শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথের ৭টি ষ্টেশনের কোন অস্তিত্ব নেই, কোটি টাকার সরকারী সম্পদ বেহাত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২৪ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:২০ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা-হবিগঞ্জ রেল পথটির কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এ পথটির ৬৫ ভাগ রেলেরপাত সহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও ঘরের আসবাবপত্র লুটপাট হয়ে গেছে। এ পথের ৭টি ষ্টেশনের কোন অস্তিত্ব এখন আর অবশিষ্ট নেই।
বিভিন্ন সময়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি ট্রাক, পিকআপসহ প্রায় কোটি টাকা মূল্যের রেলেরপাত আটক করলেও পাচারকারীরা রয়ে যায় ধরা ছোয়ার বাইরে। বিশেষ করে এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলের পরিত্যক্ত এসব সম্পদ লুটপাট বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুনে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও কতিপয় জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় একটি মহল প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতের আধারে ট্রাক ও পিকআপ ভর্তি করে রেলের এসব সম্পদ পাচার করছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
রেল পুলিশের ভুমিকা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। ফলে অপ্রতিরোদ্ধ হয়ে পড়েছে এসব সম্পদ পাচাররোধ। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত লাইনটি বিগত সরকারের আমলে অঘোষিতভাবে বন্ধ হওয়ার পর থেকেই একটি প্রভাবশালী মহল রেলের বিশাল সম্পদের দিকে নজর দেয়। তাদের অনেকেই এখন বিলাস বহুল বাড়ি ও গাড়ির মালিক। বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যৌথ বাহিনীর ভয়ে কিছুটা বন্ধ থাকলেও বর্তমান সরকার আসার পর রেলেরপাত পাচার আবারও বেড়ে গেছে।
১৯২৮ সালে ব্রিটিশ সরকার হবিগঞ্জ জেলা সদর থেকে প্রায় ৫২ কিঃ মিঃ শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে বাল্লা সীমান্ত পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপন করে। তৎকালীন সময়ে চুনারুঘাট উপজেলার ১৩টি বাগানের চা-পাতা রপ্তানী ও বাগানের রেশনসহ আনুষাঙ্গীক জিনিসপত্র আমদানী করার একমাত্র মাধ্যম ছিল এ রেলপথটি। স্বাধীনতার পর এ লাইনটি লোকসানের পথে এগোতে থাকলে এরশাদ সরকারের আমলে প্রথম দিকে এ লাইনটি সর্বপ্রথম অঘোষিত ভাবে বন্ধ হয়। এর পর ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে একবার ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে এ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে শায়েস্তাগঞ্জ- হবিগঞ্জ- রেল লাইনটি উঠিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মান করা হয়। এদিকে শায়েস্তাগঞ্জ- বাল্লা রেল লাইনের প্রায় ৩৬ কিঃ মিঃ সড়কের রেলের পাত, পাথর, সিগ্যানাল, তার, নাট, বল্টু ও ওজন মাপার যন্ত্রপাতি এবং ৭টি ষ্টেশনের অবকাঠামোসহ কোটি কোটি টাকার মালামাল ইতোমধ্যে লুটপাট হয়ে গেছে। স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের ইশারায় পাচারকারী দলটি দিন ও রাতে ট্রাক ও পিকআপ লাগিয়ে রেলের কোটি কোটি টাকার এসব সম্পদ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করেছে।
বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যৌথ বাহিনী উপজেলার বগাডুবি, ইনাতাবাদ, আমুরোড, নোয়াবাদ, বনগাও ও ঘনশ্যামপুর গ্রামের কয়েক নেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান রেলের পাত উদ্ধার ও পাত কাটার যন্ত্র উদ্ধার করে। এসময় তারা অনেককে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় রেলপাতসহ রেলের মুল্যবান সম্পদ পাচার বেড়ে গেছে।
সর্বশেষ বেশকিছুদিন পূর্বে চুনারুঘাট উপজেলার আমুরোড বাশতলা এলাকা থেকে পাচারের সময় পুলিশ অর্ধকোটি টাকা মূল্যের রেলের পাতসহ একটি ট্রাক আটক করে। অপরদিকে উক্ত ট্রেন লাইনের মালামাল লুঠপাঠকে কেন্দ্র করে চুনারুঘাট ও শায়েস্তাগঞ্জে গড়ে উঠা কয়েকশ’ ভাঙ্গারীর দোকান মালিক এখন লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছেন। মুলত তাদের মাধ্যমেই পাচার কাজ শুরু হয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, চুনারুঘাট উপজেলার আমুরোড থেকে বগাডুবি হয়ে ইনাতাবাদ পর্যন্ত এবং সতং, শাকির মোহাম্মদ ও বড়কোটা এলাকায় রেল লাইনের পাত আর নেই। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে চুনারুঘাট ভায়া বাল্লা রেল লাইনের প্রায় ৩৬ কিঃ মিঃ এলাকার অধিকাংশই এখন রেল পাত বিহীন অবস্থায় পড়ে আছে। কোন কোন স্থানে রেল লাইনের কোন অস্তিত্বই নেই। এছাড়া বাল্লা থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত ৭টি রেল ষ্টেশনের কোন অস্তিত্ব এখন আর বিদ্যমান নেই। পরিত্যক্ষ রেল ষ্টেশন গুলোতে অসামাজিক কার্যকলাপ ও গরু ছাগলের ঘরে পরিনত হয়েছে।