কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের হাটে ভোজ্যতেলের বাজার মূল্যে কারসাজি, সঠিক মান নিয়ে প্রশ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫৮ পিএম, ৮ ফেব্রুয়ারী,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫৮ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
দেশব্যাপী ভোজ্যতেলের বাজারমূল্য অস্থিরতায় প্রভাব পড়েছে কুমিল্লার দক্ষিনাঞ্চলের লাকসাম, বরুড়া, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার গুলোর হাটবাজার জুড়ে। শীত কমে যাওয়ার সঙ্গে যেন ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য পন্যের বাজারও অস্থির হয়ে উঠেছে। স্থানীয় মজুতদার ব্যবসায়ীদের ভোজ্যতেলের কারসাজি এবং সঠিক মান নিয়ন্ত্রন নিয়ে এলাকার জনমনে নানান বির্তক চলছে।
স্থানীয় ভুক্তভোগীদের একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমান করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবের মধ্যেও নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের পাশাপাশি ভোজ্যতেল কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ। গত দু’সপ্তাহ জুড়ে ভোজ্যতেলের মূল্য একাধিকবার বাড়ায় জনমনে স্বস্তি নেই।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের ১ লিটার বোতল ১৩০/১৪০ টাকা এবং ৫ লিটার বোতল ৬৫০/৬৮৫ টাকা এবং সরিষা তেল কলে খুচরা-পাইকারী সোয়াবিন তেলের মূল্যের সমান ধরেই বিক্রি হচ্ছে। গতবছরের বাজার দরের তুলনায় এ বছরের শুরুতেই ভোজ্য তেলের মূল্য ৩০/৩৫ শতাংশ বেশি। তবে এসব ভোজ্য তেলের মূল্য বর্তমান বাজার জুড়ে লাগামহীন ঘোড়ার মত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ইতি মধ্যে ব্যবসায়ীরা চাল, পেয়াজ ও আলুসহ মসল্লার বাজার দর নিয়ে লুটপাট চালিয়েছেন সেখানে ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীরা বসে থাকবে এটা কিন্তু আসা করা অলীক কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়।
এ দিকে গতবছরের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য মতে জানা যায়, হাটবাজার জুড়ে সংগৃহিত বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন, সরিষা ও নারিকেল তেলের ৭৭টির নমুনায় ফ্রি ফ্যাটি এসিডের মাত্রা পরীক্ষা করে এতে ৩০টি নমুনায় স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ফ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া গেছে।
বিদেশ থেকে আমদানীকৃত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভোজ্যতেল পরিশোধনের মাধ্যমে নিরাপদ ও খাওয়া উপযোগী করতে হয় কিন্তু ওইসব পন্যের এ দেশীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খরচ বাচাতে কিংবা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে সঠিক মান নিয়ন্ত্রন করছে না। এছাড়া বোতলজাত সয়াবিন তেলের ১৩টি নমুনা মধ্যে ৬টি তে মাত্রারিক্ত ফ্রি ফ্যাটি এসিডের ক্ষতিকারক মাত্রা ০.২ শতাংশ কিন্তু পরিক্ষিত ১৩টি নমুনার মধ্যে অপর ৬টিতে ২.২ থেকে ২.৮ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিকর ফ্রি ফ্যাট এসিড পাওয়া যায়।
খোলা সয়াবিল তেলের অবস্থা আরও খারাপ। বিশেষ করে পুষ্টিমান বলতেই কিছু নাই। এরমধ্যে দু’টি নমুনা পরীক্ষা করে দু’টিতেই ২.৬ থেকে ৩.৫ শতাংশ ফ্রি ফ্যাট এসিডের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। হাটবাজার জুড়ে খোলা বাজারে বিক্রি সরিষার তেলেও ১.২৫ শতাংশ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। বোতলজাত সরিষা তেলে ১৯টির নমুনার মধ্যে ১০টিতে ১.৩ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত ফ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া গেলেও খোলা সরিষা তেলের ৫টি নমুনার মধ্যে ৪টিতেই ১.৩ থেকে ২.৪ শতাংশ ফ্রি ফ্যাট এসিড থাকার সনাক্ত করা গেছে বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে।
সূত্রটি আরও জানায়, বাদামও তিলের তেলেও অধিকাংশ নমুনায় মাত্রাতিরিক্ত ওইসব ক্ষতিকর দ্রব্য রয়েছে। নারিকেল তেলের ১৭টি নমুনার মধ্যে ৪টি ক্ষতিকর দ্রব্য, অলিভওয়েল ও রাইচব্র্যান ওয়েলে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কিছু বেশি ক্ষতিকর দ্রব্যের প্রমান পাওয়া গেছে। তবে সঠিক মানের সয়াবিন তৈল নির্নয় করতে হয় বিএসটিআই কর্তৃপক্ষকে এবং ওইসব পন্যের রং, এসিড, আয়োডিন ভ্যালু, রেজিষ্টিভ ইনডেক্স ও মেলটিং পয়েন্ট পরীক্ষা হয়ে থাকে ওই প্রতিষ্ঠানে।
তবে বাজার মনিটরিংয়ে স্ব স্ব এলাকার স্যানেটারী ইন্সপেক্টর বিষয়টি দেখভাল করে থাকেন। এ ব্যাপারে তারাই ভালো বলতে পারবেন। জনস্বাস্থ্য ল্যাবের পরীক্ষায় ওইসব ভোজ্যতেলে অতিমাত্রায় ভেজাল, পাম্প অয়েল ও নিম্ন মানের ভোজ্যতেলে মিশ্রনের প্রমান মিলেছে। ওইসব ভোজ্যতেল মানব দেহে শক্তিজোগান ও টিস্যু গঠন বাঁধাগ্রস্থ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
এসিটিক এসিডের অতিরিক্ত এ মাত্রা প্রয়োগে মানবদেহে হার্টের জন্য ভয়ংকর ঝুঁকি ছাড়াও ক্যান্সার, হাইপারটেনসন ও ডায়বেটিকসসহ শরীরের ওজন অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে মৃত্যুর ঝুঁকির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
স্থানীয় অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাধিক সূত্র জানায়, এ অঞ্চলে প্রায় ৩ হাজার টন ভোজ্যতেলের চাহিদার বিপরীতে স্থাণীয় ভাবে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১০ ভাগ। ফলে অবশিষ্ট পুরোটাই এলাকার চাহিদা মিটাতে বাইরে থেকে আনতে হয়। এ অঞ্চলের হাটাবাজার জুড়ে অতি মুনাফাখোর, অতিলোভী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজন আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভোজ্যতেলসহ নিত্য পন্যের বাজার মূল্যে কারসাজিতে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
সকলকে মনে রাখতে হবে এ অঞ্চলের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের খাদ্য তালিকায় প্রধান উপকরন হচ্ছে ভোজ্যতেল। তা স্থানীয় প্রশাসনের যে কোন মূল্যে বাজার দর নিয়ন্ত্রন করা উচিত। আমরা ভোজ্যতেলের এ পরিস্থিতির দ্রুত অবসান চাই।
এ ব্যাপারে জেলা- উপজেলা ও বিভাগীয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্মকর্তাদের একাধিক মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।