পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীতে ড্রেজিং, নদীর বালু নদীতেই, সরকারের গচ্চা কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০১ এএম, ৩০ জানুয়ারী,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:১৪ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
গাঙ্গের বালি গাঙ্গেই হালাইতেছে। এ্যাতে কয়দিনের জন্যে উহকার অইলেও বেশী দিন থাকবে না। আবার চর পইরয়া ভইরয়া যাইবে। খালি খালি সরকারের কোটি কোটি টাহা গচ্চা গ্যাছে। আইজ তিন বচ্ছর ধইয়্যা এইরোহোম হরতে আছে। এই বালি উপরে উডাইলে আর চর পরতো না। মোরা কইলে কিছু অইবে না। কেননা মোরা ট্রলার মাঝি। কিন্তু মোরাই সত্যি কতাডা কই। আক্ষেপ করে এমন কথা বলেন, আমতলীর পায়রা নদীর ফেরী ঘাটের ট্রলার মাঝি মোঃ ফরিদ উদ্দিন।
বরগুনার আমতলী-ঢাকা নৌ-রুটের নাব্যতা সঙ্কট কাটাতে বিআইডব্লিউটিএ’র (বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) ড্রেজিং বিভাগ আমতলী পায়রা ফেরি ও লঞ্চঘাট সংলগ্ন পায়রা নদীতে ড্রেজিং কাজ করেছে। খনন করা বালু বাঁশের বেড়া দিয়ে আবার নদীতেই ফেলা হচ্ছে। অল্প দিনের জন্য উপকার হলেও দীর্ঘ মেয়াদি কোন উপকারে আসবে না এমন দাবী ওই রুটে চলাচলকারী ফেরি, কার্গো, লঞ্চ ও ট্রলার চালকদের। এতে তাদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
জানাগেছে, ১৯৭০ সালের দিকে আমতলী ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাট এলাকার পায়রা নদীর মধ্য খানে বালু চরের সৃষ্টি হয়। ওই সময়ে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগ গুরুত্ব দেয়নি। ২০০৭ সালের প্রলঙ্ককারী ঘুর্ণিঝড় সিডরের পরে প্রবল আকারে পায়রা নদীতে ডুবোচরের সৃষ্টি হয়। এতে পায়রা নদীতে নাব্যতা সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করে। নদীতে ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় লঞ্চ, ফেরী, কার্গো ও ট্রলারসহ নৌযান চলাচল হুমকির মুখে পরে। ২০১৮ সালে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগ আমতলী-পুরাকাটা পায়রা নদীর চরের মাঝখানে চ্যানেল তৈরির জন্য ড্রেজিং করে। তিন মাস যেতে না যেতেই ওই চ্যানেল ভরে যায়। এতে আবারও সমস্যায় পড়ে নৌ-যান চলাচল।
গত তিন বছর ধরে এভাবেই চ্যানেল তৈরির ড্রেজিং কাজ করে আসছে বিআইডব্লিউটিএ। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। দুই তিন মাস যেতে না যেতেই পুনরায় চর পড়ে যায়। প্রায়ই এ ডুবোচরে ফেরি, লঞ্চ ও ট্রলারসহ মালামাল পরিবহন কার্গো আটকে পড়ে। এতে দুর্ভোগে পড়ে নৌযানে চলাচলরত মানুষ। পায়রা নদীর এ ডুবোচর ড্রেজিং করতে গত বছর ডিসেম্বর মাসে বরগুনা বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগ সিএসডি ভিশন নামের একটি ড্রেজিং কোম্পানীর সাথে চুক্তি করেন। ওই কোম্পানীর লোকজন খননকৃত বালু রাখতে পায়রা নদীর মাঝে বাঁশের বেড়া দেয়। ওই বাঁশের বেড়ায় মধ্যে বালু ফেলে। এতে নৌ-রুটে চলাচলরত চালক ও স্থানীয় মানুষের মাঝে রহস্য ঘনিভুত হয়। অভিযোগ রয়েছে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগ লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের জন্য গত তিন বছর এমন রহস্যজনক কাজ করছেন এমন দাবী স্থানীয়দের।
পায়রা নদীর নাব্যতা সঙ্কট কাটাতে ড্রেজিং বিভাগ প্রায় দেড় মাস ধরে ড্রেজিংয়ের কাজ করছে। তারা ফেরি ও লঞ্চঘাট সংলগ্ন পায়রা নদীতে প্রায় ৯০ হাজার ঘন মিটার বালু অপসারণের মাধ্যমে ৩৬০ ফুট দীর্ঘ একটি চ্যানেল তৈরির কাজ করছে। যে চ্যানেল দিয়েও লঞ্চ, ফেরিসহ সব ধরনের জলযানগুলো নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে বলে জানান ড্রেজিং বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সোহেল মিয়া। কিন্তু বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। ড্রেজিং করা বালু বাঁশের বেড়ায় ফেলা হলেও ওই বালুই জোয়ার-ভাটায় ঘুরে ফিরে খনন করা স্থানে জমা হয়ে আবার ডুবো চরের সৃষ্টি হবে এমন দাবী করেন ফেরিঘাটের ট্রলার মাঝি রুবেল, আবুল কালাম ও হারুন মোল্লা। তারা আরো বলেন, গত তিন বছর ধরেই বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং বিভাগ নদী ড্রেজিং করছে কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। সরকারের শুধু শুধু কোটি কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে। ড্রেজিং’এ কাটা বালু স্থলভাগে উত্তোলন করলে এমনটা হওয়ায় সম্ভবনা ছিল না। এখন নদীর বালু নদীতেই রয়ে গেল।
আমতলী-পুরাকাটা ফেরির ইজারাদার আবদুস ছালাম খাঁন বলেন, গত তিন বছর ধরেই নদীর ডুবে চর ড্রেজিং করছে। তাতে তেমন কোন উপকার হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বাঁশের বেড়া দিয়ে নদীতেই বালু ফেলা হচ্ছে। এতেও কোন উপকার আসবে বলে আমার মনে হয় না।
সিএসডি ভিশন ড্রেজিং কোম্পানীর ম্যানেজার মোঃ সাব্বির আহম্মেদ বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোহেল রানা আমাকে যেভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিচ্ছে সেই অনুযায়ী কাজ করছি।
বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সোহেল মিয়া বলেন, পাইপ দিয়ে ড্রেজিংয়ের স্থান থেকে ৯’শ ফুট দূরে নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরে বালু ফেলছি। ওই বালু যাতে না আসতে পারে সে কারনে বাঁশের বেড়া দেয়া হয়েছে। এখন খনন করা চ্যানেলে বালু আসতে পারবে না। এখন সকল নৌযান নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে।
বরগুনা বিআইডব্লিউটিএ’র পোর্ট অফিসার মোঃ মামুন অর-রশিদ বলেন, ড্রেজিংয়ের খননকৃত বালু নদীর স্থলভাগে ফেলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বালু ফেলার জায়গা পাইনি। এমনকি আমতলী উপজেলা পরিষদ এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেনি। তাই বাধ্য হয়েই বালু নদীতে ফেলতে হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু বকর সিদ্দিক নদীর বালু নদীতে ফেলার কথা স্বীকার করে বলেন, স্থলভাগে সরকারী কোন জমি না পাওয়ায় নদীর মধ্যে একটি চরে বালু ফেলা হচ্ছে।