মা-বোনসহ মরিয়ম মান্নানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১০ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারী,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০৪:২৮ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
খুলনার বহুল আলোচিত রহিমা বেগম ‘অপহরণ’ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে অপহরণ মামলা প্রমাণিত না হওয়ায় রহিমা বেগম এবং তার দুই মেয়ে মরিয়ম মান্নান ও আদুরি আকতারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এছাড়া অপহরণ মামলায় যে ৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তাদেরকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। ‘জমি সংক্রান্ত বিরোধে’ মেয়ে মরিয়ম মান্নানের নেতৃত্বেই প্রতিবেশীদের ফাঁসাতে রহিমা বেগমের অপহরণ নাটক সাজানো হয় বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।
আজ সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানান, পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান। এর আগে সোমবার সকালে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) খুলনা মহানগর হাকিম আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পিবিআই’র পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, তদন্তে রহিমা বেগমকে অপহরণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মরিয়ম মান্নানের নেতৃত্বে অপহরণের নাটক সাজানোর প্রমাণ মিলেছে। মূলত রহিমা বেগম অপহরণ হননি, তিনি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গিয়েছিলেন। তিনি ২৮ দিন আত্মগোপনে ছিলেন। এই ২৮ দিন তিনি বিভিন্ন স্থান পরিবর্তন করেছেন।
২৭ অক্টোবর দিবাগত রাতে তিনি খুলনার মহেশ্বরপাশার বাসা থেকে আত্মগোপন করার পরে ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় কিছুদিন অবস্থান করার পর একটি ব্যাগে কিছু কাপড় ও ওষুধ দিয়ে মরিয়ম মান্নান তাকে বান্দরবান পাঠিয়ে দেয়। সেখানে কিছুদিন অবস্থান করার পর তিনি চলে যান ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের বাড়িতে। সংবাদ পেয়ে ঐ বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাকে উদ্ধারের পর তিনি কোনো কথাই বলছিলেন না। অনেক চেষ্টার পর কথা বলানো সম্ভব হলে তিনি জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঝামেলা আছে উল্লেখ করে তারা অপহরণ করেছে বলে বিবৃতি দেন। পরবর্তীতে তাকে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দীর জন্য পাঠানো হলে তিনি একই রকমের মিথ্যা বক্তব্য প্রদান করেন।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টিকে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ করেছিলেন মরিয়ম মান্নান। পাশাপাশি ময়মনসিংহের ফুলপুরে ৩০ থেকে ৩২ বছর বয়সী এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহকে তিনি নিজের মা বলে চালিয়ে দেওয়ার নাটক করেছিলেন। নাটকটির পেছনের কারণ ছিল যদি তাকে (নারীর মরদেহ) তার মা বলে চালিয়ে দেওয়া যেত, তাহলে প্রতিবেশীদের চিরতরে ফাঁসানো যেত এবং নিঃশেষ করা যেত। কিন্তু তিনি চিন্তা করতে পারেননি যে পুলিশ তার মাকে খুঁজে বের করে ফেলবে।
পুলিশ সুপার বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৭ ধারা অনুযায়ী রহিমা বেগম, তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান এবং আরেক মেয়ে ও মামলার বাদী আদুরি আক্তারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া এই নাটকের মাস্টারমাইন্ড মরিয়ম মান্নান। মরিয়ম মান্নান তার মাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য দেশব্যাপী যে ক্রাইসিস সৃষ্টি করেছিল, সে কারণে আমরা একটু বেশি সময় নিয়ে তদন্ত করেছি। যাতে আমরা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে পারি এবং সবাইকে একটা বার্তা দিতে পারি, পরবর্তীতে এই ধরনের ঘটনা ও নিজের মাকে লুকিয়ে রেখে এই ধরনের নাটক করতে কেউ যেন সাহস না পায়।
সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘ইতিপূর্বে অপহরণ মামলায় যে ৫ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তারা এ ঘটনায় নির্দোষ। তদন্ত প্রতিবেদনে তাদেরকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।’