৮৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার রাত থেকে উপজেলায় উজানের পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টিতে তাৎক্ষনিকভাবে প্লাবিত হয় উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের আন্ধারুপাড়া, পলাশীকুড়া, বাতকুচি, আমবাগান, তাজুরাবাদ, অভয়পুর, নিশ্চিন্তপুরসহ অন্তত ২৫টি গ্রামে। এসব গ্রামের পানি নেমে গিয়ে নিম্নাঞ্চলের কলসপাড়, যোগানিয়া, মরিচপুরান ও রাজনগর ইউনিয়নের ৭১টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে প্রায় ৩১ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। ৪টি ইউনিয়নের ডুবে থাকা অধিকাংশ রাস্তা থেকে পানি নেমে গেছে। তবে ভেসে উঠেছে বানের পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ি ও রাস্তা ঘাটের ক্ষত চিহ্ন। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে এলাকার শত-শত পরিবার। সচেতন মহল এসব পরিবার দ্রুত পুর্ণবাসনের দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলার বাতকুচি আটভাইপাড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, সাজেদুল ইসলাম ও হামেদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি না থাকায় ঘরবাড়ি থেকে ঢলের পানি নেমে গেছে। এমনকি চেল্লাখালী নদীর পানিও কমে গেছে। তবে ভাটির দিকে মানুষের ঘরবাড়ির চারপাশের পানি এখনো সরেনি। গ্রামের লোকজনের বাড়ির বাইরে চলাচলের জন্য কলার ভেলা অথবা কাপড় ভিজিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ওইসব এলাকায় নৌকায় করে অনেকেই ত্রাণ দিয়ে গেছেন।
পোড়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান চৌধুরী বলেন, ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার মধ্যে আমার ইউনিয়নে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে ঘর-বাড়ী হারিয়ে নিঃস্ব, খোলা আকাশের নিচে বাস করছে। যেসব গ্রামের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদেরকে এখন স্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ ও মেরামত করে পুর্নবাসন করা প্রয়োজন।
এদিকে, গত কয়েক দিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি, সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরন করা হয়েছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুদ রানা বলেন, উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। কয়েক দিন থেকে বৃষ্টিপাত না থাকায় ঢলের পানি কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে ৮/১০টি গ্রামে পানি আছে। তবে ভাটি এলাকায় উজানের পানি নেম গিয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
এ পর্যন্ত উপজেলার ২৭ হাজার ৩০০ বন্যার্ত পরিবারের মাঝে মুড়ি, চিড়া, বিস্কুট, খেজুর, স্যালাইন, মোমবাতি ও রান্না করা খিচুড়ি বিতরন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য সরকারিভাবে আরো ৫০ মেট্রিক টন জিআরের চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এছাড়া উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ ৫০ হাজার মানুষের পুর্ণবাসনের জন্য তালিকা পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি বন্যার্তদের সহযোগিতায় সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।
দিনকাল/এসএস