লাকসাম হাউজিং এস্টেট বাসিন্দারা নিরাপত্তা ঝুঁকিতে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২৩ জানুয়ারী,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৩৬ এএম, ১৩ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বানিজ্যিক নগরীখ্যাত লাকসাম পৌরশহরের প্রানকেন্দ্রে গড়ে উঠা হাউজিং এষ্টেট এলাকাটি জবর দখলে বর্তমানে বানিজ্যিক নগরীতে রূপ নেয়ায় দু’শতাধিক প্লট গ্রহীতা নানাহ দূর্ভোগে পড়ে মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে দিনযাপন করছে। অথচ এ আবাসিক এলাকার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নীরব দর্শকের ভূমিকায় প্লট গ্রহীতাদের দূভোর্গ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মনে হচ্ছে রক্ষক আর ভক্ষক এখন একাকার। অতীত ঐতিহ্য নিয়ে লাকসাম পৌরশহরের প্রানকেন্দ্র বাইপাস এলাকায় গড়ে উঠা বর্তমানে অরক্ষিত হাউজিং এষ্টেট বাসিন্দারা এখন মারাত্মক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে মারত্মক আতংকে রয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সুত্রের মাধ্যমে জানা যায়, লাকসামকে মডেল টাউন বানাতে ১৯৮৭/৮৮ অর্থ বছরে তৎকালীন সরকার পৌর শহরের প্রানকেন্দ্রে ১০.২০ একর খাস জমি ও জলাশয় অধিগ্রহনের মাধ্যমে টেন্ডার দিয়ে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাট করলেও এখানে রয়েছে নানাহ বির্তক। যার স্মারক নং- ০৪/১-(৫) তারিখ ০২/০১/১৯৮৮। উক্ত প্রকল্পটি শূরু থেকে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনিয়ম, দায়িত্বহীনতা ও পকেট বানিজ্যের কারনে শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখলেও এখন চলছে নানাহ ধরনের অপকর্ম যার কোন ইয়ত্তা নেই। ১৯৯১ সালে তৎকালীণ উপজেলা প্রশাসন প্লট ভিত্তিক পেশাওয়ারী তালিকা চূড়ান্ত করতে আশ্রয় নিয়েছে পকেট বানিজ্যের।
উপজেলা প্রশাসনের তালিকা সূত্রে জানা যায়, উক্ত এলাকায় ৮টি ব্লকে ৭০টি আবাসিক প্লট ও ১৩টি বানিজ্যিক প্লট, মসজিদ, ঈদগাহ, কমিউনিটি সেন্টার ও হাউজিং স্কুলের প্লট রয়েছে। এর মধ্যে প্লট গ্রহীতারা কোন সরকারী বিধি-বিধান না মেনে ২৩টি আবাসিক প্লট ও ৬টি বানিজ্যিক প্লট ছাড়াও একাধিক প্লট গোপনে অন্যত্র বিক্রি করে দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখনো টনক নড়েনি। সরকারী বিধান মতে চলমান জমির মূল্য হিসাবে হস্তান্তর ফি, ব্যাংকসহ অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানে ঋন নিতে প্রত্যায়ন ফি এবং বহুতল ভবন নির্মানে ছাড়পত্র ফি সহ অন্যান্য খাতে সরকারী কোষাগারে নির্ধারিত ফি জমা দেয়ার কথা থাকলেও তা অনেকটাই রহস্যজনক কারনে তা আজ অনুপস্থিত।
এ দিকে দৌলতগঞ্জ বাজারের প্রবেশ পথ বাইপাস মোড় থেকে সড়ক ঘেষে ছিল একটি সরকারী খাল, আজ তার ঐতিহ্য অনুপস্থিত। এর উপর গড়ে উঠেছে ব্যাক্তিমালিকানায় হরেক রকম পন্যের দোকান। অথচ হাউজিং এষ্টেট রক্ষনাবেক্ষন এবং স্থানীয় প্রশাসনের তদারককারী সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক দপ্তর নীরব দর্শকের ভূমিকায় এলাকার জনমনে নানা কৌতুহলের সৃষ্টি করে চলেছে।
