প্রকৌশলী আনোয়ারের শত কোটি টাকার দুর্নীতি : আত্মীয়দের নামে কিনেছেন ১০টি প্লট
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৪১ এএম, ২৭ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:১৬ এএম, ১৩ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের ঢাকার সার্কেল-১ এর সাবেক তত্ত্বাববধায়ক প্রকৌশলী মো. আনোয়ার আলীর বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে ঠিকাদারদের হয়রানি, আত্মীয় স্বজনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি ব্যবসার মাধ্যমে কোটি শত কোটি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তিনি বর্তমানে সার্কেল-৬ সিলেটের তত্ত্বাববধায়ক হিসেবে কর্মরত।
আনোয়ারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও ঠিকাদারদের হয়রানির অভিযোগ তদন্ত করছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। দুর্নীতি দমন কমিশনও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা অভিযোগ করে বলেন, আনোয়ার আলী ঢাকা বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালে ১২/১৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কয়েকশ কোটি টাকার কাজ দেখিয়ে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আত্মীয় স্বজনদের ঠিকাদার সাজিয়ে ৩/৪ কোটি টাকার স্পট কোটেশনের মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। সিডিউল বহির্ভূত নিম্নমানের কাজের সুযোগ দিয়ে ৬০% টাকার ভাগ নিয়ে ২০/৩০ কোটি টাকার কাজে ২/৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঠিকাদারদের চাপ প্রয়োগ করে নিজের আত্মীয়-স্বজনদের নামে সাতটি প্রতিষ্ঠান এবং এইচডিতে কর্মরত স্টাফদের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের নামে কোটেশন দেখিয়ে কোনো প্রকার কাজ না করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ঠিকাদাররা জানান, মেসার্স রাজা বাদশা, মেসার্স বিএম কনস্ট্রাকশন, মেসার্স সামস এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সোহেল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আলীম কনস্ট্রাকশন, মেসার্স মোহাম্মদ কনস্ট্রাকশন, মেসার্স উজ্জ্বল ট্রেডার্স নামের সাতটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তার নিকট আত্মীয়দের। সহকারী প্রকৌশলী থাকাকালে নিজে ঠিকাদার সেজে শুধু রঙের কাজ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ঠিকাদাররা আরো জানান, দুর্নীতির টাকায় মিরপুর ডিওএইচএস, নিকেতন, উত্তরা ও পূর্বাচলে স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও আত্মীয়দের নামে ১০টি প্লট কিনেছেন আনোয়ার আলী। দুর্নীতির টাকা বৈধ করতে দেশের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে ডেইরী ফার্ম, পোল্ট্রি ফার্ম, রিয়েল এস্টেট ও কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবসা করছেন। নিজ এলাকা ও শ্বশুরবাড়িতে শত শত বিঘা জমি কিনেছেন অল্প সময়ের মধ্যে। ঢাকার ধানমন্ডিতে তার রয়েছে ৫টি ফ্লাট।
ঠিকাদাররা অভিযোগ করেন, মাতুয়াইল হাসপাতাল, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন কাজে রিভাইজ করিয়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আনোয়ার আলী। অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কৌশল হিসেবে মন্ত্রী, মন্ত্রীর ছেলে, মন্ত্রীর লোকজন, প্রধান প্রকৌশলী ও সেনাবাহিনীর কয়েকজন মেজন জেনারেলের নাম ভাঙিয়েছেন তিনি।
এদিকে সিলেটেও আনোয়ার আলীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী ববারব অভিযোগ এসেছে।
অভিযোগে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলা সদরে আইএইচটি নির্মাণ কাজে নকশা বদলে প্রিকাস্ট পাইল ২৬৫টির স্থলে ২৩৬টি পাইল বসানো হয়েছে। পাইলের দৈর্ঘ্যও ৫ থেকে ১০ ফুট কম করা হয়েছে। বীম, কলাম, ছাদের ঢালাই কম ও রডের পরিমাণও কম দেয়া হয়েছে। কম কাজ করে ঠিকাদারদের সাথে সরকারি অর্থ ভাগাভাগি করেছেন আনোয়ার আলী।
হবিগঞ্জের লাখাই ৩১-৫০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ কাজে ফাউন্ডেশনের নকশায় ৫০ ফিটের ১৩৪টি প্রিকাস্ট পাইল থাকলেও বাস্তবে ৮০টি পাইল কম করে ঠিকাদারের সাথে সরকারি অর্থ লুটপাট করেছেন আনোয়ার আলী। তিনি ছাদ, বীম, কলামের ঢালাই কম এবং রডের পরিমাণও কম দিয়েছেন। সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ৫০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ কাজে ফাউন্ডেশনের নকশায় ২২৮টি প্রিকাস্ট পাইলের জায়গায় ১২০টি পাইল কম করেছেন। প্রতিটি পাইলের দৈর্ঘ্য ৫ থেকে ১০ ফুট কম করে বসানো হয়েছে। ছাদ, বীম, কলামের ঢালাই কম এবং রডের পরিমাণও কম দিয়েছেন।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৩১ থেকে ৫০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ কাজে ১২৬টি পাইলের জায়গায় অর্ধেক বসানো হয়েছে। প্রতিটি পাইলের দৈর্ঘ্য ৬১ ফুটের জায়গায় ৫/১০ ফুট কম বসানো হয়েছে। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার হাসপাতাল নির্মাণকাজে র্যাপট ফাউন্ডেশনের ঢালাই কম দেয়া হয়েছে। ৩২ খেকে ৪৫ টন রড কম দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন আনোয়ার আলী।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি প্রতিউত্তর করেননি।