২০ বছর পর জেগে উঠেছে চর, জমি ফিরে পেয়ে হাজারো পরিবারে স্বস্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫২ পিএম, ৮ ফেব্রুয়ারী,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৩০ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দীর্ঘ ২০ বছর আশায় বুক বেধে ছিলেন মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী, লৌহজং উপজেলার পদ্মাপাড়ের কয়েক হাজার মানুষ। বসত বাড়ি হারিয়ে কেউ রাস্তায় অন্যের গাছতলায় বাঁশতলায় পরিত্যক্ত ভিটায় কিংবা একেবারে নির্জন কোন বাগানে ঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছিলো।
জমি জমা সব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এক সময় যাদের অর্থ বিত্ত ছিলো সব হারিয়ে তারা দিনমজুর এবং অন্যের কাছে হাত পেতে সংসার চালিয়ে আসছিলো। কিন্তু আশায় বুক বেঁধে হারিয়ে যাওয়া বসত ভিটার পাশেই কোন এক পরিত্যক্ত জমিতে বসবাস করে আসছিলো এ সমস্ত মানুষগুলো। আর আসায় বুক বেঁধে ছিলো তাদের জমি একদিন জেগে উঠবে। তবে তাদের অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে ২০ বছর পরে। জেগে উঠেছে এ অঞ্চলে পদ্মার বুকে চিরে বিস্তীর্ন জমি। শুরু হয়েছে চাষাবাদ।
জানাগেছে, টঙ্গীবাড়ী উপজেলার হাসাইল, পাঁচগাও ইউনিয়ন এবং লৌহজং উপজেলার কলমা ইউনিয়নের বিস্তীর্ন জমি প্রায় ২০ বছর আগে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদী ভাঙ্গনের পরে বিত্তশালী পরিবারগুলো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়লেও গরীব অসহায় পরিবারগুলো ঠাই নেয় বিভিন্ন রাস্তার পাশে ও অন্যের পরিত্যাক্ত বাগান ভিটায়। তারা বুক বেধে ছিলো এতদিন তাদের জমিজমা জেগে উঠবে এই আশায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পাচগাঁও ইউনিয়নের কুকরাদী, গারুরগাও এবং পাশ্ববর্তী লৌহজং উপজেলার কলমা ইউনিয়নের ধাইদা, বন্দেগাঁও, বহর, ডহুরী গামের বিস্তীর্ন অঞ্চল জুড়ে পদ্মার বুক চিরে জেগে উঠেছে ৩ কিলোমিটারের বেশি প্রসস্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘের বিস্তীর্ন চর। আর ঐ চরে চলছে চাষাবাদ। চরের উচু জমিগুলোতে সরিষা আর আলু আবাদ হয়েছে আর নিচু জমিগুলোতে চলছে ধান চাষ। উচু জমিগুলোতে সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। বিস্তীর্ন মাঠ জুড়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে সরিষা ফুল। আর কিছু জমি সবেমাত্র জেগে উঠেছে যার মধ্যে চলছে ধানের আবাদ।
চরের সরিষা চাষি কাশেম বেপারী বলেন, নদীতে জমি হরিয়ে ২০টা বছর নদীর পাশের একটা বাঁশ তলায় বসবাস করেছি। ২ টি মেয়ে আমার। বড়টা শরিরীক প্রতিবন্ধি। মানুষের কাছ হতে হাত পেতে চেয়ে খেতে হতো। এখনো আমার নিজের জমি জেগে উঠেছে। আমি জমিতে সরিষা চাষ করেছি। ভালো সরিষা হয়েছে। আমি এখোন মহাখুশি আর মানুষের কাছে হাত পাততে হবেনা।
ঐ এলাকার গরু পালনকারী আবুল হোসেন জানান, আগে নদী পার হয়ে অনেক দুরে ওপার গিয়ে গরুর জন্য ঘাস কেটে আনতে হতো। কিন্তু নতুন চর উঠায় আমরা এখনো এই নতুন চর হতে ঘাস পাচ্ছি আমাদের আর কষ্ট করে অনেক দূর যেতে হচ্ছেনা।
ঐ এলাকার ইউপি সদস্য আলি আকবর জানান, চরে জমি জেগে উঠায় এই এলাকার মানুষের মনে স্বস্তি এসেছে। তারা এখানে ফসল উৎপাদন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। এ বছর জেগে উঠা চরে সরিষা, আলু, মরিচ ভালো হয়েছে।
এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ী কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, টঙ্গীবাড়ীতে এ বছর ৯২ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছি।