বগুড়ায় বিষাক্ত মদ্যপানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৬ এএম, ৪ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫৭ এএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
বগুড়ায় বিষাক্ত মদ্যপানে আরো আটজনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বগুড়া সদর থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁইয়া।
তবে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলছেন, বগুড়ার এই ঘটনায় বুধবার দুপুর পর্যন্ত বিষাক্ত মদ্যপানে আরো চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আর নিহতের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলায় অন্তত ১৬ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় জনগণ ও স্বজনরা বলছেন, বগুড়ায় মদ্যপানে সারি সারি লাশের সন্ধান মিলছে জেলা বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চালে। লোকলজ্জার ভয়ে এবং পুলিশের হয়রানির ভয়ে অনেকেই স্বীকার করছে না। পুলিশের নিশ্চিত করা ব্যক্তিরা বাদে অন্যরাও বিষাক্ত মদ্য পান করেছিলেন।
পুলিশের নিশ্চিত করা মৃত ব্যক্তিরা হলেন, পুরান বগুড়ার দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা সুমন রবিদাস, তার বাবা প্রেমনাথ রবিদাস, প্রেমনাথের ভাই রামনাথ রবিদাস, কাটনারপাড়ার হটুমিয়া লেন এলাকার সাজু প্রাং, ফুলবাড়ি দক্ষিণ পাড়ার পলাশ মন্ডল, ফুলবাড়ি মধ্যপাড়া আব্দুল জলিল, পুরান বগুড়ার সিজদারপাড়ার মো. রমজান আলী, বগুড়া সদরের ফাঁপোর ইউনিয়ন পরিষদের জুলফিকার আলী।
পুলিশ জানায়, একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে বিষাক্ত মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। এরপর ওই মদের বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের তথ্যে পলাশ বিষাক্ত মদ খেয়ে নিহত। পলাশের ভাই পায়েল বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যালে ভর্তি। তারা পারুল ল্যাব নামক একটি দোকান থেকে ‘রেকটিফাইড অ্যালকোহল’কেনেন একজনের কাছ থেকে।
গত শনিবার সন্ধ্যায় খাওয়ার পর তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পায়েলের স্ত্রী জানান, শনিবার তাদের পরিবারের একজনের জন্মদিন ছিল। এ কারণে তার স্বামী, দেবর ও দেবরের বন্ধু শখ করে মদ খান। সোমবার হাসপাতালে নেওয়ার পর পলাশ মারা যান। বিষাক্ত মদ খেয়ে শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন পলাশের ভাই আতিকুর রহমান পায়েল, পায়েলের বন্ধু আইয়ুব ও শিববাটি এলাকার হোটেল শ্রমিক রঞ্জু।
এ ছাড়া শাজাহানপুর উপজেলার পাঁচজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসপাতালেই পলাশের ভাগ্নে বাঁধন জানান, ‘জন্মদিনের অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে শনিবার সন্ধ্যায় তার মামার সঙ্গে আব্দুর রহিম নামের আরেকজনও মদ্যপান করেন। পরে তিনি তার বাড়ি ফুলবাড়ী দক্ষিণ পাড়ায় যান। সেখানে রোববার মারা যান রহিম।’ সর্বশেষ মৃতরা হলেন- বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার মেহেদি হাসান, আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুল আহাদ এবং সারিয়াকান্দির লাজু মিয়া গত মঙ্গলবার মারা যান।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’ তবে স্থানীয়রা জানান, মেহেদি হাসান, আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুল আহাদ নিয়মিত নেশা করতেন। গত রোববার তারা উপজেলার বি ব্ল-কের রায়হান হোমিও হল থেকে ‘রেকটিফাইড অ্যালকোহল’ কিনেছিলেন। এর আগে মারা যান সোমবার রাতে বগুড়ার কাটনারপাড়া এলাকার মোজাহার আলী, কাহালু উপজেলার উলট্ট মহল্লার আবু কালাম মারা যান। আর বিষাক্ত মদ খেয়ে একই দিনে নিশিন্দারা ধমকপাড়ার আলমগীর মারা যান বলে নিহতের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
যদিও পুলিশ বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের নিশ্চিত করা ব্যক্তি বাদে অন্যরা স্টোক করে মারা গেছেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার মারা যাওয়াদের মধ্যে সারিয়াকান্দির লাজু পেশায় রিকশাচালক। পাশাপাশি অ্যালকোহল বিক্রি করতেন তিনি। তার ভাই শফিকুলও মদ্যপান করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকেই লাজু ও শফিকুলের বুক জ্বলা-পোড়া করছিল বলে তারা চিৎকার করছিলেন। হাসপাতাল নেয়ার পথে লাজুর মৃত্যু হয়। এর পর আত্মগোপন করেছেন তার ভাই শফিকুল। লাজুর বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘এ পর্যন্ত বিষাক্ত মদ্যপান করে চারজনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিষাক্ত মদ্যপান করে অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন আরও ছয়জন। তাদের বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করা কঠিন। তারা অবজারভেশনে রয়েছে।’ জেলা পুলিশের আটজন নিশ্চিত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘মেডিকেল প্রতিবেদন ও আমাদের অনুসন্ধানে আটজন বিষাক্ত মদ্যপানে নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।’ বগুড়ায় এই ১৬ জন রোববার থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে মারা যান।
এ ঘটনায় সোমবার করা মামলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১১ টার মধ্যে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, পিএম (পারুল) হোমিও ল্যাবরেটরিজের মালিক নুরুন্নবী, শহরের গালাপট্টি মুন হোমিও হলের মালিক আব্দুল খালেক, হাসান হোমিও ফার্মেসির কর্মচারী মো. আবু জুয়েল ও করতোয়া হোমিও হলের মালিক মো. শহিদুল আলম সবুর। তাদেরকে পুলিশ সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।