উপজেলা প্রশাসনের অপর একটি সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালে সরকার পরিবর্তনের পর আবাসিক প্লট গ্রহীতাদের দাবীর মুখে তৎকালীন উপজেলা প্রশাসনের আন্তরিকতায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন টেনে তাৎক্ষনিক সংযোগ প্রদান করলেও দীর্ঘদিন ধরে আবাসিকের পরিবর্তে এখন বানিজ্যিক ভাবে তা ব্যবহার হচ্ছে। যা সরকার কিংবা আবাসিক আইনের পরিপন্থি। অথচ সরকারের এ দুটো বিভাগ বছরে প্রচুর রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত। এ ব্যাপারে যেন কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময় ওই আবাসিক এলাকায় জবর দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম রোধে শুধু মাত্র কাগজপত্র চালাচালির তৎপরতা চালালেও তা অনেকটা নিষ্ফল কিন্তু থামছে না কারোই অপকর্ম। তবে তারা মানতে নারাজ প্রচলিত আইন-কানুন। যে যার মত করে চালাচ্ছে অবৈধ কর্মকান্ড।
ভুক্তভোগী প্লট গ্রহীতাদের একাধিক সূত্র জানায়, টাকা খরচ করে প্লট নিয়েছি। সড়ক পথে খানাখন্দে ভরা, জলাবদ্ধতা, ময়লা-আবর্জনার স্তুপ, ড্রেন ও আবাসিক পরিবেশ নেই। তার উপর বখাটে-মাস্তানদের উৎপাত, দিন-রাতে মাদকে সয়লাব, ভ্রাম্যমান মক্ষিরানীদের আনা-গোনাসহ বিভিন্ন অপরাধী কর্মকান্ডে বর্তমানে আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া আবাসিক এলাকার মাঝখান দিয়ে লাকসাম-নোয়াখালী বাইপাস সড়ক অতিক্রম করায় দু’পাশে সরকারি জমি দখল করে বহু দোকানপাট গড়ে উঠায় এবং যানবাহনের শব্দ দূষন, যানজট এলাকার নিরাপত্তা ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কারন ওইসব অনেক আবাসিক-বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চলছে মাদক বেচা-কেনাসহ নানা ধরনের অপকর্ম।বহুবার থানা পুলিশসহ উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও কোন সন্তোষজনক সুফল পাওয়া যায়নি।
আবাসিক এলাকায় অনেক প্লট খালি থাকায় কচুরিপানা, ময়লা-আবর্জনার স্তুপ, বন -জঙ্গলসহ জলাবদ্ধতায় বর্জ্য দূষনীয় পরিবেশে অবর্ননীয় দূভোর্গ পোহাতে হচ্ছে তাদের। বিভিন্ন প্লটের সামনে ও সড়কের ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে হরেক রকম পন্যের দোকান এবং চলছে যানবাহন। এলাকায় প্রতিনিয়ত চুরি-ছিনতাই, মাদকসহ অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত লোকজনের অপ-তৎপরতায় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আবাসিক প্লট বাসিন্দারা। তবে পৌরশহরকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে পৌরপরিষদ কয়েক কোটি টাকা বরাদ্দে হাউজিং এষ্টেট বাসিন্দাদের নাগরিক সুবিধা বাড়াতে অবকাঠামো গত নানান প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তবে নাগরিকদের নিরাপত্তা বিষয়টি এখনও পর্দার অন্তরালে।
এ ব্যাপারে আবাসিক এলাকার প্লট ব্যবহারকারীদের সংগঠনের একাধিক সদস্য জানায়, উক্ত আবাসিক এলাকায় নানাহ সমস্যা দীর্ঘদিনের। চলমান অনেক সমস্যা নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে কথাবার্তা চলছে। আশা করছি আগামী কিছুদিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। নানাহ অনিয়ম ও অভিযোগ সম্পর্কে তারা মুখ না খুললেও অস্বীকার করেনি তবে ওইসব অভিযোগ সাবেক প্রশাসন ও প্লট গ্রহীতা সংগঠন নেতাদের দিকে তীর ছুড়ে দেন।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের জনৈক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে, তিনি এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ। তবে বিভিন্ন সমস্যা ও অভিযোগকে কেন্দ্র করে আবাসিক এলাকার প্লট গ্রহীতাদের দাপ্তরিক নোটিশ প্রদানসহ নানাহ উদ্যেগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান।