নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখলের অভিযোগ নাসিকের বিরুদ্ধে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৩ এএম, ২৮ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:১১ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ভেঙ্গে ২০ শতাংশ জমি দখলের চেষ্টা চালিচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। সরকারি এই স্কুলটির জমি দখলের জন্য সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ গত মঙ্গলবার সকালে নগরের পাইকপাড়ায় অবস্থিত ১৬ নম্বর বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি একতলা ভবন ভেঙ্গে ফেলার প্রস্তুতি শুরু করে। খবর পেয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ফিরে যায়।
এদিকে নাসিক কর্তৃপক্ষ আজ বুধবার সকালে স্কুলের পুরানো ভবনটি ভেঙ্গে ফেলেছে। বঙ্গবন্ধু নামে প্রতিষ্ঠিত একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ভেঙ্গে স্কুলের জমি দখল চেষ্টার খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার দান করা ১৩৩ শতাংশ জমিতে স্কুলটি গড়ে তোলা হয়। ওই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে এই স্কুলের উদ্বোধন করেন। বঙ্গবন্ধুর নামে স্কুলের নামকরণ করে রাখা হয়, ১৬ নম্বর বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার ৪৭ বছর পর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ স্কুলের ২০ শতাংশ জমি নিজেদের দাবি করে গত ২০ জানুয়ারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে চিঠি দিয়ে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে মালিকানার প্রমাণ দিতে নির্দেশ দেয়। তবে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তাদের দেয়া সময়ের আগেই জমি দখল করতে চলে আসে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ হুমায়রা বলেন, গত ২ অথবা ৩ জানুয়ারি স্কুলটি পরিদর্শনে আসেন সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। ওই সময় তিনি স্কুলের কোনো উন্নয়ন প্রয়োজন কিনা তা প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চান। প্রধান শিক্ষক হুমায়রা তখন স্কুলের একটি একতলা ভবন জরাজীর্ণ বলে মেয়রকে জানান।
এদিকে গত ২০ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন স্বাক্ষরিত এক পত্রে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে স্কুলের জমির মালিকানার কাগজপত্রসহ সিটি করেপারেশনে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে যোগাযোগ করতে বলা হয়। সে হিসেবে ২৮ জানুয়ারি ৭ কর্মদিবস সম্পন্ন হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের দুদিন আগেই সিটি করপোরেশন কোনো নোটিশ ছাড়াই স্কুলের জমি দখল করতে চলে আসে।
প্রধান শিক্ষক হুমায়রা আরও বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে চিঠি পেয়ে তিনি বিষয়টি সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার, থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করেন। পাশাপাশি তিনি একজন আইনজীবীর মাধ্যমে সিটি করপোরেশন কর্র্তৃপক্ষ স্কুলের জমির যে দাগ ও খতিয়ান নম্বর উল্লেখ করেছেন ওইসব পর্চা সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত পর্চা অনুযায়ী আরএস পর্চায় ১ একর ৩৩ শতাংশ জমির মালিক হিসেবে তৎকালীন পৌরসভার নাম উল্লেখ রয়েছে। জমির প্রকৃতি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে অকৃষি এবং জমির ওপর স্থাপনা হিসেবে স্কুলের কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে এসএ পর্চার ভলিউমের দুটি পাতা ছেঁড়া থাকায় সেই কাগজপত্র সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। আর সিএস পর্চায় ওই জমি নাল এবং কবরস্থান হিসেবে উল্লেখ রযেছে।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ১ একর ৩৩ শতাংশের ওপর স্কুলের কথা উল্লেখ করা থাকলেও সরকারি এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ৩৩ শতাংশ জমির ওপর অবস্থিত। বাকি এক একর জমির কোনো হদিস নেই। স্কুলের ৩টি ভবনের দুটি একতলা বিশিষ্ট এবং একটি তিন তলা। দুটি একতলা ভবনের একটি জরাজীর্ণ।
সংশ্লিষ্ট ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর আবদুর করিম বাবু বলেন, রেকর্ড অনুযায়ী স্কুলের কিছু জমিতে পূর্বে কবরস্থান ছিল। আর স্কুলের পাশেই শিশু নিকেতন নামে একটি বেসরকারি স্কুল রয়েছে। ওই স্কুলের খেলার মাঠ নেই। ওই বেসরকারি স্কুলটিকে সুবিধা দিতেই সিটি করপোরেশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি খেলার মাঠের জন্য ব্যবহার করতে চায়। তবে আমার প্রস্তাব ছিল এলাকার জন্য জমিটি কবরস্থান হিসেবেই ব্যবহৃত হোক।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কামাল দেওয়ান বলেন, স্কুলটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এভাবে দখল চেষ্টা ঠিক হয়নি। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা প্রয়োজন ছিল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের। কারণ স্কুলটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। আমরা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে বাধা দিয়েছি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহিন্দ্র কুমার মন্ডল বলেন, আমরা সরকারি বিধি অনুযায়ী এ বিষয়ে অগ্রসর হবো। আমাদের কাছে যেসব কাগজপত্র রযেছে সেগুলো আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে জমা দেবো।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষককে যে চিঠি দেয়া হয়েছে সেটি আমারই স্বাক্ষরিত। তবে (গত মঙ্গলবার) যে তারা উচ্ছেদে গিয়েছে সেটি আমার জানা নেই। কারণ আমি সারাদিন বাইরে ছিলাম। স্কুলের জমিতে কি করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।