রংপুরে টিসিবি’র ডিলারদের কাছে জিম্মি ক্রেতারা!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩৯ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:২৭ পিএম, ১৫ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
রংপুর নগরীতে ক্রেতাদের জিম্মি করে পচা পেঁয়াজ বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি’র ডিলারদের বিরুদ্ধে। ক্রেতারা ডিলারদের দেয়া শর্ত অনুযায়ী পেঁয়াজ না কিনলে মিলছে না ডাল, চিনি ও ভোজ্য তেল। এনিয়ে ক্রেতাসহ সচেতন নগরবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে টিসিবি’র রংপুর ডিপোর এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা গোডাউনে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ পড়ে থাকার কথা স্বীকার করেন। পেঁয়াজ দ্রুত বিক্রির স্বার্থে ডিলারদের শর্ত দেয়া হয়েছে। তবে ক্রেতাদের জিম্মি করে পচা পেঁয়াজ বিক্রি করার আদেশ কে দিয়েছে এমন প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
তবে টিসিবি’র একটি সূত্র জানায়, তাদের গোডাউনে প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের শত শত টন আমাদানি করা নিম্নমানের পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই পেঁয়াজ ১৫ টাকা কেজি দরে ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি করতে দেওয়া হয়েছে।
টিসিবি অফিস ও ডিলাররা জানিয়েছেন, গত তিন দিন ধরে রংপুর নগরীর ৮টি স্থানে ট্রাকে করে পেঁয়াজ, ডাল, চিনি ও ভোজ্য তেল বিক্রি করছে ডিলাররা। সয়াবিন তেলের দুই লিটারের বোতল ১৬০ টাকা চিনি ও মসুর ডাল ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে ডিলাররা। পেঁয়াজ বিক্রি করছে ১৫ টাকা কেজি দরে। কিন্তু ডিলাররা একজন গ্রাহক ১০ কেজি পেঁয়াজ না কিনলে অন্য পণ্য বিক্রি করছে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, টিসিবি ডিলার মাহাতাব উদ্দিন এ সব পণ্য বিক্রি করছে। ওই ডিলার নিজেই স্বীকার করেন আমদানি করা পেঁয়াজগুলোর বেশিরভাগই পচা। তারপরেও প্রতিটি ডিলারকে বাধ্যতামূলকভাবে একটন পেঁয়াজ দেড়শ কেজি সয়াবিন তেল এবং ১০০ কেজি করে চিনি ও মসুরের ডাল বরাদ্দ দিয়েছে টিসিবি। কিন্তু পেঁয়াজগুলোর বেশির ভাগই পচে যাওয়ায় এবং পেঁয়াজের গায়ে গাছ গজিয়ে ওঠায় গ্রাহকরা তা কিনছেনা। বাধ্য হয়ে তারা পেঁয়াজ বিক্রি করার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন ১০ কেজি পেঁয়াজ কিনলেই অন্য পণ্য বিক্রি করা হবে। শুধু তাই নয়, পেঁয়াজের কেজি ১৫ টাকা দাম নির্ধারণ করে দিলেও পেঁয়াজ কেউ নিতে চাইছে না।
একইভাবে নগরীর শাপলা চত্বর, সিটি বাজার, সিও বাজার, লালবাগ, মর্ডান মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে একই অবস্থা। ১০ কেজি পেঁয়াজ কিনলেই অন্য পণ্য দেওয়া হবে বলে ডিলারদের সাফ জবাব।
টিসিবি পণ্য কিনতে আসা গৃহণী নুরে আফরোজা ও হামিদা বেগম জানান, বাজারে সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৩০-১৩৫ টাকা, চিনি ৬৫ টাকা এবং মসুর ডাল ৭০ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছে। আর এখন বাজারে প্রচুর দেশি পেঁয়াজ আছে। দাম ৩০-৩৫ টাকা কেজি। আর টিসিবি যে যে পেঁয়াজ এনেছে সেগুলো প্রথমত নিম্নমানের, দ্বিতীয়ত পচা। আর এসব পেঁয়াজ দিয়ে রান্নাও ভালো হয় না। ফলে টিসিবি ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রির কথা বললেও ৫ টাকা কেজি দাম নির্ধারণ করলেও কেউ কিনবে না। তার ওপর ১০ কেজির স্থলে ৩-৪ কেজি হলে এবং সেই পেঁয়াজ ভালো হলে কেনা যেত। কিন্তু পচা ও নষ্ট হওয়া পেঁয়াজ কেনা সম্ভব না। আর এভাবে আমাদের গ্রাহকদের জিম্মি করে পচা পিয়াজ কিনতে বাধ্য করাটা অমানবিক।
একই কথা জানালেন মর্ডান মোড় এলাকার বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান ও আসাদুজ্জামান নয়ন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ডিলার স্বীকার করেছে রংপুর নগরীর স্টেশন এলাকায় টিসিবি গোডাউনে শত শত টন আমদানি করা পেঁয়াজ পড়ে আছে। আর ২-৪ দিন পর সব পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে সরকারের গচ্চা যাবে লাল লাখ টাকা।
তারা আরও জানান, যখন পেঁয়াজের বাজার মূল্য ছিল ১০০ টাকার ওপরে কেজি তখন টিসিবি ডিপো ইনচার্জ ডিলারদের বরাদ্দ অনেক কম। ওই কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে শত শত টন পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে।
সার্বিক বিষয় জানতে টিসিবির রংপুরের ডিপো ইনচার্জ প্রতাপ চন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও স্বীকার বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ তাদের গোডাউনে পড়ে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন এসব বিক্রির স্বার্থে শর্ত দেওয়া হয়েছে বলে জানান। তবে গ্রাহকদের জিম্মি করে পচা পেঁয়াজ বিক্রি করার আদেশ কে দিয়েছে এমন প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেননি।